৬৫ লাখ টাকায় বাসা বিক্রি ক্রেতার সাথে প্রতারণা, অবশেষে কারাগারে কাউন্সিলর শানু

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২২

৬৫ লাখ টাকায় বাসা বিক্রি ক্রেতার সাথে প্রতারণা, অবশেষে কারাগারে কাউন্সিলর শানু

অজয় বৈদ্য অন্তর:: ৬৫ লাখ টাকায় বাসা বিক্রি ক্রেতার সাথে প্রতারণা অভিযোগে অবশেষে কারাগারে বর্তমান কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু। আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত নাম্বার-১ সিলেট এর বিচারক আব্দুল মোমেন এর আদালতে আত্মসমর্পন করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে সিসিকের বর্তমান কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

মামলার বাদী নুরুল ইসলাম ও উনার আইনজীবি এডভোকেট রাগীব আলী জানান, ৬৫ লাখ টাকায় বাসা বিক্রি ক্রেতার সাথে প্রতারণা, অবশেষে কারাগারে বর্তমান কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু। কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত নাম্বার-১ সিলেট এর বিচারক আব্দুল মোমেন এর আদালতে আত্মসমর্পন করলে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে সিসিকের বর্তমান কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।

মামলার বাদী নুরুল ইসলাম জানান, সিলেট নগরীর সিটি কর্পোরেশনের ১৩, ১৪ ও ১৫ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন শিক্ষানবীশ আইনজীবী গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশার মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. লোকমান হোসেন। আমি  সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার আপন বড় ভাই ফটিক মিয়া কাজিরবাজারের একজন ব্যবসায়ী। আমি ও আমার ভাই নগরীতে একটি বাসার ক্রয় করার চেষ্টা করছিলাম। জানতে পারি খুলিয়াটুলায় নীলিমা আবাসিক এলাকায় ৪ শতক জায়গার ৫২/৫ নং বাসাটি বিক্রয় হবে। আমরা বাসার মালিক ও দখলকার, মৃত মুকিত মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায়, সে মাঠপর্চা নিয়ে বাসাটির মালিক ও দখলকার হিসেবে ভোগ দখল করছে। এদিকে জায়গার এস.এ রেকর্ডিয় মালিক জনৈক গোলাম সরোয়ার চৌধুরীর উত্তরাধিকারীগণ। এছাড়া, নুরুল ইসলামের ছোটভাই মৃত তাজুল ইসলামের স্ত্রী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩, ১৪ ও ১৫ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু ও তার ছেলেরা ওই বাসার দোতলায় বসবাস করে। জায়গার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে নুরুল ইসলামকে জানাই, তিনি যদি সব পক্ষকে এক করে দলিল করে দিতে পারে তবে আমরা বাসাটি কিনতে পারি।
লোকমান হোসেন বলেন, প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নুরুল ইসলাম, কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, দখলকার রাকিব আহমদ ও এসএ রেকর্ডিয় মালিকদের পক্ষে এহসানুল হক চৌধুরী বৈঠকে বসেন। সকলে তাদের নিজ নিজ প্রাপ্য টাকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে উক্ত ৪ শতক জায়গাসহ বাসাটি মোট ৬৫ লক্ষ টাকায় আমাদের কাছে বিক্রয় করতে রাজি হন। এরূপ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাসার দখলকার নুরুল ইসলামের সাথে ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করে ৩৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। তিনি উক্ত টাকার মধ্যে ৬ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা এসএ রেকর্ডিয় মালিক গোলাম সরোয়ার চৌধুরী, মোহাম্মদ বক্স চৌধুরী ও সাহাদত বক্ত চৌধুরীর উত্তরাধিকারী ৫ জনকে পরিশোধ করেন এবং আমি ও আমার ভাই ওই বছরের ১৮ মে এস.এ রেকর্ডিয় মালিকদের কাছ থেকে সাফ কবালা দলিল সম্পাদন করে বাসাটি ক্রয় করি।
এছাড়া, কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানুকে ২৪ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে তার সাথে ২০২১ সালের ভূমি বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করি। অপর দখলকার মো. রকিবের সাথে ওই বছরের ৪ আগস্ট এক চুক্তিপত্র সম্পাদন করে তাকে ১২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। এভাবে, আমি মোট ৭৪ লক্ষ টাকা সকল পক্ষকে পরিশোধ করি। এছাড়া বাসার দামের অতিরিক্ত ৯ লক্ষ টাকা নুরুল ইসলাম আমার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেই বাবত আমাকে ৯ লক্ষ টাকার ৩টি চেক প্রদান করে।
শাহানা বেগম শানুকে টাকা প্রদানকালে নগরীর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান ও সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য সহুল আল রাজি চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। তারা সম্পাদিত বিক্রয় চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।
বাসাটি ক্রয় করার পর গত ১৫ জানুয়ারি বেলা ১১টায় আমি, আমার স্ত্রী, আমার ২ ছেলে এবং ভাগ্নি ক্রয়কৃত বাসাটি দেখতে যাই। নিচতলায় অবস্থানরত দখলকার মো. রাকিবের ঘরে ঢুকি। এসময় কাউন্সিলর শানু, তার ছেলে রায়হান ও রেদওয়ান হাজির হন। তারা বলেন, এখনো বাসা বুঝিয়ে দেননি। তারা আমাদের সাথে অপমানজনক আচরণ করে। গালিগালাজ করে। রায়হান ও রেদোয়ান ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। আমরা তাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিলে শানু ও তার ছেলে বাইরে থেকে ঘরের গ্রিল বন্ধ করে দেয়। উপায়ান্তর না দেখে আমি মোবাইলে বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে কাজিরবাজার থেকে পরিচিত জামাল, আনোয়ার ও ইয়াকুবকে নিয়ে আমার ভগ্নিপতি হালিম মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অন্য স্বজনরাও যান ঘটনাস্থলে।
কাউন্সিলর শানু ও তার সহযোগীরা এসময় তাদের দোতলার বাসায় অবস্থান নিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। বোমার আঘাতে আমার ভগ্নিপতি হালিম মিয়া, আমার চাচী মনিকা বেগম ও ভাতিজি পারভীন বেগম গুরুতর আহত হন। বড় ভাই বিষয়টি পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশ এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণ করে। আহতদের মধ্যে হালিম মিয়া, মনিকা বেগম ও পারভীন বেগমের শরীর পেট্রোল বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়ায় তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসধীন। এ ঘটনায় আমি নিজে বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছি।
লোকমান হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, আমার বড়ভাই জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে বাসাটি কিনেছেন। মূল্য পরিশোধ করে দিয়েছি। কাউন্সিলর শানুসহ বাসার মালিক দাবিদার সবাই তাদের প্রাপ্য টাকা পেয়ে গেছেন। অথচ, দখল হস্তান্তর না করায় আমরা চোখে অন্ধকার দেখছি। আমরা বাসাটি দেখতে গিয়ে নির্মম হামলার শিকার হয়েছি। আমার পরিবারের ৩ জন লোক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

এবিএ/ ২৫ জানুয়ারি

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ