নাটোরে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

প্রকাশিত: ৬:৫১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩

নাটোরে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

অনলাইন ডেস্ক

নাটোরের চলনবিলে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক পরিবার। অনেকেই তাদের এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। হাঁস পালন অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। পাশাপাশি ডিম মিলছে ভালো।

সিংড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ২০০টি হাঁসের খামার রয়েছে। ক্যামবেল, ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের ১০ লাখের বেশি হাঁস পালন করা হচ্ছে এসব খামারে। তবে রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা ও বেশি ডিম দেওয়ার কারণে ক্যামবেল জাতের হাঁস বেশি পালন করা হচ্ছে। বর্ষায় চলনবিল ও শুকনো মৌসুমে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুঁজা, আত্রাই ও গুমানী নদ-নদীতে এসব হাঁস পালন করে থাকেন খামারিরা।
হাঁস পালনে স্বালম্বী হওয়া এসব পরিবার বছরের পুরোটা সময় হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই সংসারের অভাব-অনটন মেটায় ওইসব পরিবার। তাছাড়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচের যোগান দেওয়া হয়। চলনবিলের সিংড়া উপজেলার শতাধিক পরিবারের উপার্জনের একমাত্র পথ হাঁস পালন। সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অনেক পরিবার নিজ উদ্যোগে উন্মুক্ত বিলে হাঁস পালন করে আসছেন। এর মধ্যে ডাহিয়া, আয়েশ, বিয়াশ, বলিয়াবাড়ী, কালিনগর, কৃষ্ণনগর, আনন্দনগর, সাতপুকুরিয়া, হিজলী ও কান্তনগর গ্রামের অনেক পরিবার হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ার আনন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। দিনমজুরি করে চালাতেন ছয়জনের সংসার। সেই অবস্থায় বছরখানেক আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করা টাকায় শুরু করেন হাঁস লালন-পালন। সেই হাঁসে ভর করে তার সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বছরজুড়ে হাঁস পালন করেন তিনি। এখন তার খামারে ক্যামবেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ডিম দিচ্ছে ৪৮০টি হাঁস। বছরে খরচ বাদে লাভ হচ্ছে তিন-চার লাখ টাকা।

জানা যায়, সকাল থেকে হাঁসগুলো বিলে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সারাদিন কখনো পানিতে কখনো ডাঙ্গায় হাঁস চড়তে থাকে। দিনভর হাঁস দেখাশোনা করার জন্য রাখাল রাখা হয়। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথে বিলের এক পাশে জাল দিয়ে ঘেরা এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে হাঁসগুলোর রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সকাল হলে আবার বিলে নেওয়া হয়। বিলে চড়ানো হচ্ছে বলে হাঁসদের খাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোনো খরচ নেই। কেবলমাত্র একদিন বয়সের বাচ্চা কেনা, ওষুধপত্র, লোকবলের খরচ। কাজেই তার এই খামাড় অত্যন্ত লাভজনক। কোনো সহযোগিতা ছাড়াই এসব পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো অনেকেই হাঁস পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানান তারা।

কালিনগর গ্রামের মন্টু আলী বলেন, সমিতি থেকে লোন নিয়ে হাঁস পালন করছি। কিন্ত সরকারিভাবে কোনো লোন পাইনি। তিনি হাঁস পালনে সংসার চালান। তার গত বছর কলেরা রোগে ২০০টির মত হাঁস মরে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন। তবে বর্তমানে নতুন ৭০০টি হাঁস কিনে পালন শুরু করেছেন। ডিম বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সাধারণত একদিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করে থাকেন খামারিরা। ছয় মাস পর এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়তি খাবার কম লাগে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমও মেলে বেশি। খরচ বাদে একজন খামারি প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের এসব মানুষ কম পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। ফলে বেকারত্ব ঘুচছে। মিলছে আমিষের চাহিদাও। হাঁস পালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ