নির্বাচনই হতে পারে মূল আন্দোলন

প্রকাশিত: ১:৪০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২

নির্বাচনই হতে পারে মূল আন্দোলন

মেজর (অব.) আখতার ::

আমিসহ বিএনপির প্রত্যেক নেতা ও কর্মী বিশ্বাস করেন বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না এবং হওয়ার সম্ভাবনা নেই; যদি না সরকারকে বাধ্য করা যায় অথবা যদি না প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা পোষণ করেন। তাই আমাদের সবারই ঐকমত্য যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হলে সবার আগে দরকার একটি নিরপেক্ষ সরকারের এবং তার পর দরকার একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের যারা শিরদাঁড়া উঁচু করে নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এখন আমাদের সবার এ ঐকান্তিক ও চরম প্রত্যাশিত মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে হলে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ প্রথমত বর্তমান সরকারের ভাবসাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই সরকারকে বাধ্য করতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু সরকার যেভাবে খুঁটি গেড়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারকে রাজি করানো কঠিন হয়ে যাবে। এহেন রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র জাতি ঐকমত্য যে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে পারলে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে এবং এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমতও সম্ভবত নেই। যদিও একটি নতুন আপদ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও সেই সঙ্গে তৈরি হয়ে যাবে। কারণ ক্ষমতা পরিবর্তনের অসাংবিধানিক ধারায় যে বা যারা ক্ষমতাসীন হবেন তারা আবার কোনো ঝুট-ঝামেলা তৈরি করে খুঁটি গেড়ে বসেন কি না তার তো কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না বা যারা দিতে পারবেন তাদেরও হয়তো কোনো এজেন্ডা থাকতে পারে। যা হোক, পরেরটা পরে দেখা যাবে। আপাতত আমরা সে ভাবনা নিয়ে চিন্তিত নই। বর্তমান সরকারকে যে কোনো মূল্যে হটাতে চাই। আমাদের লক্ষ্য খুবই সুনির্দিষ্ট ও স্বল্প। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে এবং হটানোর জন্য যে একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে তা-ও আমরা জানি। আমরা অভ্যুত্থান শব্দের আভিধানিক অর্থ যে ‘আকস্মিক ও অবৈধভাবে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে দলগতভাবে কোনো গোষ্ঠীর অবস্থান ব্যক্ত করে ক্ষমতাচ্যুত করা কিংবা জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা’ তা-ও ভালো করে জানি। তাই গণঅভ্যুত্থান ঘটানো কোনো সমস্যা নয়। অচিরেই দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে যাবে তখন একটি দিয়াশলাইয়ের শলা জ্বালিয়ে দিলেই হবে। আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে! যে কোনো মাহেন্দ্রক্ষণে আন্দোলনের ডাক চলে আসবে। আন্দোলনের ডাক যে আসছে তার পূর্ব-ঘোষণাও আমরা অব্যাহতভাবে দিয়ে যাচ্ছি। বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মী আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছেন। সবাই অপেক্ষা করে আছেন আন্দোলনের ডাকের জন্য। তাই আমি মনে করি বিএনপি আন্দেলনের ডাক দিলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বেন এবং বিএনপির সব নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে শতভাগ একমতও। কিন্তু আমি মনে করি ‘আমি’ ছাড়া সবাই ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কারণ আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা আছে। তাই ‘আমি’ চাই ‘আমি’ ছাড়া সবাই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুক, ‘আমি’ তো পেছনে আছিই। দলের ১ নম্বর নেতা থেকে গ্রামের ওয়ার্ড কমিটির সর্বশেষ সদস্যও মনে করেন ‘আমি’ মানে তিনি ছাড়া সব নেতা-কর্মী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ‘আমি’র কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা আছে যার জন্য সশরীরে আন্দোলনের সামনে থাকতে পারছি না! আজ আন্দোলন না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা সৃষ্টি হচ্ছে এই ‘আমি’ নিয়ে। আমি মনে করছি সবাই তো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন সেখানে ‘আমি’ না থাকলে ক্ষতি কী? এখন সব ‘আমি’ই আন্দোলনে নেই। ফলে মাঠে বা রাজপথে ‘আমি’ও নেই আমরাও নেই- আন্দোলনও নেই। তবে ‘আমি’ বক্তৃতা-বিবৃতিতে আছি তাই আন্দোলনেও আছি এবং এজন্য সরকার পতনের আন্দোলনেও আমাদের সব নেতার বক্তৃতা-বিবৃতিতে সব সময় যেমন জারি আছে, তেমনি নির্দেশনারও কমতি নেই। চরম বাস্তবতা হলো, শারীরিক অবস্থার কারণে ১ নম্বর নেতার পক্ষে মাঠে বা রাজপথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আবার ২ নম্বর নেতার নিরাপত্তার কারণেই দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে কিন্তু দলে ৩ নম্বর নেতা বলে কারও অবস্থানও নেই, স্বীকৃতিও নেই, কাউকে বিশ্বাসও করা হচ্ছে না। ফলে ৩ নম্বর নেতা হিসেবে কাউকে মাঠে বা রাজপথে দেখা যায় না। ৩ নম্বর নেতা বা কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা না থাকায় পরবর্তী কোনো নির্দিষ্ট নেতা বা চেইন অব কমান্ড নেই। ফলে আন্দোলনে মাঠে ও রাজপথে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে কোনো নেতাই উপস্থিত থাকেন না বা থাকা সম্ভব হয় না। দায়িত্ব বা ক্ষমতা প্রাপ্ত কোনো নেতা উপস্থিত না থাকায় মাঠে বা রাজপথে নির্দেশ বা নেতৃত্বের অভাবে কর্মীরাও থাকেন না। এ জটিল ও বাস্তব সমস্যার কোনো সমাধান মনে হচ্ছে আপাতত কারও কাছে নেই! ফলে শত প্রয়োজন ও ইচ্ছা থাকলেও রাজপথে আন্দোলন দানা বাঁধতে পারছে না। নিকট-ভবিষ্যতে পারবে বলেও কোনো আলামত দৃশ্যমান হচ্ছে না।

সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। একটি ইস্যুর সমাধান হতে না হতেই আরেকটি ইস্যু সামনে চলে আসছে। জনগণও হতবিহ্বল হয়ে যাচ্ছে। নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে, চারদিকে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। এ রকম অবস্থা চলতে থাকলে জনগণ বিকল্প নেতা বা দল বা রাজনীতি খুঁজতে শুরু করে দিতে পারে। রাজনীতি কারও জন্য অপেক্ষা যেমন করে না, তেমনি কোনো দল বা নেতার প্রতি দায়বদ্ধও হয়ে থাকে না। জনগণ সব সময় পরিবর্তন পছন্দ করে। সে পরিবর্তন হতে পারে নেতার, হতে পারে দলের, হতে পারে আদর্শের বা বিশ্বাসের। জনগণও আন্দোলন চায়। কারণ জনগণও বিশ্বাস করে আন্দোলন ছাড়া কখনই পরিবর্তন সম্ভব নয়। আন্দোলন যে শুধু রাজপথে হতে হবে এ রকম কোনো বাধ্যবাধকতায়ও জনমত তীব্র নয়। আন্দোলনের পথ বা ধরন অনেক রকম হতে পারে। রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও করাও যেমন রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ তেমনি বিভিন্ন ইস্যুতে জনমতের প্রতিফলন ঘটিয়ে তা মানতে সরকারকে বাধ্য করাও আন্দোলন। আজকের ইন্টারনেটের যুগে কোনো মত, পথ, বক্তব্য বা পদক্ষেপকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল সৃষ্টির মাধ্যমেও সরকারকে নত হতে বাধ্য করা যায়। শারীরিক উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ করে কোনো আন্দোলনের জনমত বা শক্তি প্রকাশের একমাত্র উপায় আর এখন স্বীকৃত নয়। সামাজিক মাধ্যমেও জনমত সৃষ্টি করে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। অতীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আট দল ও জামায়াতে ইসলামীর চাপে পড়ে বিএনপি তার নীতি ও আদর্শের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা চালু করেছিল। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার সে নিয়ম বাতিল করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটি নির্বাচন করে। বিএনপি ২০১৪ সনের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ায় বয়কট করে। যদিও ২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন জেলে থাকা অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি যেমন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিয়েছিল তেমনি ২০১৮ সালের নির্বাচন সঠিক হয়নি বলে যে বক্তব্য বিএনপি দিয়ে আসছে তার বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত জোরালো কোনো অবস্থান দাঁড় করাতে পারেনি। তার ওপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দলীয় সদস্যদের সংসদে উপস্থিতি এবং একজন মহিলা সংসদ সদস্যের আসন গ্রহণ করে বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচন নৈতিকভাবে মেনে নিয়েছে তাই ২০১৮ সালের নির্বাচনের ওপর কোনো কথা বলার নৈতিক অবস্থানও বিএনপি হারিয়ে ফেলেছে। তা ছাড়া জনগণও ইতোমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলেও অনেকের কাছে মনে হচ্ছে।
বর্তমান আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থায় একটি তীব্র গণআন্দোলনের বিকল্প যে নেই তা সবাই অনুভব করছে। কিন্তু সে আন্দোলনে নেতৃত্বের অভাবও তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের লক্ষ্যে জনগণ এখন মনে করছে যেহেতু রাজপথে শান্তিপূর্ণ বা রক্তক্ষয়ী কোনো আন্দোলনই গড়ে তোলা যাচ্ছে না তাহলে নির্বাচনকে আন্দোলন হিসেবে নিয়ে সবাইকে নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া অতীব শুভবুদ্ধির পরিচয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চাইবে না যা খুবই স্বাভবিক। সরকার আন্দোলন করতেও দেবে না। তাই আন্দোলন করতে হলেও যেমন সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে হবে তেমনি নির্বাচনেও সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। অসম শক্তি ও নেতৃত্ব নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার চেয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে জনগণের কাছে ছুটে যাওয়া হবে সময়ের শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ।

আন্দোলনের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হলো প্রশাসন ও পুলিশ। আবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তিও হলো প্রশাসন ও পুলিশ। যে কোনো আন্দোলনে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রশাসন ও পুলিশের বিরুদ্ধে লড়ে তাদের নত করাতেই হবে; তা হলেই পরিবর্তন আসবে। কিন্তু নির্বাচনে প্রশাসন বা পুলিশের বিরুদ্ধে লড়তে হবে না। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলেই হবে! এখন যদি আমরা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারি তাহলে সেটি প্রশাসন বা পুলিশের সমস্যা নয়, আমাদের সমস্যা। প্রশাসন ও পুলিশ সব সময় শক্তি ও স্বার্থের পক্ষে থাকে। শক্তি ও স্বার্থের ভারসাম্য ঘটাতে পারলেই প্রশাসন ও পুলিশের অবস্থান পরিবর্তন হয়। সবাই তখন দক্ষ বুঝে পক্ষ নেয়! তাই বিএনপি যদি এখন থেকেই নির্বাচনে যাওয়ার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয় তাহলে সম্ভাব্য প্রার্থীরাই প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে ভালোবাসা গড়ে তুলবেন! তা ছাড়া নির্বাচনের দুই বছর আগে থেকেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতে পারলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন। অনেকের ধারণা, বর্তমান মনোনয়ন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি পরিবর্তন করে দলের ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে শতকরা ৪০ ভাগ, সাবেক আমলা, সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, পেশাজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষকের মধ্য থেকে শতকরা ৩০ ভাগ এবং ব্যবসায়ী ও করপোরেট হাউস, এনজিও, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সংগঠন থেকে শতকরা ৩০ ভাগ প্রার্থী যাচাই -বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে যদি আগে থেকে প্রাথমিক মনোনোয়ন দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচনে পরিবর্তনের যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হবে। শর্তটি হলো, যদি দলের স্বার্থে কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে মনোনয়ন বাতিল হয়ে যেতে পারে। এতে দলের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে অনেকের ধারণা। এ ছাড়া দলের তহবিল সংগ্রহেও সহায়ক হবে। এ রকম একটি ব্যবস্থা নিতে পারলে অনেক যোগ্য, বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মনোনয়নের জন্য দলে ভিড় করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উল্লিখিত তিনটি বিভাজন থেকে শতকরা ১৫-২০ ভাগ আসনে সরাসরি নির্বাচন করার জন্য মহিলাদের মনোনয়ন দিলে মনোনয়ন আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ হবে বলে অনেকের ধারণা।

আগামী নির্বাচনে পুলিশকে বাইরে রাখতে হবে। অপরাধ দমনে যেমন পুলিশের জুড়ি নেই তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পুলিশের ব্যর্থতারও কমতি নেই। অপরাধ দমনে পুলিশ সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে অপরাধীর- সে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান বা দল হোক- বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং ওপর থেকে নিচে সবাই অপরাধ দমনে সচেষ্ট থাকে। অপরাধ দমনে পুলিশ সব সময় সদলবলে জনগণের পক্ষে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে থাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পুলিশ তখন ন্যায় বা অন্যায় বিবেচনা করে না। কারণ অন্ধের মতো তখন তারা নির্দেশ পালন করে বা করতে বাধ্য হয়। তাই নির্বাচনে পুলিশকে কোনো দায়িত্ব না দিলে নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচনে যত অঘটন হয় তার পেছনে বেশির ভাগ হাত থাকে পুলিশের। নির্বাচনে পুলিশ সব সময় একটি পক্ষ নিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে; এতে নির্বাচনে সব অনাচারের সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের সময় পুলিশকে নিয়ন্ত্রণের কেউ থাকে না। এ সুযোগে পুলিশ তার গ্রেফতার করার ক্ষমতা পূর্ণ ব্যবহার করে। পেছনের বিভিন্ন মামলার আসামিদের ধরার নাম করে পুলিশ নির্বাচনের সময় একচ্ছত্র সুবিধা ভোগ করে।

পুলিশ সব সময় তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকে ফলে তারা কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে পারে না। তাই প্রস্তাব থাকবে নির্বাচনের সময় নিজেদের প্রশাসনিক কাজের জন্য জনবল রেখে বাকি সব পুলিশকে সেনাবাহিনীর মতো দুই মাসের বার্ষিক ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়ে আনসার, ভিডিপি, বিজিবি ও সামরিক বাহিনীকে নির্বাচনের দায়িত্বে দুই মাসের জন্য সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে নিয়োগ দিলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হতে পারবে। নির্বাচনকালীন যে দুই মাস পুলিশ বার্ষিক ছুটি ভোগ করবে ওই দুই মাস অপরাধ কার্যক্রম দমন বন্ধ থাকবে। পাঁচ বছরে দুই মাস অপরাধ দমন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে ওই সময়ে অপরাধ তেমন বেশি বাড়বে না বলে অনেকেই মনে করেন।

পরিশেষে আবারও বলতে চাই, পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করতেই হবে তবে নির্বাচনও সেই আন্দোলন হতে পারে। হিসাব করে এগোতে পারলে অনেক কম ঝুঁকি ও প্রচেষ্টায় নির্বাচনের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আনা অবশ্যই সম্ভব বলে অনেকের দৃঢ় ধারণা।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ