সিলেট ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২১
অনলাইন ডেস্ক ::
যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে বাংলাদেশি প্রায় প্রতিটি পরিবার এখন স্বজন হারানোর শোক নিয়ে বেঁচে আছেন। এসব পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য, নয়তো খুব কাছের কেউ বিগত দুইমাসের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
লন্ডন শহরের মুসলিম গোরস্থানগুলোতে মরদেহ সমাহিত করতে রীতিমতো সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। গোরস্থানগুলোতে মেশিনে মাটি কেটে একের পর এক মরদেহ দাফন করা হচ্ছে। মর্গগুলোতে লাশের সারি। বেঁচে থাকা মানুষের চোখে উদ্বেগ। সন্তান নিয়ে উদ্বেগ বাবা-মায়ের। আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সন্তানদেরও উদ্বেগ চরমে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি লন্ডনে বসবাসরত পারভেজ মল্লিক বলেন, ‘ইংল্যান্ডে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। দুই দফা করোনার সংক্রমণে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির চার ভাগের এক ভাগ ষাটোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।’
তিনি জানান, বসবাসের কাগজপত্র ছাড়াই ব্রিটেনে বসবাস করা ৫০ হাজার বাংলাদেশির সঙ্গে ব্রেক্সিটের আগ মুহূর্তে যুক্ত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। ইউরোপের কাগজপত্র নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করা এসব বাংলাদেশি চরম বিপাকে পড়েছেন।
মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং লন্ডনের কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান জসিম বলেন, ‘ব্রিটেনে যেসব বাংলাদেশি ব্যবসা করেন তাদের ৮০ শতাংশই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। করোনা মহামারি এই ব্যবসায় ধস নামিয়েছে। মানুষ কেনা খাবার গ্রহণ প্রায় বাদ দিয়েছে। নাইট ক্লাব, পাব সবকিছু বন্ধ থাকায় যারা ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন তাদের আয় কমে গেছে।’
লন্ডনের ক্যামডেনে বসবাসরত সাংবাদিক ও যুক্তরাজ্য জাসদ নেতা ফখরুল ইসলাম খছরু বলেন, ‘ব্রিটেনে এখনও ওয়েলফেয়ার সুবিধা রয়েছে। বৈধ কেউ না খেয়ে মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি। রোজগার হারাবার যন্ত্রণা বাঙালি সহ্য করতে পারে। কিন্তু স্বজন হারাবার বেদনা প্রবাসী বাংলাদেশিরা আর নিতে পারছেন না।’
ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম আবু তাহের চৌধুরী জানান, ব্রিটেনে গত মঙ্গলবার চব্বিশ ঘণ্টায় ১৬১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বাঙালির ঘরে ঘরে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘বৃটেনে এক ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা কেউই ভালো নেই। প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ঠাঁই নেই। করোনায় প্রতিদিন মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য।’
ব্রিটেনে এই দফার করোনা সংক্রমণের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। মারা গেছেন কমিউনিটির পরিচিত মানুষগুলো। গত কয়েকদিনে করোনায় পরপারে চলে গেছেন বাংলা টাউনের সমাজকর্মী তছির আলী, খলিলুর রহমান, সোনালী অতীতের ফুটবলার আখলিছ, বদরুল আমিন, সমাজসেবী মজুমদার আলী, সিলেটের বিশ্বনাথের সিরাজ উদ্দিন, শোয়েব খালিছাদার, ডার্বির সমাজসেবী হারুন মিয়া, কিলবার্নের আব্দুল কাদির, কবি দেওয়ান হাবিব চৌধুরী, রাজনীতিবিদ আবু লেইস মিয়া ও তার আপন ভাই আকদ্দছ আলী, ইনাতগঞ্জের আবুল বশর, ছৈলার আবু শাহাদাত কালাই, ব্যবসায়ী আব্দুল বাতিন, কাজী আবু খালেদ, সোয়ানসীর দুই ভাই কবির উদ্দিন ও বদরুল ইসলাম, ফেঞ্চুগঞ্জের কবির মিয়া, নিউহ্যামের আলমসহ শতাধিক মানুষ।
এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ইস্ট লণ্ডন মসজিদের ইমাম শায়েখ আব্দুল কাইউম, মারকাজি মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ রফিক, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুস সালামসহ শত শত মানুষ। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী করোনায় ২০২০ সালে প্রায় ১৬ লাখ ৯০ হাজার মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত ফার্লো স্কিমের (বিশেষ কর্মসূচি) মাধ্যমে দেশটির কর্মজীবীদের বেতনের বড় অংশ পরিশোধ করে যাচ্ছে। এ স্কিম চালু থাকায় বেকারত্বজনিত বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্রটি সামনে আসছে না। করোনায় ঠিক কত লাখ মানুষ ব্রিটেনে চাকরি হারাবেন, সেটা বোঝা যাবে সরকারের প্রণোদনায় বেতনের চলমান ফার্লো স্কিম বন্ধ হওয়ার পরে।
করোনাভাইরাস মহামারিতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন ব্রিটেনের ৮ লক্ষাধিক বাংলাদেশি। ব্রিটেনের ব্ল্যাক অ্যান্ড মাইনোরিটি এথনিক (বিএমই) কমিউনিটিগুলোর মধ্যে করোনায় বাংলাদেশিদের মৃত্যুহার ছিল শীর্ষ তালিকায়।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
সম্পাদক ও প্রকাশক : এড. আফছর আহমদ
যুগ্ম সম্পাদক : মোছাম্মদ নুরুন নাহার
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420, 01711-365152
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি