আরাফা দিবসের রোযা

প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০২০

আরাফা দিবসের রোযা

অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক :

আরাফা দিবসে রোযা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম, এ বিষয়ে কোন সন্দেহও নেই, মতভেদও নেই। কিন্তু আরাফা দিবস কোনটি? এটি কি আরাফা নামক ময়দানে হাজিদের অবস্থানের দিবস, না ওই দিবসের স্থানিক রূপ? এটি হালের তুমুল আলোচিত বিষয়।

আমি বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শনের জোরালো সমর্থক। তাই আমার বিবেচনায় সকল বিচারে আরাফা দিবসের রোযা ওইদিন রাখা উচিত; যেদিন আমরা হাজিদেরকে আরাফা নামীয় ময়দানে অবস্থানরত দেখতে পাব।

অর্থাৎ এই বছরের কথা বললে ৩০ জুলাই, ২০২০ রোজ বৃহস্পতিবার। রোযাকে আরাফার সাথে সম্পর্কিত করায় এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, হাজিগণ আরাফার ময়দানে হজ্জের রোকন আদায়ে অবস্থানের দিনের জন্য এ ফজিলত।

অতএব আপনি যেদিন দেখবেন টিভিতে হাজিরা আরাফায় অবস্থান করছেন, সেদিনই আরাফা দিবসের রোযা রাখবেন, সেটাই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয় মত হল, জিলহজ্জের নয় তারিখ রোযা রাখা। অর্থাৎ আরাফা নামক শব্দের স্থানবাচকতাকে সময়বাচকতায় রূপান্তর করে তার ওপর স্থানিকতা আরোপ করা।

তার মানে আরাফা দিবস মানেই জিলহজ্জের ৯ তারিখ, হাজিগণ আরাফায় অবস্থানরত থাকুন বা না থাকুন। এ ব্যাখ্যাতেও আমার কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু আমি বৈশ্বিক চন্দ্রদর্শনে বিশ্বাসী, তাই আমার কাছে হাজিদের আরাফায় অবস্থান ও ৯ তারিখ অবিচ্ছেদ্য, এর দুই রূপ নেই।

কিন্তু বহু মানুষ বা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্থানীয় চন্দ্রদর্শনে বিশ্বাসী। তাই তাদের কাছে আরাফা দিবস হল ওইদিন যেদিন হাজিরা মিনায় অবস্থান করেন।

তাদের একটি যুক্তি হল, বিগত যুগের মানুষ জানতে পারত না, কখন হাজিরা আরাফায় অবস্থান করে, তাই তারা স্থানীয় দর্শনের ভিত্তিতে জিলহজ্জের ৯ তারিখ রোযা রাখত, কারণ জিলহজ্জের নয় তারিখে হাজিরা আরাফাতে অবস্থান করেন।

স্থানীয় দন্দ্রদর্শনে ভিন্নতার কারণে প্রতি বছর এমন হত যে, মক্কা হতে দূরের দেশে যেদিন জিলহজ্জের ৯ তারিখ হত; সেদিন মাক্কায় জিলহজ্জের দশ তারিখ হত।

অতএব আমাদের পূর্বপুরুষ যেহেতু স্থানিক হিসাবে জিলহজ্জের ৯ তারিখে আরাফা দিবসের রোযা রেখেছেন, আমাদের জন্যও সেটাই উত্তম, যদিও এভাবে রোযা রাখতে গিয়ে আমরা আরাফা দিবসের রোযার দিনে হাজিদের মিনায় দেখতে পাই।

প্রযুক্তি ও যোগাযোগের উন্নতিতে নিপূণভাবে ইবাদতের সময় নির্ধারণের সুযোগ এসেছে। যেমন, যখন ঘড়ি ছিল না, মেঘের দিনে বহু মানুষ সূর্যাস্তের আগে ইফতার করেছে, আবার সাহরির সময় পার হওয়ার পরও সাহরি খেয়েছে।

আল্লাহ অবশ্যই তাদের ওজর কবুল করবেন, কারণ তারা মাজুর থাকা সত্ত্বেও সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছেন। আপনি নিশ্চয়ই এখন বলবেন না যে, ঘড়ি না দেখে পূর্বাকাশে সুবহে সাদেক হয়েছে কি না; তা যাচাই করে সাহরি গ্রহণ করতে হবে।

বলা যায়, যদি কখনও প্রযুক্তি হারিয়ে যায়, তখন কী হবে? কিছু হবে না। আমরা পূর্বের দিকে ফিরে যাব, ছায়া আসলি মেপে আসরের সালাত নির্ধারণ করব। কোন অসুবিধা নেই। আমাদের কর্তব্য হল, হাতের নাগালে যেসব উপায়-উপকরণ আছে; তার সর্বোত্তম ব্যবহার করে ইবাদতের সময় নিখুঁতভাবে নিরূপন করা।

[পুনশ্চ: কেউ যদি শুক্রবার আরাফা দিবসের রোযা রাখেন, আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলার নিকট তাও গ্রহণীয় হবে। কারণ এ বিষয়ে আলিমগেণের এখতেলাফ এখনো বহাল আছে। তবে আমি মনে করি বৃহস্পতিবার রাখা উত্তম হবে। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।]

লেখক: ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুত্র : যুগান্তর

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ