আজ ৭ আগস্ট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২১

আজ ৭ আগস্ট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলা (ভিডিও)

জুনেদ আহমদ

২০০৪ সালের ৭ আগস্ট সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় গ্রেনেড হামলার আগে জঙ্গিরা পত্র দিয়ে হুশিয়ার করে দিয়েছিলো। জুলাই মাসের ২৪ তারিখে ওই পত্র পেয়েছিলাম। ১৫ জনকে দেয়া হয়েছিলো ওই পত্র। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রয়াত হাবিবুর রহমান, প্রয়াত এডভোকেট সুপ্রিয় চত্রবর্তী রঞ্জু, ব্যারিস্টার আরশ আলী, এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও ছাত্রলীগের সভাপতি জগলু চৌধুরী। ওই পত্র পেয়ে ২৮ জুলাই থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। সাধারণ ডায়েরি করার ১০ দিন না যেতেই আমাদের উপর গ্রেনেড হামলা হয়। ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট সিলেট নগরীর গুলশান সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে ২০০৪ সালের সিলেটের গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলায় আহত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ওই কথা বলেন। তিনি জানাচ্ছিলেন, ৭ আগস্ট বিকেলে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা ছিলো। সিলেটসহ দেশব্যাপী বোমা হামলা ও জামায়াত-বিএনপি সরকারের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ছিলো ওই প্রতিবাদ সভা। প্রতিবাদ সভা শেষ করে গুলশান সেন্টারে নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় বসি। সভা শেষে আমি দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। চারদিকে আহতদের আর্তনাদ। আমি নিজেও গুরতর আহত। সে এক ভয়ার্ত পরিবেশ। কী করে যে বেঁচে গেলাম- আজো ভেবে পাই না। ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী নিহত ও সে সময়কার সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তিনি বলেন, আহত আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিসবাহ সিরাজ বলেন, আহত আমাদের সবাইকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওসমানী হাসপাতালে ভর্তির ২০ মিনিটের মাথায় জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ফোন করেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। প্রাথমিক তথ্য জেনে নিয়ে তিনি শান্তনা দিয়েছিলেন। যুগিয়েছিলেন সাহস। আহত অন্যদেরও খবর নেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় বলেছিলেন‘আমি তোমাদের দেখতে আসব‘। বলেন, সিলেটের এই জঙ্গি হামলা গুলশানের গ্রেনেড হামলা হিসেবে পরিচিত। যদি সিলেটের গুলশানে হামলাকারীদের যথাসময়ে শনাক্ত করা হতো, তাহলে ঢাকায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটত না। কেননা, গুলশান সেন্টারের হামলাকারীরাই ২১ আগস্টের হামলায় অংশ নিয়েছিল। অধ্যাপক জাকির বলেন, ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে যে সকল বোমা, গ্রেনেড জঙ্গি হামলা হয়েছে, এ গুলোর হামলাকারী মদদদাতারা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অতীতে বিএনপি-জামাত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খালেদা-নিজামী-তারেক-হারিছ চৌধুরীরা এ দেশের বুদ্ধিজীবী, জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী, এ দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক শেখ হাসিনাকে হত্যা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে নিশ্চিহ্ন করতে গ্রেনেড হামলা করেছিল। সিলেটের খেটে খাওয়া মানুষের বন্ধু মিসবাহ সিরাজ বলেন, ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা তালতলাস্থ গুলশান সেন্টারে আমিসহ আমার নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার। তাই হামলাকারীদের ধরার চেয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। পরে অবশ্য উন্মোচিত হয় সব। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। মদদদাতা ছিল তারেক-হারিছেরা। হামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীণ প্রচার সম্পাদক ইব্রাহীম আলী নিহত হন। আমি ও আমার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হই। অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বের মানুষকে ইসলামের সুশীতল পথ, শান্তির ধর্ম ও মুসলমানদের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করছে। এই জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কারা, কারা এদেরকে শেল্টার দিচ্ছে, কাদের মদদে এই জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে, সেটা জাতির সামনে এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে সারা বাংলাদেশে ৬৩টি জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিল। ওইদিন সিলেটের জজকোর্ট প্রাঙ্গণ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নয়াসড়ক, নাইওরপুল, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ ও মেন্দিবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে ওরসে মাজারভক্ত মানুষের ওপর বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় ৭ জন নিহত হন। অনেকে আহত হন। জগলু চেৌধুরী বলেন, ২০০৪ সালের ২১ মে হযরত শাহজালাল (রহ) মাজারে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড মামলা হয়। এ হামলায় পুলিশসহ ২ জন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন আহত হন। ২০০৪ সালের ২১ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের ওপর দিরাই এর জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আব্দুল ওয়াহিদ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন, উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত হন।সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ এর সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সৈয়দা জেবুন্নেছা হকের বাসভবনে অনুষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে জঙ্গিগোষ্ঠী গ্রেনেড হামলা চালায়। সেখানে জেবুন্নেছা হকসহ মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত হন। তাদের অনেকই এখনও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ এর -সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি-জামাতের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে জনসভা চলা অবস্থায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালায়। এই হামলায় তিনি নিহত হন। তাঁর সঙ্গে আরও নিহত হন ৫ জন আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ গুরুতর আহত হন। মিসবাহ সিরাজ বলেন, পরবর্তী সময়ে আমার বাসার সামনে বোমা হামলা, জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনের বাসায় বোমা হামলা হয়। এছাড়া, সিলেট বিভাগের সিনেমা হল, মাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলা হয়েছে। সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ এর সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ১২ আগস্ট সিলেটে এসে হতাহতদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এই জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা সিলেট থেকে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে সিলেটের গ্রেনেড হামলার নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। ঠিক সেই সময়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। খালেদা-নিজামী-তারেক-হারিছ চৌধুরীর মদদে ওই হামলা হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড মামলার হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও অন্যান্য জঙ্গিদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে খালেদা-নিজামী-তারেক-হারিছ চৌধুরী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। মিসবাহ সিরাজ বলেন, একের পর এক হামলা হয়েছে দেশের বিচারক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, পুরোহিত, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক-কলামিস্টসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর। এসব হামলায় নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মামলা গুলোর নথিপত্র দেখলে দেখা যায় যে, ঘটনাগুলোর প্রাথমিক তদন্ত কী নির্লজ্জভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আশার কথা, এ সবই এখন সুদূর অতীত। সিলেটবাসীকে উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক জাকির বলেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহবান জানাই, সিলেট বিভাগকে সন্ত্রাস ও জঙ্গি মুক্ত রাখতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, এই আগস্ট মাস শোকের মাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নিশ্চিহ্ন করতে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেই ঘটনার আরেক পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আমি মনে করি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে সিলেটে ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলাকারী শনাক্ত না হওয়ায়। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ৭ আগষ্ট গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগের নেতারা হলেন- অ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, মো. এনামুল হক (মরহুম), অ্যাড. মফুর আলী, তুহিন কুমার দাশ মিকন, অ্যাড. রাজ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, অধ্যাপক জাকির হোসেন, এটিএম হাসান জেবুল, রাধিকা রঞ্জন হোম চৌধুরী, ফাহিম আনোয়ার চৌধুরী, তপন মিত্র, অ্যাড. শেখ মকলু মিয়া, কবির উদ্দিন আহমদ, জুবের খান, আনোয়ার হোসেন রানা, জামাল আহমদ চৌধুরী, প্রদীপ পুরকায়স্থ, আজম খান, আবদুস সোবহান প্রমুখ।