সিলেট ১২ই এপ্রিল, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে চৈত্র, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
মাহমুদ আহমদ
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা এ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করছেন, হে যারা ঈমান এনেছ!
তোমরাও তার প্রতি দরূদ পাঠ কর এবং তার জন্য বেশি বেশি করে শান্তি কামনা কর’ (সুরা আল আহযাব, আয়াত: ৫৬)।
আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত দরূদ শরীফ পাঠ করা। ইসলাম যে আসলেই শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম এবং মহানবী (সা.) যে শান্তির দূত তা পাশ্চাত্য ও বিধর্মীদের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
বর্তমান যেহেতু মিডিয়ার যুগ তাই মিডিয়াতে ব্যাপকহারে ইসলাম ও মহানবীর (সা.) প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
বিশ্ব নবীকে (সা.) কেবল মক্কা শহর বা সেই দেশ বা কেবল সেই যুগের লোকদের জন্যই আবির্ভূত করেন নি।
তিনি (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত সারা দুনিয়ার মানুষ ও জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। মহানবীর (সা.) অতুলনীয় জীবনাদর্শ ছিল কতই না উত্তম।
মহানবীর (সা.) ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অনুপম একটি দৃষ্টান্ত: হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি মহানবীর (সা.) সঙ্গে ছিলাম আর তিনি মোটা পাড়ের চাদর পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।
একজন বেদুঈন এসে সেই চাদর ধরে এত জোরে হেঁচকা টান দেয় যে, যার কারণে মহানবীর (সা.) গলায় চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে যায়।
এরপর সে বলে, হে মুহাম্মদ (সা.)! আল্লাহ প্রদত্ত এই সম্পদ দিয়ে আমার এই দু’টি উট বোঝাই করে দিন, কেননা আপনি আমাকে আপনার নিজস্ব সম্পদ থেকেও কিছু দিচ্ছেন না আর আপনার পৈত্রিক সম্পদ থেকেও দিচ্ছেন না।
একথা শুনে প্রথমে মহানবী (সা.) নীরব থাকেন এরপর বলেন, ‘আল মালু মালুল্লাহি ওয়া আনা আবদুহু’ অর্থাৎ সমস্ত সম্পদ আল্লাহরই আর আমি তার এক বান্দা মাত্র।
এরপর তিনি (সা.) বলেন, আমাকে যে কষ্ট দিয়েছ তোমার কাছ থেকে এর প্রতিশোধ নেয়া হবে।
তখন এই বেদুঈন বলল, না! মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কেন প্রতিশোধ নেয়া হবে না? সে বলল, কেননা আপনি মন্দকে মন্দ দিয়ে প্রতিহত করেন না। একথা শুনে হুযূর (সা.) হেসে ফেলেন।
এরপর মহানবী (সা.) সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন, এই ব্যক্তির একটি উটে জব আর অপরটিতে খেজুর বোঝাই করে দাও’ (আল শিফাউল কাযী আয়ায, প্রথম খণ্ড)।
আমাদের চিন্তা করার বিষয়, কত অতুলনীয় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্তই মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
এই উত্তম আদর্শ তিনি শুধু মুসলমানদের সাথেই করতেন না বরং ইসলাম বিরোধী শত্রুদের প্রতিও প্রদর্শন করেছেন।
মহানবীর (সা.) এই উত্তম আদর্শের ফলেই ইসলামের পতাকা তোলে সবাই একত্রিত হয়েছিলেন।
আর এই জন্যই আল্লাহতায়ালা তাকে বলেছেন, ‘রহমতুল্লীল আলামীন’ অর্থাৎ সারা বিশ্বের জন্য তিনি হলেন রহমত স্বরূপ।
জনদরদী এই এই বিশ্বনবী (সা.) মানুষকে সকল প্রকার পঙ্কিলতা, অনিয়ম, অনাচার, পাপাচার ও অন্ধকারের বেড়াজাল হতে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
মহানবীর সংগ্রাম ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার, তিনি সংগ্রাম করেছেন অশান্ত বিশ্বকে শান্ত করার, তিনি রাজ্য দখলের জন্য সংগ্রাম করেননি। সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা না পর্যন্ত তিনি ক্ষান্ত হননি।
নিজে বহু কষ্ট করেছেন, নানা বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন, জীবনের ওপরে বার বার হুমকী এসেছে তবুও তিনি পিছিয়ে যান নি।
একাধারে বিরামহীন চেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা তিনি জয়যুক্ত হয়েছেন। এভাবে সেকালের ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন।
তাই নিজেদের হৃদয়ের দুর্বলতা দূর করতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করি।
কেননা মহানবীর (সা.) পূর্ণ অনুসরণ, অনুকরণ ছাড়া কোনভাবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ সম্ভব নয়।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা, শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা এবং তার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
সুত্র : যুগান্তর
সম্পাদক ও প্রকাশক : এড. আফছর আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি