সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২২
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা ১৩৪টা পরিবারের ৬৮২ জন মাত্র একদিন আগেও কোরবানি দেওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। এই গ্রামের মানুষজন পুরো সিলেট জেলার মধ্যে আর্থিকভাবে এমনিতেই অনেক পিছিয়ে আছে। তাঁর ওপর এবার বন্যায় পুরো গ্রাম প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু ঈদের দিন এই গ্রামের সবার মুখে হাসি ফুটেছে।
শনিবার সন্ধ্যার পর যখন এই গ্রামে কোরবানির জন্য তিনটা গরু নিয়ে আসা হয়, তখন রাতেই পুরো গ্রামের ছোট-বড় সবার মধ্যে ঈদের আনন্দ শুরু হয়। আর তা ঈদের দিন সকালে উৎসবে রূপ নেয়।
পুরো গ্রামের সবার জন্য এবার কোরবানির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার পান্থপথের আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদল।
রোববার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় আল কলম ইসলামিক সেন্টার পরিবারের সদস্য ও মাদলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী মাসুদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আশ্রয়ন প্রকল্প গ্রামের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এর পর গ্রামবাসীদের নিয়ে কোরবানি দেন। দুপুর ২টায় ১৩৪টা পরিবারের ৬৮২ জন সদস্যকে তিনটি গরুর মাংস এবং পোলাওর চাল, সয়াবিন তেল, সেমাই, দুধ, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লবণ, বিভিন্ন ধরনের মশলাসহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং, কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী, ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ব্যাংক কর্মকর্তা মু. আনোয়ার হোসেন রনি ও পার্থ তালুকদার, কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক কবির আহমদ, মাদল পরিবারের অন্যতম সদস্য মাহতাব মঈন ভূঁইয়া পূর্ণ প্রমুখ।
কোরবানির গরুর মাংস ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পেয়ে আনন্দে কান্নাজনিত কন্ঠে এই গ্রামের অধিবাসী কমলা বেগম বলেন, ‘আমাদের এই বিপদে ঈদের দিনে যারা খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহ তাঁদের মঙ্গল করুন। কোরবানির মাংস খাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ঈদের আগের রাতে মনে হলা, আল্লাহ হঠাৎ করে ওনাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন, আমাদের জন্য কোরবানির গরুর মাংস আর খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদলের যৌথ উদ্যোগে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বন্যা দুর্গত এই প্রত্যন্ত গ্রামে তিনটা গরু কোরবানি দিয়ে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পেরে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন মেহেদী মাসুদ। তিনি জানান, দরিদ্রতা আর হঠাৎ বন্যায় একেবারে সর্বশান্ত হওয়ার কারণে এই গ্রামে এবার কেউ কোরবানি দিতে পারবে না, তা প্রথম আলো পত্রিকার একটি সংবাদ থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এরপর আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদলের সাথে সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করে দ্রুত এই আয়োজন করেন। এই আয়োজন করতে আল কলম ইসলামিক সেন্টার পরিবারের সদস্যদের অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। তিনি তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
মেহেদী মাসুদ আরও জানান, মহৎ এই কাজ করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন আল কলম ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক ও রাজধানীর ধানমন্ডির মসজিদ-উত্ তাকওয়ার খতিব মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জে এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সহযোগিতা করেছেন কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক কবির আহমদ। তিনি আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বড় অংকের অর্থ খরচ করে আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদল যৌথভাবে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যাদুর্গত এসব মানুষদের যেখানে ঈদের দিন খাওয়ার জন্য এতটুকু সেমাই কেনার টাকা ছিল না, তারাও আজ কোরবানির গরুর মাংস, পোলাও আর সেমাই খেতে পারছেন। পুরো গ্রামজুড়ে পোলাওয়ের গন্ধে মৌ মৌ করছে।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘বন্যায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও মানসিকভাবে দুর্বল মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছে আল কলম ইসলামিক সেন্টার ও মাদল গ্রুপ। রাজধানী থেকে এসে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির মাংস ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে নজির স্থাপন করেছেন তাঁরা। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি