সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২০
দোদোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম প্রধান কর্তা ছিলেন তিনি। করতেন দিনমজুরি। তার সীমিত আয়ে কোনো রকমে চলতো সংসার। সরকারি খাসজমিতে জোড়াতালি দিয়ে ছোট্ট একটা ভাঙ্গা ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে তার বসবাস। একদিন ভাগ্যের চাকা ঘুরবে, সন্তানরা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হাল ধরবে আর কষ্টের দিন ঘুচবে তাদের সাফল্যে এই আশায় অনেক কষ্টের মধ্যেও বড় ছেলে আলী হোসেন(১৬) কে পড়াশোনায় স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন দিনমজুর পিতা আসরব আলী। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কাছে হেরে গেলেন তিনি। তার আশা আর পূরণ হলো না। মরণব্যাধি ক্যান্সারে চিরতরে থেমে গেছে তার জীবন। গত ২৩ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরতরে পরপারে পাড়ি জমান আসরব আলী। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। আর্থিক সংকুলান না হওয়ায় অসুস্থ থাকাবস্থায় বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলছিল তার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের পরিত্যক্ত ব্রিটিশ সড়কের খাসজমিতে হতদরিদ্র দিনমজুর প্রয়াত আসরব আলীর বাড়ি। সরজমিনে তার পরিবার-পরিজনের খোঁজ নিতে গিয়ে প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছ থেকে পরিবারটির অসহায়ত্বের কথা জানা যায়। ৩ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে সবার বড় কন্যা সন্তানের বিয়ে হয়েছে এলাকাতেই। তার পারিবারিক অবস্থাও শোচনীয়। বাকি চারসন্তানদের সবাই অল্পবয়সী। আসরব আলীর অবর্তমানে এখন সংসারের হাল ধরার মতো কর্মক্ষম কেউ না থাকায় তার পরিবার পরিজনরা চরম বিপাকে পরেছেন। কষ্টে দিন কাটছে তাদের। আসরব আলী জীবিত থাকাবস্থায় তার চিকিৎসার পেছনে সার্বক্ষণিক সময় দিতে গিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া বড় ছেলে আলী হোসেনকে শেষপর্যন্ত পড়াশোনা থেকেও ইস্তফা দিতে হয়েছে। সে এখন বেকার। বয়স কম হওয়ায় কেউ কাজে নিতে চায়না তাকে। বাবার অবর্তমানে একদিকে সাংসারিক খরচের যোগান অন্যদিকে নতুন করে আবার পড়াশোনা শুরু করা এইনিয়ে দুশ্চিন্তা যেন কিছুতেই কাটছেনা তার। মৃত্যুবরণের পর এলাকার সামাজিক কবরস্থানের মাঠে কবর দেওয়া হয়েছে আসরব আলীকে। বাবা এখন কোথায় আছে? প্রশ্ন করতেই আলী হোসেনের কোলে থাকা আসরব আলীর আড়াই বছর বয়সী কনিষ্ঠ সন্তান নবীর হোসেন বলেন, মাঠে। এইটুকুই বলতে পারছে সে। নিষ্পাপ এই শিশুটি আদৌ জানেনা তার বাবা আর ফিরে আসবে কিনা! পরিবারের বর্তমান অবস্থার কথা জানতে চাইলে আসরব আলীর স্ত্রী মায়ারুন বিবি আবেগাপ্লুত হয়ে প্রতিবেদককে জানান, স্বামীর অবর্তমানে সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে। আত্মীয়স্বজন যে কয়জন আছেন তাদের কাছেও যাওয়ার মতো কোনো উপায় নেই। তাদের অবস্থাও শোচনীয়। বড় ছেলেটার পড়াশোনা বন্ধ। সে পড়াশোনা করতে চায়। এখন কিভাবে এই বড় সংসারের খরচের যোগান দেব আর কিভাবেইবা সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাব তা ভেবে পাচ্ছিনা। আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর দেখার মতো কেউ নেই। সামনে দিনে সন্তানদের মুখে কিভাবে খাবার তুলে দেব তা জানিনা। স্বামীর চিকিৎসা ও সাংসারিক খরচ চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পরছি। কারো কাছে হাত পাতার মতো জায়গাও এখন আর অবশিষ্ট নেই। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোয়ারাবাজার সরকারি ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন জানান, আসরব আলী অসুস্থ থাকাবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিভিন্ন মানুষের দেওয়া সেচ্ছা অনুদানে একটা তহবিল গঠন করে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেছিলাম। প্রশাসনের সহায়তায় তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। তার অকাল মৃত্যু আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। তার অবর্তমানে পরিবারটি এখন অসহায় অবস্থায় সময় পার করছে। অসহায় এই পরিবারটির পাশে কেউ সেচ্ছায় এগিয়ে না আসলে পেটের দায়ে সবাইকে পথে নামতে হবে। প্রয়াত আসরব আলীর অসহায় পরিবারের পাশে সমাজের সকল সুহৃদয়বান ও বিত্তবান ব্যক্তিদের মানবিকভাবে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি