সিলেটে লিভার ক্যান্সারের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ‘টেইস’ সফলভাবে সম্পন্ন

প্রকাশিত: ৭:২৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২২

সিলেটে লিভার ক্যান্সারের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ‘টেইস’ সফলভাবে সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূন্যভূমি সিলেটেও লিভার ক্যান্সারের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএ্যাম্বোলাইজেশন বা ‘টেইস’ সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের নর্থইস্ট হাসপাতালে প্রথমবারের মতো একজন রোগীর লিভারে ‘টেইস’ করেন। রাজধানী ঢাকার পর কোথাও টেইস স্থাপনের ঘটনা এটিই প্রথম।
এ উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল জানিয়েছেন, এদেশে ক্যান্সার জনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে কিভার ক্যান্সার। বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ লিভার ক্যান্সারের কারনেই মারা যান। লিভার ক্যান্সারের রোগীদের জন্য টেইস হচ্ছে একটি সুখবর। হার্টের বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ক্যাথল্যাবে হার্টের ব্লক হওয়া ধমনীতে স্টেন্ট পরিয়ে রক্ত চলাচল পুনরায় চালু করে দেন, লিভার বিশেষজ্ঞরাও একইভাবে ক্যাথল্যাবে লিভারের ধমনীর মাধ্যমে লিভার ক্যান্সারের টিউমারগুলোতে সরাসরি কেমোথেরাপি প্রয়োগ করে সেই রক্তনালিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে শরীরের অন্য কোথাও ক্যান্সার ছড়াতে পারেনা।
গতকাল দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় টেইস স্থাপনের পর ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল এই প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করেন।
এতে, ডা. স্বপ্নীল আরও জানান, টেইস’র ফলে রোগীর চুল পড়া,খাওয়ার অরুচি ইত্যাদি কেমোথেরাপিজনিত কোনো সাইড এফেক্ট হয়না। রক্তনালি ব্লক করে দেয়ার ফলে লিভার ক্যান্সারের টিউমারগুলো রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টিউমারগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পরে। টেইস করার ফলে টিউমারগুলো ছোট হয়ে আসলে, পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সারের রোগীদের মুখে খাওয়ার কেমোথেরাপি কিংবা ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। এমনকি একসময় অপারেশন করে লিভার ক্যান্সারের টিউমার অপসারণও করা যায়।গত কয়েক বছর ধরে দেশে নিয়মিত টেইস করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে ডা. স্বপ্নীলের নেতৃত্বে দেশে টেইস শুরু হয় বলে এতে জানানো হয়েছে।
ডা. স্বপ্নীল দেশে উৎপাদনের অপেক্ষায় থাকা করোনা ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর প্রধান গবেষক। সিলেটের সাথে নিজের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সিলেট নগরীর ছড়ারপাড়ে তার পিতৃভূমি। এজন্য রাজধানী ঢাকার পরই তিনি তার প্রিয় জায়গা সিলেটেই লিভার ক্যান্সারের এই আধুনিক চিকিৎসা শুরু করেছেন। ডা. স্বপ্নীলের নেতৃত্বে দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন রোগীকে টেইসের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। টেইসের এই অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে। টেইসে বাংলাদেশের সাফল্য আশপাশের দেশগুলোর সমতুল্য আর খরচও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশী সাশ্রয়ী। গতকাল টেইস করা রোগী আজ বুধবার ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারবেন।
ডা. স্বপ্নীলের নেতৃত্বে এই টিমের সদস্য ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম ডিউ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ -হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়েজ আহমেদ খন্দকার, একই হাসপাতালের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.রোকসানা বেগম, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. দুলাল চন্দ্র দাস ও শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট’র এন্যাসথেসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইকরামুল হক। সিলেটে লিভারের চিকিৎসায় এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ