রায়হান হত্যা নিয়ে যা বললো পিবিআই

প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২১

রায়হান হত্যা নিয়ে যা বললো পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র কোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে পিবিআই। এতে বরখাস্ত ওই ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ ৬ জনের নাম রয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কোর্ট পুলিশ অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করবে। বুধবার (৫ মে) পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান এই অভিযোগপত্রটি হস্তান্তর করেন।

দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে ৬৯জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। সেই সাথে আলোচিত এই মামলায় ১৬৪ ধারায় ১০জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। ২২ পৃষ্টার অভিযোগপত্রে ৬জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস কারাগারে থাকলেও ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক যুবক। পিবিআই তাকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্রটি কোর্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

এদিকে বুধবার দুপুরে পিবিআই সিলেটের সদরদপ্তরে রায়হান হত্যার সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফ্রিং করেন বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, পিবিআই রায়হান হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর মহানগর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষ্য নেয়া, সাক্ষিদের জবানবন্দিসহ নানা বিষয় পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে। অভিযোগপত্রসহ মোট কেস ডকেট ১ হাজার ৯৬২ পৃষ্টা রয়েছে। এরমধ্যে ২২ পৃষ্টা হচ্ছে শুধু অভিযোগপত্র। পিবিআই তদন্ত করার সময় রায়হানের সাথে কোন পুলিশ সদস্যদের শত্রুতা ছিলো কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তবে এর সত্যতা মিলেনি। এছাড়াও পিবিআই আকবরের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডিভাইসগুলো অ্যানালাইসিস করে প্রাপ্ত তথ্য অভিযোগপত্রে দাখিল করা হয়।

তিনি বলেন, ১১ অক্টোবর গোলাগঞ্জের প্রতারক সাইদুল শেখ ও রনি শেখ রাত ১টা ৪৫ মিনিটে কাস্টঘর সুইপার কলোনী থেকে ৪ পিস ইয়াবা ক্রয় করে। ক্রয়কৃত ইয়াবাগুলো আসল নয় তারা বুঝতে পারেন। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রায়হান আহমদ মারপিট করে সাইদুল শেখের কাছ থেকে মোবাইল ও ৯ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কোতোয়ালি থানাধীন মাশরাফিয়া রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সিয়েরা-৪ ও রোমিও-৪ এর কাছে সাইদুল শেখ ও রনি শেখ মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।

পরে পুলিশ কাস্টঘরের চুলাই লালের ঘর থেকে রায়হান আহমদকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই, পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করায় রায়হানকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসআই আকবর বেতের লাঠি দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করেন। এরপর ১১ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ওসমানী মেডিক্যালে রায়হানকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামীরা ভিকটিম রায়হানকে কাস্টঘরে ছিনতাকালে গণপিটুনিতে মারা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এবং ঘটনার সংশ্লিষ্ট আলামত ধ্বংস করে।

তিনি আরও বলেন, পিবিআই দাখিল করা অভিযোগপত্রে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের দুটি ধরা রয়েছে।

অভিযোগপত্র নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন বলেন, জড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমি মরে যাওয়ার আগে আসামীদের শাস্তি দেখে যেতে চাই এটা আমার প্রত্যাশা।

জানা যায়, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান আকবর। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে বরখাস্ত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদ এবং প্রত্যাহার হওয়া এএসআই আশেক এলাহীকে গ্রেফতার করা হয়। ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর দিনই ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টেও নির্যাতনের বিষয়টি উঠে আসে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ