সিলেটে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না

প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২২

সিলেটে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না

সিলনিউজ বিডি ডেস্ক :: সিলেটে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। হ্রাস পাচ্ছে জেলার সকল নদ-নদীর পানি। তবে এখনো সুরমা ও কুশিয়ারার পানি সকল পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, পানি কমলেও কমছে না বন্যাসৃষ্ট সংকট। পানি ও খাবারের জন্য বানভাসী মানুষের মধ্যে চলছে হাহাকার। গো-খাদ্যের জন্য চরম বিপাকে পড়েছেন লোকজন। এছাড়া এখনো বন্যাকবলিত এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি।
ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ী এলাকায় ভারী বর্ষন বন্ধ হওয়ায় সিলেটের সকল নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গেল ২৪ ঘন্টায় এ দুই পয়েন্টে পানি কমেছে যথাক্রমে ১১ ও ১৪ সেন্টিমিটার। এছাড়া কুশিয়ারার পানি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় জকিগঞ্জের আমলসীদে বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৪ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জে ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘন্টায় এ ৩ পয়েন্টের মধ্যে যথাক্রমে আমলসীদে ১৭ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৪ সেন্টিমিটার কমেছে এবং ফেঞ্চুগঞ্জে ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।

নদীর পানি কমতে শুরু করায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির বেশি উন্নতি হয়েছে। গেল ২৪ ঘন্টায় কোথাও ৬ ইঞ্চি আবার কোথাও এক ফুট পরিমাণ পানি কমেছে। তবে ডুবে যাওয়া রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘর এখনো নিমজ্জিত রয়েছে। ফলে বন্যার কারণে ঘরছাড়া মানুষ এখনো ফিরতে পারছেন না। ফলে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন মানুষ।

সিলেট নগরীর বন্যাকবলিত এলাকা থেকেও পানি নামা অব্যাহত রয়েছে। নগরীর উপশহর, তেররতন, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তোপখানা, কাজিরবাজার ও ঘাসিটুলাসহ আক্রান্ত এলাকায় পানি কমলেও এখনো রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী পানি কমা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে পানি পুরোপুরি নেমে যাবে। তবে পানি কমা শুরু হওয়ার পর থেকে নগরীর বন্যাকবলিত এলাকায় প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুর্গন্ধ ও নোংরা পরিবেশ থেকে নানারকম রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুর রহমান সুমন। বন্যার পানি নামার পর আরেকবার বৃষ্টিপাত হলে এই দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর হবে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে, পানি কমলেও কমছে না বানবাসী মানুষের দুর্ভোগ। সিলেট নগরীতে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার পানির জন্য চলছে হাহাকার। সিটি করপোরেশনের শোধনাগার ও কয়েকটি পাম্প বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এরপরও ট্যাংক ও ট্রলি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানি সরবরাহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আবদুস সোবহান বলেন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ময়লা পানি প্রবেশ করায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাম্পগুলোও পানির নিচে। চারটি পাম্পই বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে পাম্পগুলো দ্রুত সচল করা হবে।

নগরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসলেও উপজেলাগুলো এখনো বিপর্যস্ত। সকল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত সম্ভব হয়নি।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, ‘সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। কয়েকদিন ধরে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে আড়াইশ থেকে তিনশ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছিল, সেখানে গত শুক্রবার হয়েছে মাত্র ২৫ মিলিমিটার। তাই সিলেটের নদীগুলোতেও পানি কমছে।’

তবে পানি পুরোপুরি নেমে যেতে আরো পাঁচদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর (পুর) দপ্তরের সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস এম শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বন্যার পানি কমছে। ফলে সিলেটে আর বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা নেই। তবে এ অবস্থায় আরও পাঁচদিন পানিবন্দি থাকতে হবে সিলেটবাসীকে।’

সূত্র : বিডি প্রতিদিন

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ