প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে নতুন স্বপ্ন তাদের

প্রকাশিত: ২:২৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১৪, ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে নতুন স্বপ্ন তাদের

স্বপন দেব,নিজস্ব প্রতিবেদক :: এই তো কয়েকদিন আগেও দিনমজুর জগো রবিচন্দ্র সাঁওতালের মাথাগোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না। তিনি অন্যের বাড়িতে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নতুন একটি ঘর পেয়েছেন। নতুন ঘর পেয়ে করেছেন বিয়েও। সেই ঘরে উঠেছেন নববধূকে নিয়ে। এবার নতুন ঘরে নববধূকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বূনছেন রবিচন্দ্র। শুধু রবিচন্দ্র নন, তার মতো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নতুন ঘর পেয়েছেন দিনমজুর সুবল ভূমিজ।

সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এই দুই ভূমিহীন যুবকের নতুন ঘর পাওয়ার পেছনের গল্প অন্যরকম। আর এতে অবদান রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরানের। এমনটাই জানালেন জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল ও সুবল ভূমিজ। তারা দুজন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডিমাই এলাকার বাসিন্দা।

জানা গেছে, গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাতে বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের বাজারিছড়ায় বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণী শজারু হত্যার দায়ে ৯ জনকে আটক করে বনবিভাগের বড়লেখা কার্যালয়ের লোকজন। ওই রাতে ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শামীম আল ইমরান জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল সুবল ভূমিজকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। অন্য ৭ জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পরে দণ্ডিতরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে বন্য প্রাণী হত্যা না করে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেন। সাজা দেওয়ার পরদিন ইউএনও ডিমাই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেন তাদের (সুবল ও জগো) স¤পর্কে। জানতে পারেন তারা ভূমিহীন। এলাকা ঘুরে এসে ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহহীনদের বরাদ্দ হওয়া ঘর থেকে সুবল ও জগো’র জন্য ঘর তৈরির উদ্যোগ নেন। কারাগার থেকে বের হয়ে সুবল ভূমিজ ও জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল জীবিকার তাগিদে দিনমজুরির কাজ শুরু করে। প্রতিদিন পাহাড়ে যাওয়ার সময় তাদের চোখে পড়ে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট দিয়ে ঘর তৈরির কাজ চলছে। তারা তখনও জানতো না ঘরগুলো কাদের জন্য তৈরি হচ্ছে। তাদের চোখের সামনেই পাকা ঘর উঠেছে। ঘরে রঙ দেওয়া হয়েছে। একসময় জানতে পারে যে বিচারক তাদের জেল দিয়েছেন তিনিই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর তাদের তৈরি করে দিয়েছেন। ঘর পেয়ে দারুণ খুশি তারা। নতুন ঘর পেয়েই তাদের একজন জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল বিয়েও করেছেন। গত শনিবার (৯ মে) বিকেলে জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল ও তার স্ত্রীর জন্য নগদ অর্থ এবং উপহার নিয়ে হাজির হন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান। নবদম্পতিকে উপহারের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে দেন। এসময় বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, স্থানীয় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।

নতুন ঘর পেয়ে জগো রবিচন্দ্র সাঁওতাল বলেন, ‘আমি দিনমজুর। কাজ করে খাই। পাকা ঘর বানানোর কোনো সামর্থ্য নেই। অন্যের বাড়িতে থাকতাম। কয়েকদিন আগে আমরা দুজন একটি শজারু মেরে জেলে যাই। জেল থেকে বের হয়ে শুনি আমরারে শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর দিছইন ম্যাজিস্ট্রেট স্যার। যে স্যারে জেল দিলেন তিনি আবার নতুন ঘর দিলা। ইটা শুনিয়া জেলের কষ্ট ভুলি গেছি। জীবনেও একটা মাটির ঘর বানাইতে পারতাম না। ঘর পাইয়া বিয়া করলাম। এটা স্যারের অবদান। আমরা খুব খুশি। এর লাগি আমরা স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

সুবল ভূমিজ বলেন, ‘আমরা জানতাম না শজারু মারলে অপরাধ। জেল হবে। বনবিভাগের লোকজন ধরে ইউএনও স্যারের কাছে আমাদের দেয়। স্যার আমরারে জেল দেন। জেল থেকে বের হয়ে দেখি আমাদের এলাকায় নতুন ঘর হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। পাকা ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই। আমরা মনে করছি বড়লোক কেউ ঘর বানায়। কিছুদিন পর জানতে পারলাম যে স্যার আমরারে জেল দিছেন তিনিই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর দিয়েছেন। ঘর পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে। স্যাররে কইছি আমরা আর শজারু মারতাম নায়। রক্ষা করমু।’

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহহীনদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রত্যেকটি ঘরে আছে দুটি কক্ষ। সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর, বারান্দা, সংযুক্ত শৌচাগার। এতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘তারা অজ্ঞানতাবশত বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণী শজারু হত্যা করে। বনবিভাগের লোকজন তাদের আটক করে। আইন অনুযায়ী তাদের জেল দেওয়া হয়। এসময় তাদের প্রাণী হত্যা না করার জন্য বুঝানো হয়। এরপর তারা বন্য প্রাণী শিকার না করে সংরক্ষণ করবে বলে জানায়। পরদিন তাদের খোঁজ নেই। জানতে পারি তারা ভূমিহীন। নিজেদের থাকারও ঘর নেই। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের পাকা ঘর তৈরি করে দেই। ঘর পেয়ে তারা খুব খুশি। তাদের একজন নতুন ঘর পেয়ে বিয়েও করেছে। গত শনিবার নতুন দম্পতিকে নগদ অর্থ ও উপহার দিয়ে ঘর তুলে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে প্রান্তিক মানুষগুলো দারুণ খুশি।’

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ