হারানো মোবাইল খুঁজে বের করাই নেশা এএসআই কাদিরের, উদ্ধার সাড়ে ৪ হাজার

প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২২

হারানো মোবাইল খুঁজে বের করাই নেশা এএসআই কাদিরের, উদ্ধার সাড়ে ৪ হাজার

অনলাইন ডেস্ক :: হারানো মোবাইল খুঁজে বের করাই এএসআই মো. আবদুল কাদিরের নেশা। গত ৮ বছরে ছিনতাই অথবা হারিয়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মোবাইল ফোন খুঁজে দিয়েছেন তিনি। মোবাইল ফোন হারানোর বিষয়ে জিডি হলেই ডাক পড়ে তার। এরপর তা উদ্ধারে মাঠে নেমে পড়েন তিনি।

এএসআই কাদির বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বনানী থানায় কর্মরত। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ আসে কাদিরের কাছে। নিজের থানা তো বটেই, অন্য যে কোনো স্থানে মোবাইল হারালেও ভুক্তভোগীরা আসেন তার কাছে। এরই মধ্যে তিনি পুলিশ বিভাগ থেকে ২২ বার পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০১৯ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘আইজিপিস এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ’।

এএসআই আবদুল কাদের বলেন, ২০১৫ সালের কোনো এক রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় কর্মরত ছিলাম। এমন সময় এক নারী কাঁদতে কাঁদতে থানায় প্রবেশ করেন। তিনি জানান, মহাখালী এলাকা থেকে ফেরার সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তার মোবাইল ফোনটি হারিয়েছে। যেভাবেই হোক তার মোবাইল ফোনটি যেন পুলিশ উদ্ধার করে দেয়। শুধু একটি মোবাইল ফোনের জন্য ওই নারীর এমন কান্না দেখে মনে কৌতূহল জাগে। ওই নারীর কাছে জানতে চাই মোবাইলে কী এমন আছে, যার জন্য তিনি এত কান্না করছেন? জবাবে ওই নারী জানান, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি তার বাবার শেষ স্মৃতি। তার বাবা ওই ফোনটি কিনে দিয়েছিলেন। বাবার সঙ্গে অনেক ছবিও রয়েছে। কিন্তু কিছুদিন আগে তার বাবা মারা যান। তাই বাবার শেষ স্মৃতিগুলো মোবাইলে বারবার দেখতেন তিনি। চরম মমতায় আগলিয়ে রাখতেন মোবাইলটি, বলেই আবারও হু হু করে কান্না করতে থাকেন। ওই নারীর কান্না দেখে মনে দাগ কাটে। মনে মনে ঠিক করি, যেভাবেই হোক তার মোবাইলটি উদ্ধার করবোই। নিজ উদ্যোগেই যোগাযোগ করি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে। জিডির কপিসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট পাঠিয়ে দেই ডিবি কার্যালয়ে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রায় তিন মাস পর বরিশাল থেকে ওই নারীর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়। হারিয়ে যাওয়া মোবাইলটি হাতে পেয়ে সেদিনও খুশিতে কেঁদেছিলেন ওই নারী।

এএসআই কাদির আরও বলেন, কারও মোবাইল ফোন যদি হারিয়ে যায় সেটি তার আবেগ এবং স্মৃতি। যখন কোনো মানুষের স্মৃতি হারিয়ে যায় তখন সেই মানুষটির কষ্টের শেষ থাকে না। মোবাইল ফোন হারিয়ে যখন মানুষটি থানায় আসেন, তখন চেহারা দেখেই বোঝা যায় তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে গেছে। এই জায়গা থেকে আমি চিন্তা করি, মানুষের হারানো শখের মোবাইলটি যদি আমি ফিরিয়ে দিতে পারি তাহলে ভুক্তভোগীও উপকৃত হবে, আমারও ভালো লাগবে।

মোবাইল হারিয়ে গেলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করতে হবে। হারানো মোবাইলটি ফিরে পেতেই শুধু জিডি করবেন তেমনটি নয়, নিজের নিরাপত্তার জন্যও জিডি জরুরি। মোবাইল ফোন কেনার পর বক্স ও ক্যাশমেমো যত্ন সহকারে রাখতে হবে। কারণ মোবাইল হারানো, ছিনতাই অথবা চুরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আইএমইআই নম্বর থাকলে সেই মোবাইল খুঁজে পেতে সহজ হয়। কারণ তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ৬০-৭০ শতাংশ হারানো মোবাইল উদ্ধার করা যায়।

মোবাইল ফোন উদ্ধারের যাদুকর এএসআই কাদির মোবাইল ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে বলেন, শখের বশে অনেক সময় পারসোনাল কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও সংরক্ষণ করেন অনেকে। কিন্তু মোবাইল ফোন যখন হারিয়ে যায়, তখন ওই ভুক্তভোগী মোবাইলের চেয়ে বেশি চিন্তা করেন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও নিয়ে। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, কখনো পারসোনাল কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও মোবাইল ফোনে সংরক্ষণ করা উচিত নয়।
মানুষের বিশ্বাস, আমার কাছে ফোন দিলেই তার হারানো মোবাইলটি ফিরে পাবে। আমিও শতভাগ চেষ্টা করি প্রিয় মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের। শ্রীলঙ্কান একজন নাগরিকের একটি দামি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশ এমন গুড সার্ভিস দেয়, এটি অবিস্মরণীয়। বিদেশিদের হারানো মোবাইল উদ্ধারের পর তারা অনেকেই তাদের নিজস্ব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে তখন নিজে গর্ববোধ করি।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করা এএসআই কাদিরের স্ত্রীর নাম শাহানাজ আক্তার রাহিমা। ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান কানিজ ফাতিমা সুপ্তি। কাদিরের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার বড় বেড়াখারুয়ায়। তিনি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে থানায় নিয়মিত মামলার তদন্ত, টহল ডিউটিসহ দৈনন্দিন সব কাজ করছেন। মানবিক কারণে তিনি মোবাইল ফোন উদ্ধারের কাজ করেন। তিনি ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ডিএমপির বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরে আযম মিয়া বলেন, আন্তারিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে থানার কাজগুলো সম্পন্ন করছে এএসআই আবদুল কাদির। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন উদ্ধারে কাজ করেন। আমরা তাকে এসব কাজে উৎসাহ দেই। কারণ একটি মোবাইল ফোন একজন ভুক্তভোগীর কাছে অনেক গুরুত্ব বহন করেন। আর সেই ফোনটা উদ্ধার করে দিলে ভুক্তভোগীর খুশির অন্ত থাকে না। এভাবেই অসংখ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা তৎপর।

সূত্র : বিডি-প্রতিদিন

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ