একাত্তরে সাংবাদিক মার্ক টালির সঙ্গে

প্রকাশিত: ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২১

একাত্তরে সাংবাদিক মার্ক টালির সঙ্গে

মাকিদ হায়দার

আমার মায়ের নির্দেশে আমি আর জিয়া ভাই গেলাম মাধবপুর গ্রামে। পাবনা শহর থেকে পশ্চিমে ৮-৯ মাইল দূরে। ভগ্নিপতি, আপা বিশ্বাস করতে পারেননি আমরা বেঁচে আছি। যেহেতু রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প থেকে মালিবাগের বাসাটির দূরত্ব বেশি দূরে ছিল না।

আমি আর জিয়া ভাই মাধবপুর থেকে দোহারপাড়ার দিকে ফিরে আসার সময় শহরের নতুন ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে আসতেই শুরু হলো আকাশ থেকে বিমান হামলা। আমরা দুই ভাই কোনোরকমে সাইকেল দুটি ফেলে দিয়ে একটি পানের দোকানের নিচে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর চোখের সামনেই দেখলাম একটি লোকের মাথায় শেল লাগায় লোকটি পাকা রাস্তায় হাতখানেক ওপর উঠেই লুটিয়ে পড়ল। মুহুর্তেই রাজপথ রক্তে ভেসে গেল। আমরাসহ অনেকেই প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে সন্ধ্যার বেশ কিছু পরে দোহারপাড়ায় ফিরে এলাম ঘুটঘুটে অন্ধকারে। ওই সময় পাবনা পলিটেকনিক স্কুলের দোতলা থেকে না-পাক আর্মিরা ছুড়ছিল শেল। তখন পাবনা জেলা প্রশাসক ছিলেন নূরুল কাদের খান সিএসপি, ’৭১-এর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহেই না-পাক আর্মিরা পাবনা শহরের টেলিফোন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল এবং তারা শহরের ভিতরে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে না-পাকদের সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন চরপাড়ার একজন। মুহুর্তের ভিতরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় টেলিফোন ভবনে না-পাকদের বিরুদ্ধে দেশি অস্ত্র এবং জনাকয়েকের একনলা-দোনলা বন্দুক দিয়ে শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। অনেক না-পাক নিহত হলেও অন্যরা মাধবপুর দিয়ে দাশুরিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় গোলাগুলি করায় আমার ভগ্নিপতির বোন টুনু আহত হয়েছিলেন। পলাতক না-পাকরা ঈশ্বরদীতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে ঢাকায় যোগাযোগ করছিল এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। পাবনার জেলা প্রশাসক, পাবনা শহরের পুব দিকের আরিপপুর গ্রামের কাশেম ফকির ড্রাইভারসহ ভারতে যাওয়ার আগে তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক পাকিস্তানের (বর্তমান সোনালী ব্যাংক) পাবনা শাখা থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা ছিল শত্রুমুক্ত। ১০ এপ্রিল রবিবার সকাল থেকেই আকাশে বাড়ছিল যুদ্ধবিমানের আনাগোনা। সমগ্র উত্তরবঙ্গ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে না-পাক আর্মিরা নিরাপদে নগরবাড়ী, পাবনা এবং উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছিল। ইতিমধ্যে যমুনা নদীতে তারা শেল/বোমা ফেলেছিল, খবরটি নিশ্চিত করলেন আকাশবাণীর সংবাদ পাঠিকা নীলিমা সেন। বেলা ২টা থেকে ৩টার ভিতরে না-পাকরা নগরবাড়ী আতাইকুলার আশপাশের গ্রামে গুলি চালিয়ে অনেক হত্যাসহ অগ্নিসংযোগ করতে করতে আমাদের দোহারপাড়ায় ওই একই কান্ড ঘটায়। চারদিকে আগুন দিয়ে খন্দকার গোলাম মুস্তফার টিনের বাড়িটি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে আমাদের কাচারিঘরের সামনে উজ্জ্বল শেখকে হত্যা করল। উজ্জ্বল শেখই দোহারপাড়ার প্রথম শহীদ এবং ওই ১০ এপ্রিল রবিবার আমাদের বাড়ির ধানের গোলায়, গুড়ের কোলাসহ আব্বার ঘরে আগুন দিল। ৯ এপ্রিল শনিবার খোকন এবং আমার ছোট চাচার ছেলে রতন বাড়ির দোতলার ছাদে পাকিস্তানি ফ্ল্যাগ লাগিয়েছিল। আমাদের বাড়ির পেছনে পুকুরের উত্তরপাড়ে যখন না-পাকরা এগিয়ে আসছিল তখন আমি আর আমার মা দৌড়ে পালিয়েছিলাম বাড়ির পশ্চিমে পায়খানার কোনায়। বিশাল আম আর খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম মা আর আমি, হাজীরহাটে বাড়ির পোড়া আখের গুড় দিয়ে আমি আর জিয়া ভাই আট আনা সেরে বিক্রি করে যে কয় টাকা পেয়েছিলাম তাই দিয়ে চাল, লবণ কিনে দিনকয়েক চলার পর যখন খাদ্যের অভাব দেখা দিল ঠিক তার এক দিন পর হরিতলায় দানেশ মন্ডল, সম্পর্কে মামা আমাদের খোঁজ নিতে এসে দেখলেন করুণ অবস্থা। দানেশ মন্ডল ছিলেন দোগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছিলেন বেশ বড় ব্যবসায়ী, ওই দিন জিয়া ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় আমাদের ছোট মায়ের পিতা চুন্নু ডাক্তারও এসে উপস্থিত। তিনিও এসেছিলেন আমাদের খবর নিতে। আমাদের অর্থনৈতিক সংকট দেখে বললেন, ‘কালাচাঁদপাড়ার মণি বসাকের রেশন শপটি ফেলে ভারতে চলে গেছে বসাক পরিবার। আমি আমাদের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন জায়েদীকে ধরে রেশন শপটি রোকনের নামে (অর্থাৎ আমার নামে) অ্যালট করিয়ে দিতে পারব।’ ক্যাপ্টেন জায়েদী ছিলেন পাবনার পৌর চেয়ারম্যান, যদিও জায়েদীর বাড়ি ছিল পাঞ্জাবে। তিনি ১৯৫২ সালে পাবনায় এসেছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এবং পাঞ্জাবে আগের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ফেলে রেখে পাবনা গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সখিনা বেগমকে জোর করেই বিয়ে করেছিলেন। সখিনার বাবা ছিলেন জামতলার উকিল আবদুল হাকিম। আর ডা. চুন্নু ছিলেন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, সেই সুবাদে ক্যাপ্টেন জায়েদীকে অনুরোধ করে মণি বসাকের রেশনের দোকানটি দিয়েছিলেন আমাকে। মে-র মাঝামাঝি আমি হলাম রেশন শপটির মালিক। জিয়া ভাই হলেন চাল, গম, চিনি মেপে দেওয়ার লোক। দানেশ মামা যে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন তাই দিয়ে শুরু হয়েছিল রেশন শপের ব্যবসা।
ইতিমধ্যে পাবনার নতুন জেলা প্রশাসক এলেন সম্ভবত নাজমুল হোসেন খান। তার সঙ্গে জিয়া ভাইয়ের পূর্বপরিচয় থাকার সুবাদে আমরা ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মালামাল বাকিতে পেলাম। তবে সে সময় পাবনার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার রুনুর বাবা। রুনু ছিলেন আমার বন্ধু। ওদের বাড়ি ঝিনাইদহে। রুনুর বাবাকে আমি খালুজান বলতাম এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়েছিল। ফলে ফুড গোডাউন থেকে গম, চাল, লবণ প্রতি সপ্তাহে আনতাম কালাচাঁদপাড়ার রেশন কার্ডধারীদের জন্য। ডিসি ফুড, খালুজান একদিন বললেন, পূর্ব পাকিস্তানে নতুন এক ধরনের তেল এনেছে সরকার, নাম ‘সয়াবিন’। প্রতি ব্যারেল ৭১০ টাকা। অনেকেই শোনেনি ওই তেলের নাম। খালুজান জানালেন প্রতি ব্যারেলে ৫ মণ করে থাকবে। নতুন তেল মানুষ খাবে কি না আল্লাহ জানেন। লবণ প্রতি সের ছিল ৫ আনা। চিনি ১ টাকা ১২ আনা, চাল প্রতি সের ১৪ আনা, গম প্রতি সের ৮ আনা।

এক ব্যারেল সয়াবিন তেল শালগাড়িয়ার ফুড গোডাউন থেকে তুলে বিক্রি করে দিলাম ৮০০ টাকায় এবং মাঝেমধ্যে চিনিও খোলা বাজারে বিক্রি করতাম। জুনের শেষ দিকে একটি চিঠি পেলাম একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে থেকে। নাম উল্লেখ করলাম না। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। আমি যেন দিনের বেলায় রেশন শপ চালাই আর রাতে যেন শহরের খবরাখবর রাখি। মুসলিম লীগের নেতা ক্যাপ্টেন জায়েদী এবং রাধানগরের নুরু খোন্দকারের নির্দেশে বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ সমর্থককে হত্যা করা হয়। একই সময়ে দিলালপুরে মাওলানা আবদুস সুবহান জামায়াত নেতা এবং নেজামে ইসলামের এক নেতা যিনি পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন, গভর্নর মালেকের শাসনকালে। বন্ধুর চিঠিতে উল্লেখ ছিল প্রতি সপ্তাহে যেন আমি কিছু অর্থ আমার সামর্থ্যরে ভিতরে দিই। আমি বন্ধুর কথা রেখেছিলাম। ঠিক দু-তিন দিন পরে মাধবপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভগ্নিপতি আবুল মনসুর চিঠি পাঠালেন। আমি যেন চাল, চিনি, লবণ এবং কিছু চাল ও কিংস্টক সিগারেট পাঠাই কয়েক কার্টন। যিনি চিঠিটি নিয়ে এসেছিলেন তার সঙ্গে ছিল একটি মহিষের গাড়ি। আমার সাধ্যানুসারে পাঠিয়েছিলাম মাধবপুরে গম, চাল, চিনি ও সিগারেট।

সন্ধ্যার পরই শুরু হতো গোলাগুলি, নুরপুরের আর্মি ক্যাম্প থেকে রাতে অপারেশন চালাত না-পাক আর্মির চীনপন্থি সহযোগী নকশালরা। সঙ্গে জামায়াতের লোকেরা রাজাকার। এরাই একদিন মধ্যরাতে শহরের দক্ষিণে সাধুপাড়া থেকে বলাকা সুইটমিটের মালিক কোবাদ আলী শেখকে হত্যা করল। তার দুই ছেলে শহীদ উল্লা এবং হাবীব উল্লা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপরাধে। একদিন বন্ধু রুনু এসে খবর দিল তার বাবা আমাকে দেখা করতে বলেছেন, খুবই জরুরি। আমি যেন তাদের বাড়িতে যাই সন্ধ্যার আগে। যথাসময়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম। খালুজান বললেন, ‘আজ জেলা প্রশাসকের দফতরে মিটিংয়ে জানতে পারলাম পাবনায় বিবিসির মার্ক টালি এবং সঙ্গে গার্ডিয়ান পত্রিকার আরেক সাংবাদিক আসবেন ঢাকা থেকে। ১২ জুলাইয়ের দিকে। মাকিদ তুমি যদি এ দুই সাংবাদিককে কোনোরকমে শহরের ভিতরে দেখতে পাও তবে অবশ্যই তারক নিকেতনের বাড়িতে নিয়ে আসবে।’ আমি সম্মতি দিলাম। যেহেতু তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। আমি অতি সাধারণ একজন রেশন ডিলার।

দিন কয়েক পরই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই বাণী সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উদ্দেশ্য যদি মার্ক টালিকে পাওয়া যায়। সেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ভিতরে হঠাৎ দেখলাম রিকশায় হুড তোলা থাকলেও ডান দিকে একটি সাদা ধবধবে হাতের কিছু অংশ। আমি অনুমানে দ্রুত সাইকেল চালিয়ে সেই রিকশাওয়ালাকে থামালাম নতুন ব্রিজের পুব প্রান্তে। জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কি মার্ক টালি? মার্ক টালি রিকশা থেকে মুখ বের করে সম্মতি জানালেন। তাকে বললাম মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আমি একজন ইনফরমার। আপনি যদি আমার সঙ্গে আসেন আমি আপনাকে দেখাতে পারি না-পাক আর্মিদের ধ্বংসলীলা এবং রিকশাওয়ালাকে বললাম, নিমতলা দিয়ে বড় বাজারের ভিতরে নিয়ে চল। তোমার রিকশাভাড়া নিয়ে যাবে, ভাড়া যা লাগে তার ডবল দেব আমি। রাত ৯টার দিকে পুরো শহর ফাঁকা থাকায় আমি মার্ক টালিকে এবং গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিককে বোঝাতে সক্ষম হলাম অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এবার আমার সঙ্গে সেই ডিসি ফুড কন্ট্রোলারের বাসায় রওনা হলেন তারা। ইতিমধ্যে উনারা দুজন অনেক ছবি তুললেন, আমরা পাবনা গার্লস হাইস্কুলের দক্ষিণের গলি নিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার সময় রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম- এ দুই সাহেবকে ধরলে কোথা থেকে? অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই খালুজানের বাসার পেছনের গোয়ালঘর দিয়ে মার্ক টালিসহ আমরা তিনজন সরাসরি খালুজানের দোতলায় উঠে গেলাম। খালুজান ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। তিনি দুই সাংবাদিককে পেয়ে আদরযত্ন করে বসালেন এবং একসময় খেতে দিয়ে বললেন পাবনা শহরের বাড়িঘর ও মানুষ হত্যার করুণ কাহিনি। যেহেতু খুবই ভালো ইংরেজি জানতেন। মার্কি টালি তার টেপরেকর্ডারে কথাগুলো টেপ করলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা কথোপকথন শেষ হওয়ার পর মার্ক টালি খালুজানকে বললেন, আপনার কথাগুলো লিখিতভাবে আমার কাছে হোটেল তৃপ্তি নিলয়ে পাঠিয়ে দেবেন ভোর ৬টার আগে। খালুজান বললেন, কাল সকালে পেয়ে যাবেন। পরদিন ভোর ৫টায় রুনু সাইকেল চালিয়ে আমার বাসস্থান মণি বসাকের কালাচাঁদপাড়ার বাড়িতে এলে ওর সাইকেলে আমরা দুজন চলে গেলাম তৃপ্তি নিলয়ে। তৃপ্তি নিলয় হোটেলের আধো ঘুমন্ত ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলাম দুই সাহেব কত নম্বর রুমে। ম্যানেজার ভেবেছিল আমি হোটেল মালিক সাইদ তালুকদারের ছেলে মুক্তা। দ্রুত দোতলায় উঠে দেখি মার্ক টালি লিখছেন। আমাদের হাত থেকে লেখা কাগজগুলো নিয়ে জানালেন এখনই চলে যাও। আমরা দ্রুত এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান গেট পেরোতেই দেখলাম কয়েক ট্রাক না-পাক তৃপ্তি নিলয়ের দিকে যাচ্ছে। হোটেল তৃপ্তি নিলয়ের মালিক সাইদ তালুকদারকে না-পাকরা হত্যা করেছিল আমিন উদ্দিন উকিলসহ আরও অনেকের সঙ্গে।

এদিকে গত রাতে কালচাঁদপাড়ায় ঢুকতেই রাত ১২টার পর মাইকিং হচ্ছিল- দুজন বিদেশি সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন। যদি কেউ সন্ধান দিতে পারেন। তার আগে রাত ১২টার আগেই দুই সাংবাদিক পৌঁছে গিয়েছিলেন হোটেলে। আর রিকশাচালককে দিলাম ২০ টাকা তার পরিশ্রমের জন্য। মার্ক টালিকে দেওয়া সব সংবাদ BBC থেকে প্রচারিত হয় দিনকয়েক পরে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে। স্যার মার্ক টালির সঙ্গে কয়েক বছর আগে দেখা হয়েছিল। তিনি যখন বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারে রাষ্ট্রপ্রদত্ত উপহার নিতে এসেছিলেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলেই গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টারে। অনুষ্ঠান শেষ হলো। নিজেই গিয়ে মার্ক টালিকে স্মরণ করিয়ে দিলাম ১৯৭১ সালের পাবনার ঘটনা। আমার ভিজিটিং কার্ড দেখে বললেন, আমি আনন্দিত তুমি বৃষ্টিভেজা রাতে ডিসি ফুডের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলে এখন আমার একে একে সব কথা মনে পড়ছে। স্টেজ থেকে নেমে এসে দেখি অভিনেত্রী শাবানা আজমি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। কনভেনশন সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখা হলো শিল্পী শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি আমাকে না চেনায় সুবিধা হলো। শাহাবুদ্দিনকে বললাম একটা সিগারেট দিতে হবে। শিল্পী একটু অবাক হয়ে যথারীতি সিগারেট লাইটার দিয়ে বললেন আপনাকে আমি তো ঠিকমতো চিনলাম না। পরিচয় পাওয়ার পর জানালেন দাউদ ভাই প্যারিসে এলে উনি আর আমার স্ত্রী আনা ইসলামের সঙ্গে শিল্পসাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন।

সেন্টার থেকে বেরিয়ে এলেন মার্ক টালি। তিনি আমাকে দেখে পুনরায় ধন্যবাদ দিলেন, ১৯৭১-এর কর্মকান্ডের জন্য। স্যার মার্ক টালি বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এখন অবসরে মনে হয় অতীত যদি কথা বলত, স্মৃতিময় সুখ-দুঃখগুলোকে আবার দেখতে পেতাম। দেখতে পেতাম সেই ১৯৭১ সালের দিনগুলোকে। হে অতীত কথা বল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিচিত্র প্রবন্ধে জানিয়েছেন, ‘যে নৌকা হালের অধীন নয়, সে কিছুতেই স্বাধীন বলে গর্ব করতে পারে না, কারণ সে শতসহস্র তরঙ্গের অধীনে।’ তবে আমরা এখন আর অধীন নই। জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্যই আমরা স্বাধীন।

লেখক : কবি।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
25262728293031
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ