বঙ্গবন্ধুর অাদর্শে নির্মানই হোক এবারের শোক দিবসের দৃপ্ত শপথ

প্রকাশিত: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২১

বঙ্গবন্ধুর অাদর্শে নির্মানই হোক এবারের শোক দিবসের দৃপ্ত শপথ

মুক্তাদির আহমদ মুক্তা

বাঙালির জন্য আজকের দিনটি শোকের। একই সঙ্গে হারানোরও। বিশ্ব মানবতার জন্যও আজকের দিনটি কলঙ্কের। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানোর দিন আজ।
শুধু বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নয়, দুনিয়াজুড়ে বিবেকবান মানুষের কাছে ভয়ংকর বিষাদের এক দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে। ইতিহাসের ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা কলঙ্কিত করে বাঙালি জাতিকে। তবে খুনিদের অনেকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতি কিছুটা হলেও কালিমামুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা ঘৃণিত খুনিরা আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়।
ওই কালরাতেই বিপথগামী সেনাসদস্যদের আরেকটি দল বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে। এ ছাড়া হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাঁকে ও তাঁর কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকে। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। এমনকি খুনিদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচার শুরু হয়। একই সঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। এই দিনে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ সালের জুনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে যেতে পারেনি। এরপর ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করার উদ্যোগ নেয়। আদালতের রায় অনুসারে, ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তখন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন ছয়জন। সর্বশেষ গত বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে। ওই এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ রাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। এখন পলাতক আছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি।
বঙ্গবন্ধুসহ পচাত্তরের ১৫ অাগষ্টের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী ও সুবিধাভোগীদের জাতির সামনে চিহ্নিত করাই হবে ইতিহাসের দায়মুক্তি। এ লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে এই কলংকজন নিষ্ঠুরতার নেপথ্যের নায়কদের চিহ্নিত করাই হোক শোক দিবস পালনের অঙ্গিকার। শোক কে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশকে নবজাগরণের প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধুর অাদর্শে নির্মানই হোক এবারের শোক দিবসের দৃপ্ত শপথ। ভয়াবহ অাগষ্ট ট্র্যাজেডির সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। শহীদ স্মৃতি অমর হোক।

 

 

 

লেখক : মুক্তাদির আহমদ মুক্তা বিটিভির সিলেট প্রতিনিধি ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ