পদ্মা সেতু কি নিরাপত্তাহীন

প্রকাশিত: ১:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২২

পদ্মা সেতু কি নিরাপত্তাহীন

সিলনিউজ বিডি ডেস্ক :: নাট খুলে টিকটক। গাড়ি থামিয়ে সেলফি। রেলিংয়ে বসতে দেখা যায় অনেককে।

উদ্বোধনের প্রথম দিনই টিকটকের নামে পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এক যুবক। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে তোলপাড়। আরেক যুবক সেতুতে উঠে মূত্র বিসর্জন করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। এর মধ্যে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় মাওয়া প্রান্তে টোলপ্লাজার দুটি ব্যারিয়ার ভেঙে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব কারণে নিজ অর্থায়নে নির্মিত দেশের মানুষের অহঙ্কার পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরুতেই সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু। প্রথম দিনই শুরু হয় নিয়ম ভাঙার হিড়িক। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুতে নেমে ছবি তোলা বা ভিডিও করাই নয়, ভাইরাল হতে সেতুর রেলিংয়ের দুটি নাট খুলে টিকটক বানিয়েছেন এক যুবক। আরেক যুবক সেতুতে নেমে করেছেন মূত্র বিসর্জন। দুজনের ছবি ও ভিডিও গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওঠে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই তাদের শাস্তি দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপরই সেতুতে নামার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে সেতু বিভাগ। আটক করা হয়েছে নাট খুলে ভাইরাল হওয়া যুবককে। এ ছাড়া অন্যদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্যদিকে দুপুর আড়াইটায় সেতুর মাওয়া টোল পয়েন্টে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় ভেঙে যায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার দুটি ব্যারিয়ার। যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রথম দিনই এমন ঘটনা ঘটল। এসব নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, পদ্মা সেতু কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। সংরক্ষিত এলাকা। এর ধারেকাছে যাওয়া উচিত না। এত বড় বিনিয়োগ। সেখানে উঠে কেউ নাট খুলে ফেলবে, এটা তো বড় ঝুঁকি। ছোট ছোট ঘটনা থেকে বড় ঘটনা ঘটে। গোড়াতেই আটকাতে হবে। সেতুর নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশেই ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে। দুই পাশে থানা করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরীক্ষায় ফেল করলে বিজয়োল্লাস বিষাদে পরিণত হবে। বিশ্ব বলবে, আমরা উন্নত প্রযুক্তি করতে পারলেও হজম করার সক্ষমতা অর্জন করিনি।
গতকাল কাইসার ৭১ (Kaisar71) নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্টের লোগো লাগানো ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক পদ্মা সেতুর লোহার রেলিংয়ের দুটি নাট খুলে হাতের ওপর রেখে বলছেন, এই হলো আমাদের পদ্মা সেতু। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এ সময় পাশ থেকে আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘নাট খুলে ভাইরাল করে দিয়েন না।’ পদ্মা সেতু নিয়ে আরও কয়েকটি টিকটক ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। একটিতে দেখা যায়, শাড়ি পরা কয়েক নারী নেচে-গেয়ে টিকটক করছেন। এ ছাড়া দিনভর সমালোচনায় ছিল পদ্মা সেতুতে উঠে এক যুবকের মূত্রত্যাগের ছবি। সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা ওই যুবকের ছবি মোটরসাইকেলে বসে তুলছেন আরেকজন। ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন নেটিজেনরা। সবার মন্তব্যে ছিল তীব্র ক্ষোভ। অনেকে তাদের ‘প্রতিবন্ধী’ বলেও মন্তব্য করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, পদ্মা সেতু বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তাদের নিয়ে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাধছে। সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গতকালই নাট খুলে ভাইরাল হওয়া যুবককে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সে ছাত্রদল কর্মী বলে জানা গেছে। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআইজি (সাইবার) জামিল আহমেদ জানান, নাট খুলে নিয়ে টিকটক ভিডিও আপলোড করা ওই যুবকের নাম বায়েজিদ মোল্লা। তার বাড়ি পটুয়াখালী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গতকাল এসব ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে পদ্মা সেতুতে মানুষের না নামার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর ওপরে যানবাহন থেকে নামা নিষিদ্ধ। এরপরও অনেকে সেতুতে নেমে মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি চুরি করছে। দুই দিকের টোল প্লাজার আশপাশে যন্ত্রপাতি ও মালামালের ক্ষতি করছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে টহল জোরদার করার অনুরোধ করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা নিষিদ্ধ। নিয়ম ভেঙে এ ধরনের কর্মকান্ড ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা গতকাল বলেন, সোমবার (আজ) থেকে পদ্মা সেতুতে উঠে ছবি, সেলফি তুললে কিংবা পদ্মা সেতুর ওপরে বসলেই জরিমানা করা হবে। প্রথম দিন (রবিবার) কিছুটা শিথিল থাকলেও আজ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।

সেতু বিভাগ সূত্র বলছে, সেতুর আশপাশে এখনো নানা নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। টোল প্লাজার কাছে চারপাশে বেড়া দেওয়ার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে বাইরে থেকেও অনেকে ঢোকার চেষ্টা করছে। গাড়ি-মোটরসাইকেল থামিয়ে সেলফি তোলা, শুয়ে পড়ে ছবি তোলা, ঝুলে রেলিংয়ে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। এতে একদিকে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। মালামাল চুরির ঘটনাও হচ্ছে। এ জন্য সাধারণ মানুষের নামার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা আছে, তা কঠোরভাবে কার্যকরের বিষয়ে সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রথম জরিমানা : মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে এসে প্রথম জরিমানার শিকার হয়েছেন মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীর বাসিন্দা আয়ুব খান। হেলমেট না থাকায় গতকাল দুপুর ২টার দিকে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ