সিলেট ৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১
স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :: করোনার কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় অনেকটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রাণিদের ওপর। সকালে রাস্তা দিয়ে আসার সময় মায়া হরিণের ডাক শোনা যায়। আগে সচরাচর এমন ডাক শোনা যেত না। পর্যটক না থাকার কারণে বনের স্বাভাবিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীর এমন স্বস্তি দেখা দিয়েছে। লাউয়াছড়ায় এসে এমন বাস্তবতা উপলব্ধি করে একথা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আজিজ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এ বছরে সমৃদ্ধ হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটকদের জন্য বন্ধ রয়েছে উদ্যানটি। ফলে মানুষের উৎপাত নেই। আর এই সময়ে বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। নি:স্তব্দ বনে হাল্লা-চিতৎকারসহ অবাধ বিচরণ করছে বন্যপ্রাণী। গাছের ডালে ডালে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। বৃক্ষরাজিতে নতুন পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে বন। গর্ভবতী ও প্রসবের পর বাচ্চাদের নিয়ে বিরল প্রজাতির উল্লুক দম্পতির দেখা মিলছে। এখন উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কলরব, বনমোরগের ডাক শোনারও সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে লাউয়াছড়া বনের বিরল প্রজাতির হুল্লুকসহ গর্ভবতী বিভিন্ন প্রাণি ও বাচ্চাদের নিয়ে গাছে গাছে লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র দেখা যায়। করোনাকালীন বনের ভেতরে সড়ক ও রেলপথে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল না থাকায় গাড়ির শব্দও বন্ধ ছিল। এতে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে বন্যপ্রাণী। গাছের ডালে ডালে মা ও শিশু উল্লুক খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখা মিলছে বাবা উল্লুককেও। কোনো কোনোটি গর্ভবতী আবার কোনো কোনো মা উল্লুক বাচ্চা প্রসব করে মনের আনন্দে বিচরণ করছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দশকে এই বনের গভীরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। প্রাচীন গাছগাছালি চুরি, মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেল ও সড়কপথে যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্ন, অত্যধিক দর্শনার্থীর হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছিল বন ও বন্যপ্রাণী।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াংরা জানান, এই বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় থাকত। উদ্যান বন্ধ ঘোষণায় বনে দিনের বেলা উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সরকার আরো কয়েক মাসের জন্য উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করলে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ হতো।
অপরিকল্পিত পর্যটকের আগমন লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামরুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লাউয়াছড়া স্টুডেন্টস ডরমিটরিতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুইটি উদ্যানেই অপরিকল্পিত পর্যটক জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাছাড়া লাউয়াছড়ায় সড়কপথে যানবাহনে কাটা পড়ে বন্যপ্রাণী ও প্রচুর পরিমাণে নানা প্রজাতির সরীসৃপ মারা যাচ্ছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারস্থ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এখন বন্যপ্রাণীর ডাক শোনা যাচ্ছে। উল্লুক দম্পতির অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে মানুষের চলাচলের কারণে বন্যপ্রাণীর খাবার সংগ্রহ ও অবাধ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা যেত। বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে বন্যপ্রাণী অবাধে চলাচল করছে এবং উল্লুকসহ অন্যান্য প্রাণীও গর্ভবতী হচ্ছে এবং বাচ্চাও প্রসব করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পর্যটক শূন্য থাকায় লাউয়াছড়া ও সাতছড়িতে সমৃদ্ধ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি