অসাম্প্রদায়িকতা ও ইসলাম

প্রকাশিত: ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২২

অসাম্প্রদায়িকতা ও ইসলাম

সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন :: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক, যিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রতিপালক, তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক মহান আল্লাহ। আর তিনি তাঁর জগৎ সমূহের জন্য একজনকে নেতা নির্বাচন করেছেন, যিনি সমস্ত জগতের জন্য রহমত, তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক অগ্রদূত, সমস্ত সৃষ্টির জন্য যিনি রহমত, ওয়ামা আরছালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন, আল্লাহ বলেন, হে হাবীব আমি আপনাকে জগৎ সমূহের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। সকল সৃষ্টির জন্য যিনি রহমত স্বরূপ তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক নবী। জন্মগতভাবে কেউ হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ নয়। ফিতরাতগতভাবে মানুষ যে ধর্মে জন্মগ্রহণ করে তা হচ্ছে দীনে কায়্যিম। সেহেতু মানুষের ফিতরাত ও আকৃতিতে কোনো বিভেদ নেই। তাই মহান আল্লাহ বলেন : তুমি নিজের চেহারা একনিষ্ঠভাবে ধর্মে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি বা ফিতরাত যেমন, মানব ফিতরাত বা প্রকৃতিও তেমন। আল্লাহ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করেন না। এটাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম (দীনে কায়্যিম)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না, (আল কোরআন ৩০:৩০)। যারা দীনে কায়্যিম পরিবর্তন করতে চায় এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন : তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য দীন তালাশ করছে? আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁর কাছে সমর্পিত এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে (সূত্র : আল কোরআন ৩:৮৩)। স্রষ্টার নিকট সমর্পিত থাকাই হচ্ছে দীন বা ধর্ম। আর সকল সৃষ্টিই আল্লাহর নিকট সমর্পিত। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন : যে ব্যক্তির চেহারা আল্লাহর নিকট সমর্পিত, সে সৎকর্ম পরায়ণ মুহছিন (আল কোরআন ৩১:২২)। সকল মানুষের চেহারা বা আকৃতি এক এবং ফিতরাত বা প্রকৃতিও এক। তাই ফিতরাতের দিক থেকে এবং আকৃতির দিক থেকে সকল মানুষের চেহারা স্রষ্টার নিকট সমর্পিত। আল্লাহ নিজে স্বয়ং সম্পূর্ণ তাই তিনি তাঁর ক্ষমতায় ও ইচ্ছায় সকল সৃষ্টিকে ফিতরাতগত এবাদতে মশগুল রেখেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন : আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় (কোরআন ১৩:১৫)।

প্রত্যেক জাতির এবাদতের পদ্ধতি আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন এবং সকল মানুষ তা পালন করে : আল্লাহতায়ালা বলেন : প্রত্যেক জাতির (বিভিন্ন ধর্মের মানুষের) জন্য আমি (আল্লাহ) নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদতের পদ্ধতি, (না-ছিকুহু) যা তারা পালন করে (আল-কোরআন ২২:৬৭-৬৮)। সব ধর্মের স্বীকৃতি সুনিশ্চিত করেছে আল কোরআন। অন্য ধর্ম পালনে কেউ কাউকে বাধা দেবে না, কেউ কোনোরূপ সীমালঙ্ঘন করবে না। অন্য ধর্ম নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করবে না এই মর্মেও কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে, আর তাদের গালি দিও না, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত করে তাহলে তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে। এরূপেই আমি প্রত্যেক জাতির (বিভিন্ন ধর্মের) কাছে তাদের কাজকর্ম (আমল) সুশোভিত করে রেখেছি। অবশেষে তাদের রবের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের জানিয়ে দেবেন যা তারা করত (আল-কোরআন ৬:১০৮)। আমাদের জন্য আমাদের আমল বা কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমল বা কর্ম : এ বিষয়ে ১৭টি আয়াত রয়েছে যা হতে পাঁচটি আয়াত উপস্থাপন করছি। আল্লাহতায়ালা বলেন : (হে নবী আপনি বলুন 🙂 আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। আর আমাদের জন্য আমাদের আমল এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমল। আমরা তাঁর জন্য নিবেদিত (আল-কোরআন ২:১৩৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন : (হে নবী) আপনি বলুন : আমার জন্য আমার কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমরা দায়মুক্ত সে বিষয় থেকে যা আমি করি এবং আমিও দায়মুক্ত তোমরা যা কর সে বিষয় থেকে (আল-কোরআন ১০:৪১)। (হে নবী) বলুন, আমাদের অপরাধের জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু কর, সে সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসিত হব না (আল-কোরআন ৩৪:২৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন : আল্লাহ আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো ঝসড়া-বিবাদ নেই। (আল-কোরআন ৪২:১৫)। এই আয়াতে বলা হয়েছে আমাদের সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোনো ঝসড়া-বিবাদ নেই। সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা ফিতনা থেকে তৈরি। মহান আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীকে সাবধান করে বলেন : ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। (আল-কোরআন ২:২৫৬)। রসুলগণ তাঁর সম্প্রদায়ের কর্মের জন্য দায়ী নন : উক্ত বিষয়ে ১৬টি আয়াত রয়েছে আমরা চারটি আয়াত আলোচনা করব। আল্লাহতায়ালা বলেন : আপনি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র, আপনি তাদের দায়গ্রস্থ কর্ম নিয়ন্ত্রক নন (আল-কোরআন ৮৮:২১-২২)। আরও বলেন : তাদের সৎপথে আনার দায় আপনার নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন (আল-কোরআন ২: ২৭২)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন : আপনার ওপর তাদের কোনো কর্মেরই জবাবদিহির দায়িত্ব নেই এবং তাদের ওপরও আপনার কোনো কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব নেই, (সূত্র আল-কোরআন ৬:৫২)। আল্লাহতায়ালা বলেন : আপনার দায়িত্ব তো পৌঁছে দেওয়া এবং আমার দায়িত্ব হিসাব নেওয়া। (আল-কোরআন ১৩:৪০)। আল্লাহ মানুষকে একই জাতিসত্তায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু একদল মানুষ মতভেদ করতেই থাকবে : আর তোমার পালনকর্তা যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই সব মানুষকে একই মতাবলম্বী বা জাতিসত্তায় পরিণত করতে পারতেন আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। তোমার পালনকর্তা যাদের ওপর রহমত করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চির দিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদের সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর কথাই পূর্ণ হলো যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে পূর্ণ করব (আল-কোরআন ১১:১৮-১১৯)। তাই আল্লাহতায়ালা বলেন : মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক কলহপ্রিয় (আল-কোরআন ১৮:৫৪)। তাই কলহের কারণে মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে।

লেখক : চেয়ারম্যান, তাসাউফ ফাউন্ডেশন

সূত্র : বিডি-প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
15161718192021
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ