সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে

প্রকাশিত: ৮:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৪

সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে

সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে

 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

 

সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধ, নদী, কৃষি ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা বলেছেন, সুনামগঞ্জ জেলায় মোট ছোট বড় ৯৫টি হাওর আছে। হাওর রক্ষার জন্য ১৭০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এছাড়া রয়েছে শতাধিক চলমান প্রকল্প। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়না। ফলে আগাম বন্যায় ফসলহানীর শঙ্কা থাকে। হাওর সংরক্ষণ না হওয়ায় ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে নানা প্রজাতির ধান। হাওরের মিঠা পানিতে সুস্বাদু মাছ এখন আগের মতো পাওয়া যায় না। সুনামগঞ্জকে বাঁচাতে সবার আগে হাওর রক্ষা করতে হবে। হাওরে বন্যা দেখা দিলে ফসল ঘরে তুলা যায়না। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ২০১৭ সালের বন্যার রিপোর্টে বিশ্ব ব্যাংক বড় সমস্যা হিসাবে সুনামগঞ্জের হাওরকে চিহ্নিত করেছেন। হাওরের বেঁড়ীবাধ নির্মাণে মাটি সংকট দেখা দিয়েছে। যেখান থেকে মাটি তুলা হচ্ছে, সেখানে ধান, খড়, শুকানো যাচ্ছে না। মাটি সংকটে ব্যহত হচ্ছে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ।

বক্তারা আরো বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে রামসা যেদিন থেকে ঢুকেছে সেদিন থেকে মরে গেছে। গাছ, পাখি নিধন হচ্ছে নিয়মিত। হাওরের বৈচিত্র্য হিজল কেটে ফেলা হয়। ফোন করেও পাওয়া যায়না সমাধান। পাখি ধরে বস্তায় ভরে সিলেট নেওয়া হয়। দখল দূষণে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। হাওরের বাঁধের পাশে গাছ লাগানো হয়না, ফলে ঢেউয়ে ভেঙে যায় বাঁধ। হাওরের উপর আমাদের অধিকার রয়েছে। হাওর বাঁচাতে আমাদের অধিকার সম্পর্কে আরো সোচ্চার হতে হবে।

সোমাবার সকাল থেকে শহরের সার্কিট হাউজের মিলনায়তনে হাওরের বাঁধ, নদী, কৃষি ও পরিবেশ সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও এল আর ডি’র যৌথ আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।

আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, দেশের মধ্যে ৭ টি জেলা হাওর বিস্মৃত, তন্মধ্যে সুনামগঞ্জে রয়েছে বেশি হাওর। হাওর বেষ্টিত এই অঞ্চলে হাওর মন্ত্রনালয় গঠনের দাবি তুলেন। পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে রাত্রী যাপন করেন। এতে করে বর্জ্য ত্যাগের ফলে মিটাপানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছ মিলছেনা আগের মতো। বিলীন হয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। হাওরে রাত্রিযাপন না করার জোরালো দাবি তুলেন বক্তারা।

পি আইসি প্রকল্প নিয়ে তারা বলেন, যেখানে বাঁধের প্রয়োজনীয়তা নেই সেখানেও বাঁধ নির্মান করা হচ্ছে। এবং অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ দিয়ে লুটের আয়োজন করা হচ্ছে। এখনো ৯০ ভাগ বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। ফলে ২০১৭ সালের মত আগাম বন্যা হয়ে গেলে ভয়াবহ ফসলহানীর আশঙ্কা রয়েছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, নদ নদী থেকে পরিকল্পিত ভাবে বালুপাথর উত্তলন করতে হবে। প্রয়োজনে ২ বছরে ইজারা বন্ধ করে দিতে হবে।

আলোচনা সভায় বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঞ্চালনায় ও এলআরডি’র নির্বাহি পরিচালক শামসুল হুদার সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৌলাই ও যাদুকাটা টাঙ্গুয়া সুনামগঞ্জ হাওরের অন্যতম নদী। মেঘালয় অঞ্চল থেকে পানির প্রবাহ এসে নদীগুলো ভরে যায় যা হাওর অঞ্চলে পানির জলাধার তৈরী তৈরী হয়। নদ নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে, হুমকিতে পড়বে জনজীবন। টাংগুয়ার হাওরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন পাখি দেখা মিলে। এ পাখির অস্তিত্ব প্রমান করে এখানে পাখির খাদ্য ও বিচরণ ব্যবস্হা আছে। হাওর রক্ষায় প্রতিবছর বাঁধ নির্মান করা হয়। বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটা হয়। ফলে বন্যা হলে বাঁধ ভেংগে যায়। নিয়ম হলো বাঁধের কাছে নলখাগড়ার মতো গাছ লাগানো। তবেই হাওর সুরক্ষা পাবে। দেশি জাতের চাল যেমন টেপি রাতা অদৃশ্য হয়ে গেছে। এসব ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলে প্রবন্ধে উপস্হাপন করেন তিনি।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাবো প্রশাসনকে এটা উত্তর দিতে হবে। প্রশাসন যখন জলাশয়গুলো লীজ দেন কাগজে কলমে অনেক নিয়মনীতি লিখা থাকে। শুকিয়ে বিল মাছ ধরার কারণে লীজ বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও কেন বাতিল করা হয়না। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এটা থামাতে হবে এখনি। এবং মৎস্যজীবীরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে ফেলছে। কারন, লীজ পায় অপেশাদার লোকে। তাই এসব রক্ষার জোর দাবি তুলেন তিনি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আবু সাঈদ, মৌলভিবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ মহিবুল ইসলাম, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল মাহমুদ, বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, মৎস্য সম্পদ অফিসার সামছুল করিম, কৃষি প্রশিক্ষক মোস্তফা আল আজাদ, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জেলা সাধারণ সম্পাদক, বিজেন সেন রায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি শমসের আলী প্রমুখ।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
18192021222324
25262728293031
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ