ইসরাইলি জাহাজে হামলায় ইরান জড়িত দাবি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২১

ইসরাইলি জাহাজে হামলায় ইরান জড়িত দাবি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের

অনলাইন ডেস্ক :: আরব সাগরে গত ২৯ জুলাই রাতে ইসরাইলি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ হামলায় ইরান জড়িত বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরাইল শনিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে জাহাজে হামলার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রমাণ দেওয়ার একদিন পর রোববার ইহুদিবাদী দেশটির সঙ্গে সুর মিলিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন।

তারা এখন দাবি করছে— ওমান সাগরে ইসরাইলি জাহাজে হামলার জন্য ইরানই দায়ী।এ ব্যাপারে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ইরান প্রথমে এ বিষয়ে চুপ থাকলেও রোববার সংবাদ সম্মেলন করে ইসরাইলের এ দাবি অস্বীকার করে বলেছে, ইরান কোনোভাবেই এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। তেলআবিব মিথ্যাচার করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে, এ হামলা ইরানই চালিয়েছে।

এর আগে একই দিন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব তেলআবিবের বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে দাবি করেন, ওমান সাগরে ইসরাইলি জাহাজে হামলায় ইরান জড়িত রয়েছে।

রাব এ হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন এবং তার বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনও একই ধরনের হুমকি দিয়ে বলেন, ব্রিটেনসহ অন্য আঞ্চলিক মিত্র দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইরানকে ‘উপযুক্ত’ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন।

রাব ও ব্লিনকেনের আগে রোববার দিনের শুরুতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত জাহাজে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে হুমকি দেন, তেলআবিব নিজস্ব পদ্ধতিতে এ ঘটনার প্রতিশোধ নেবে বলেও ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, হামলার শিকার এমভি মেরসেল স্ট্রিট নামের ওই ইসরাইলি জাহাজটি একটি জাপানি তেল কোম্পানি লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জোডিয়াক মেরিটাইমের মাধ্যমে পরিচালনা করছে।

জাহাজটির মালিক ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ইয়াল অফের। হামলায় জাহাজের দুই নাবিক নিহত হন।নিহত দুই নাবিকের একজন ব্রিটিশ এবং আরেকজন রোমানিয়ার নাগরিক।

ভয়াবহ এ হামলার জন্য প্রথম থেকেই ইসরাইল সরাসরি ইরানকে দায়ী করেছে। শুক্রবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর ল্যাপিড এক বিবৃতিতে বলেন, এটি ইরানের ‘সন্ত্রাসী হামলা’।

বিবৃতিতে ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে চুপ থাকলে চলবে না।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত আরবি টিভি চ্যানেল আল-আলম টিভি শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সম্প্রতি সিরিয়ার বিমানবন্দরে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতেই ইহুদিবাদী দেশটির মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে ইসরাইলের চ্যানেল-১৩ এক প্রতিবেদনে জানায়, গত মাসে ইরানের রেলওয়ের সিস্টেমে যে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে, এ জন্য তেহরান তেলআবিবের ওপর প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।

ওমান উপকূলে এমন একসময় ইসরাইলের জাহাজে হামলা হলো যখন-ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দেশটির চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

৫ আগস্ট ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বশক্তির পরমাণু চুক্তি আলোচনা স্থগিত আছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে উত্তর ভারত মহাসাগরে ইসরাইলি মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজে হামলা হয়। ওই হামলায় জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়।

এসব হামলার জন্য ইসরাইল ইরানকে দায়ী করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের কর্তৃত্ব নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে ছায়াযুদ্ধ লেগেই থাকে।

গত এপ্রিলে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে একটি রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটে। একে নাশকতা বলে অভিহিত করে ইরান। এ হামলার জন্য তারা ইসরাইলকে দায়ী করে।

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অঘোষিত ছায়াযুদ্ধ এখন একটি বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড জানিয়েছে, ইসরাইলি জাহাজে হামলা হয়েছে চালকবিহীন বিমান বা ড্রোনের সাহায্যে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ