সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২০
রুহুল কুদ্দুস বাবুল◾
কারারুদ্ধ তরুণ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘বসন্ত’ গীতিনাট্যটি উৎসর্গ করে তার একটি কপি কারাগারে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-“নজরুলকে আমি ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য উৎসর্গ করেছি এবং উৎসর্গপত্রে তাঁকে ‘কবি’ বলে সম্বোধন করেছি। জানি তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা অনুমোদন করতে পারনি। আমার বিশ্বাস তারা নজরুলের কবিতা না পড়েই এই মনোভাব পোষণ করেছে। আর পড়ে থাকলেও তার মধ্যে রূপ ও রসের সন্ধান করনি, অবজ্ঞা ভরে চোখ বুলিয়েছ মাত্র। … কাব্যে অসির ঝনঝনা থাকতে পারে না, এও তোমাদের আবদার বটে। সমগ্র জাতির অন্তর যখন সে সুরে বাধা অসির ঝনঝনায় যখন সেখানে ঝঙ্কার তোলে, ঐক্যতান সৃষ্টি হয়, তখন কাব্যে তাকে প্রকাশ করবে বৈকি! আমি যদি আজ তরুণ হতাম, তাহলে আমার কলমেও এই সুর বাজত।…. আমি তাকে সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুণ্ঠে আর্শীবাদ জানাচ্ছি। আরো বলো, কবিতা লেখা যেন কোন কারণেই সে বন্ধ না করে। সৈনিক অনেক মিলবে, কিন্তু যুদ্ধে প্রেরণা জোগাবার কবিও তো চাই।” উল্লেখ্য ‘ধুমকেতু’ মামলায় কবি নজরুল জেলে ছিলেন।
“এই পবিত্র বাংলাদেশ
বাঙালির-আমাদের।
দিয়া প্রহারেণ ধনঞ্জয়
তাড়াব আমরা, করি না ভয়
যত পরদেশি দস্যু ডাকাত
রামাদের গামাদের।
বাংলা বাঙালির হোক! বাংলার জয় হোক। বাঙালির জয় হোক।
বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।” লিখেছিলেন বাঙালি জাতিসত্ত্বার এক মহিমান্বিত মহানায়ক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হলো। গোটা জাতির হৃদয়ের আকাঙ্খা যখন এক হয়ে একটা আগ্নেয়গিরিতে পুঞ্জিভুত হলো। সেই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কাল আমার ছেলেবেলা। অনেককিছুই বুঝতে পারি বা বুঝতে শিখেছি।
আমার আব্বা ছিলেন সরকারী কর্মকর্তা সে কারণে আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বর্তমান শেরপুর জেলা শহরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়েল স্কুলে। আব্বার বদলিজনিত কারণে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর অল্প কিছুদিন আগে আমাদের চলে আসতে হলো গ্রামের বাড়ী সিলেটের বালাগঞ্জ থানার সিরাজপুর গ্রামে। আব্বার কর্মস্থল সুনামগঞ্জ শহরে। তখন সুনামগঞ্জের সাথে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় আমাদের গ্রামের বাড়ীতেই থাকতে হয়। দাদাকে (বড়ভাই) মদন মোহন কলেজে, আমার মেজোআপা, ছোটআপাকে দেওয়ান আব্দুর রহিম হাই স্কুলে ও আমাকে ও আমার ছোটভাই আবুলকে ভর্তি করা হয় দেওয়ান বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সম্পূর্ন ভিন্ন ও নতুন পরিবেশ মানিয়ে নিতে থাকলাম।
এ লেখার মূল বিষয়টা হলো আমার রাজনীতিতে আসা। উড়ন্ত শুরুর একটা দূরন্ত উপসংহারও টানা যায়, শুনেছিলাম একজন জ্ঞ্যানী ব্যাক্তির মুখে।
৭ মার্চ ১৯৭১ সাল। বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিবেন। আব্বা ছুটি নিয়ে বাড়ীতে ছিলেন। কথা ছিল রেডিওতে ভাষণটি প্রচার হবে কিন্তু সেদিন প্রচার হয়নি, হয়েছিল পরের দিন ৮ তারিখ সকালে। বারান্দায় রেডিও রাখা হলো, গ্রামের বেশকিছু লোকও এসেছেন ভাষণ শুনতে। ভাষণ প্রচার হলো সবাই মনযোগি শ্রোতা। সবার সাথে আমিও শুনলাম। “….আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবা।….. এবারের সংগ্রাম-মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম-স্বাধীনতার সংগ্রাম।… রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো। ইনশাল্লাহ। জয় বাংলা। স্পষ্ট মনে পড়ছে লোকজন আব্বাকে জিজ্ঞেস করলো এখন কি হবে, আব্বা বলেছিলেন দেশ স্বাধীন হবে, শেখ সাহেব শেষ কথাই বলে দিয়েছেন….।
ভাষণের কথাগুলো শুনে আমার শরীর মন কেমন জানি শিহরিত হলো। যদিও তখন আমি শিশু। সেই ভাষণ আমার শিশুমনকে যেন বিদ্রোহী করে তুললো, এক অন্যরকম অনুভুতি তৈরী হলো, এক অজানা উত্তেজনা তৈরী হলো। সেদিনের সেই অনুভবের কথা প্রকাশ করার ভাষা নেই।
হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি, রাজনীতির মহাকবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাব্যসমৃদ্ধ সেই ভাষণের মাধ্যেমেই বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, অসাধ্য সাধন করেছিল। বাংলা বাঙালির হয়েছিল, বাংলার জয় হয়েছিল, বাঙালির জয় হয়েছিল।
“শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী ?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷”(কবি নির্মলেন্দু গুন)
চেতনাদীপ্ত সেই ভাষণ সেই শিশু ‘আমাকে’ ভবিষ্যতের এই আমি নয়, যেন অনেক বড় কিছু হয়ে উঠতে উজ্জীবিত করে তুলেছিল। বড় হয়ে কি হবে জিজ্ঞেস করলে বলতাম “আমি শেখ মুজিব হবো”। ( চলবে)
(লেখক : সাধারণ সম্পাদক, জেলা ঐক্যন্যাপ সিলেট )
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি