‘আমেরিকার নির্বাচন থেকে বিরোধী দলেরও শেখার আছে’

প্রকাশিত: ৮:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২০

‘আমেরিকার নির্বাচন থেকে বিরোধী দলেরও শেখার আছে’

অনলাইন ডেস্ক ::
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমেরিকার নির্বাচনে শুধু নির্বাচন কমিশন (ইসি) নয়, বিরোধী দলেরও শেখার অনেক কিছু আছে।

তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিবকে বলতে চাই- দেশের নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আওতায় থেকে কমিশন কাজ করছে। তারা নিজস্ব বিধিবিধান অনুসরণ করবে। অন্য দেশে কী হল, সেটি অনুসরণ করার কিছু নয়। দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের নিশ্চয়তা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআইউ) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি যে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হলেই দায় চাপায় সরকার, নির্বাচন কমিশনার আর নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর। আর জয়ী হলে বলে- সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আরও বেশি ভোটে জিততে পারত। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে তাদের যে দলগত ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে, তা থেকে বিএনপি অনেক দূরে অবস্থান করছে। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, যেখানে বিএনপি প্রস্তাবিত একজন সদস্যও রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলে বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন- ‘সরকার নাকি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারছে না’। আমরা বলতে চাই- শেখ হাসিনার অবস্থান জনগণের মনের মণিকোঠায়। এ দেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদের নাম শেখ হাসিনা। জনগণের মনের ভাষা ও চোখের ভাষা বুঝতে পারেন বলেই তিনি আজ এত জনপ্রিয়। দেশের জনগণের কোনো ইস্যুতে সবার আগে তিনি রেসপন্স করেন। তাই তো একজন শিশু তার কাছে চিঠি লিখতে পারে, জবাবও পায়। একজন প্রতিবন্ধী টেলিফোনে কথা বলতে পারে। একজন ভিক্ষুক জমানো টাকা নিয়ে তার কাছে হাজির হতে চায়। গৃহহীন অসহায় মানুষকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরে স্বস্তি পান। আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের রাজনীতি করে বলেই এমনটি সম্ভব। অন্যদিকে বিএনপি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারার তো দূরের কথা, নিজ দলের নেতাকর্মীদের মনের ভাষাই বুঝতে পারছে না।

গণমাধ্যম আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বলে একটি দল মিথ্যা অভিযোগ করে। সরকার নাকি ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না! প্রকৃতপক্ষে, এদেশে আওয়ামী লীগের মাঝেই পরমত সহিষ্ণুতা আছে। আর আছে বলেই বিএনপি অনবরত মিথ্যাচার করে যেতে পারছে। গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, কলাম ছাপা হচ্ছে। টকশোতে সমালোচনা হচ্ছে। কই সেজন্যতো সরকার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। বরং আমরা গঠনমূলক সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিতে চাই। গণমাধ্যম জাতির দর্পন। এখান থেকে ফিডব্যাক পাওয়া যায়। আমরা জানতে চাই- সোশ্যাল মিডিয়ায় অনবরত রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার কী ভিন্নমত? নাকি রাষ্ট্রকে দুর্বল করা, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করা? জানতে চাই, দিনরাত দেশ-বিদেশে বসে অবিরাম দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর গুজব ছড়ানো কী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা? নাকি প্রবাসে অবস্থানকারী লাখ লাখ বাংলাদেশির জীবন-জীবিকাকে নড়বড়ে করে তোলা।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহাকে কারা হত্যা করেছিল? হুমায়ুন কবির বালুর হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে গেছেন? শামসুর রহমান, দীপংকর চক্রবর্তীসহ অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হয়নি বরং বিচারের নামে হত্যাকারীদের রক্ষা করা হয়েছে। বিএনপির মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা ভূতের মুখে রাম রাম ধ্বনির মতোই!

বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও চাপমুক্ত হয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি নানা ঘটনায় এ দেশের জনগণ দেখেছে, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় এসেছে এবং শাস্তি ভোগ করছে। সরকার হস্তক্ষেপ করলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। এ থেকে প্রমাণ হয় বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করছে। বিএনপি তার দলের পক্ষে রায় এলে বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানায়, আর বিপক্ষে গেলে বলে সরকার হস্তক্ষেপ করছে। এমন দ্বিচারিতা বিএনপির সবসময়ের রাজনৈতিক সঙ্গী।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কি দেশে দুর্নীতি হয়নি? তাদের কয়জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? একজনও দেখাতে পারবে না। তারা নিজেদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে একটা বড় মিছিল পর্যন্ত করতে পারেনি। তারা আন্দোলনেও ব্যর্থ। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা নালিশ আর প্রেস ব্রিফিংয়ের রাজনীতি শুরু করেছে।

তিনি বলেন, বিরোধী দল শক্তিশালী হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। আমাদের পারস্পরিক বিরোধী রাজনীতির কারণে বিদ্বেষের দেয়াল উঁচু হয়েছে। কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহমর্মিতা জানাতে খালেদা জিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা করা তো দূরের কথা বাসার গেট পর্যন্ত খোলেননি। সম্প্রীতি গড়তে তারা দেন না।

ডিআইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ