অল কমিউনিটি ক্লাবে সেদিন পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১

অল কমিউনিটি ক্লাবে সেদিন পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল

অনলাইন ডেস্ক :: ঢাকা বোট ক্লাবে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে এবার গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ৭ জুন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই নায়িকা ও তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ওই ক্লাবে গিয়ে গ্লাস ভাঙচুর করেছেন বলে অল কমিউনিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কেএম আলমগীর ইকবাল দাবি করেন। গণমাধ্যমে বুধবার সন্ধ্যায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। তবে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরীমনি।

ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কেএম আলমগীর ইকবাল বলেন, পরীমনি সেদিন ক্লাবে ভাঙচুর করেন। পরীমনির সঙ্গী হাফপ্যান্ট পড়া ছিলেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানতে চাওয়ায় পরীমনি ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেন।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ক্লাবের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কোনো ব্যক্তি যদি ক্লাবে আসেন তাকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। কিন্তু পরীমনির সঙ্গে আসা ভদ্রলোক হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরে এসেছেন। তখন ক্লাব থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন আমাদের ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক ও ক্লাবের এক ম্যানেজার। উনারা সেটা দেখে বলেছেন যে, আপনিতো ক্লাব রুলস ভায়োলেট করেছেন। আপনিতো হাফপ্যান্ট পরে এখানে আসতে পারেন না। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তাদের আচার-আচরণ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় উনারা (ডিরেক্টর ও ম্যানেজার) বলেছেন, রাত অনেক হয়ে গেছে আপনারা চলে যান। কিন্তু তারা চলে যাচ্ছিল না বিধায় আমাদের দুই পরিচালকই ক্লাব থেকে চলে যান।

পরে ঘটনার বর্ণনায় ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, তারপর যেই সদস্যের মাধ্যমে উনারা এসেছিলেন উনিও তাদের চলে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু উনারা যাচ্ছিলেন না বিধায় ওই সদস্যও চলে যান। এরপর উনারা (পরীমনি ও সঙ্গীরা) অকস্মাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান, চেঁচামেচি শুরু করেন এবং গ্লাস, স্ট্রে ছুড়ে মারতে থাকেন। তখন আর কেউ ছিলেনও না ক্লাবে। দুজন ওয়েটার ছিলেন আর এ তিন-চারজন মানুষ ছিলেন।

একপর্যায়ে ক্লাবের কর্মীরা ট্রিপল নাইনে কল করেন। পুলিশ আসার পর তারা দেখতে পান, উনি ওগুলো ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ তাদের জিজ্ঞেস করে আপনারা কেন এসেছেন, কেন আমাদের কল করেছেন? তখন তারা বলেন, আমাদের হেনস্তা করা হয়েছে।

তখন পুলিশ সদস্যরা বলেন, কিছু তো দেখছি না। তারপর পুলিশ সদস্যরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে উপরে (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) জানতে চান আমরা কি করব। তখন উপর থেকে নির্দেশ আসে উনারা এমন করলে তাদের বের করে দিয়ে আপনারা চলে যান।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ওয়াকিটকির সেই আওয়াজ সবাই শুনতে পাচ্ছিলেন। এরপর তারা কিছুটা ঠাণ্ডা হন ও পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। এরপর আর কিছু ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা উনাদের কাউকে চিনতামও না জানতামও না। পরে আমরা শুনেছি উনাদের একজনের নাম পরীমনি।

ক্লাব প্রেসিডেন্ট কেএম আলমগীর ইকবাল আরও বলেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ যেই সদস্যের মাধ্যমে এসেছিল তাকে শোকজ করেছে। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা চলমান অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, যেই সদস্য ক্লাবের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটান তাকে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী তাকে শাস্তি প্রদান করি। তাকে শোকজ, শোকজ গৃহীত না হলে, ৩ মাস, ৬ মাস এবং সদস্যপদ স্থগিতও করা হয়।

তবে পরীমনি এটিকে ‘ফালতু অভিযোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বুধবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, আমার সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটা আমি জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনারা কী করেছেন? আমি যদি কোনো প্রবলেম করে থাকি বা অপরাধ করে থাকি তাহলে তারা কেন এতদিন চুপ করে ছিল। এতদিন পর আমি যখন অভিযোগ করলাম, বিষয়টি সবার সামনে আনলাম, এখন কেন তারা আমার বিরুদ্ধে লাগছে এতদিন পর?

এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। নায়িকা বলেন, আমার এতদিক থেকে এত চাপ, সত্যিই এবার ক্লান্ত। আমি চাচ্ছিলাম যে তারা গ্রেফতার হয়েছে, সুবিচার হবে।

‘এখন আমার পক্ষে কে লড়বে, কে লড়বে না- এসব নিয়ে এখন আমি ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে উল্টো ব্লেম করা হচ্ছে নানা দিক থেকে। যেটা একেবারেই ভিত্তিহীন। একরকম আমার ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

ওই রাতে ক্লাবে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, হ্যাঁ গিয়েছিলাম। সেটা সিসিটিভির ফুটেজে আপনারা দেখেছেন। আমি যদি অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটিয়ে থাকি তাহলে আটদিন পর কেন আসলো। তারা তো আমার মতো ভিকটিম হয়নি। তাদের কোনো বাধা ছিল না, পরের দিন বা সঙ্গে সঙ্গে কমপ্লেইন করার। এটা খুবই স্পষ্ট, সবাই এটা বুঝতে পারছে।

এ ব্যাপারে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৭ জুন গভীর রাতে ৯৯৯ এ কল পেয়ে গুলশান থানা পুলিশের একটি টিম অল কমিউনিটি ক্লাবে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে পরীমনি ক্লাবে গ্লাস ভাংচুর করেছেন। পরে আর এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, বোট ক্লাবের ঘটনার দুই দিন আগে ৭ জুন গভীর রাতে চিত্রনায়িকা পরীমনি গুলশানের ১৩৭ নম্বর রোডে অল কমিউনিটি ক্লাব লিমিটেডে ভাংচুর করেন। এ সময় ওই ক্লাবে থাকা বেশ কয়েকজন বার কর্মীকে মারধরও করেন বলে অভিযোগ এই নায়িকার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগে উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফোন পেয়ে পুলিশ অল কমিউনিটি ক্লাবে গিয়েছিল। পুলিশ সেখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে পুলিশ থানায় এসে নিয়ম অনুযায়ী ঘটনার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।

গত ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঘটনার চার দিন পর রোববার রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এবং রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনা প্রকাশ করেন নায়িকা পরীমনি।

সোমবার সকালে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি। ওই দিনই প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মাদক ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ