সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২১

সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট জেলা নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের পথ ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন ইউনিটের শতাধিক নেতাকর্মী একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর মিরাবাজারে একটি হল রুমে প্রেস ব্রিফিং করে তারা পদত্যাগ করেন।

পদত্যাগকারীদের মধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শাখার স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছেন।

প্রেস ব্রিফিং-এ লিখিত বক্তব্য পাঠ কানে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বিলাল।

তিনি বলেন, একযুগ ধরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখে জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তাদেরকে বাদ দিয়ে নিস্ক্রিয় ও অযোগ্য এমনকি কমিটিতে ব্যাংক কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি হাস্যকর কমিটি উপহার দেওয়া হয়েছে। রাজপথের পরিক্ষিত পরিশ্রমী নেতা মওদুদুল হক মওদুদ সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহবায়ককে নতুন ঘোষিত কমিটির ৩১নং সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের দুই বারের কাউন্সিল আব্দুর রকিব তুহিনকে ৩৮নং সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলালকে সদস্য, সদর উপজেলার আহবায়ক শাহিদুল ইসলাম কাদিরকে সদস্য ও আলতাফ হোসেন বিলালকে ৬১নং সদস্য রেখে অপমান অপদস্ত করা হয়েছে।

পদত্যাগী নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আলতাফ হোসেন আরও বলেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি (সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও সিলেট জেলার সাবেক আহবায়ক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বে সিলেটের রাজপথের আলোচিত আন্দোলনের মধ্যে এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজের দীর্ঘ আন্দোলন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে ৯৩দিনের অবরোধের কঠিন কর্মসূচী, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত আন্দোলন, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট হযরত শাহজালাল (রঃ) জিয়ারত আগমনে বাঁধাগ্রস্থ যুবলীগ-ছাত্রলীগকে প্রতিহত করে নেত্রীকে স্ব-সম্মানে সার্কিট হাউজে পৌঁছানো। ৮ ফেব্রুয়ারি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল, মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন ধারাবাহিক কর্মসূচীগুলো এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন সময় অপপ্রচার, হুলিয়া ও সাজানো রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকায় উপজেলা ও পৌরসভার আন্দোলনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরের সকল কর্মসূচিতে নিজেদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ ত্যাগ ও পরিশ্রম করেছি এবং অর্ধ শতাধিক মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। আজ কমিটি ঘোষণায় রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম-পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের একফোটা ঘামের মূল্যই রাখেনি আমাদের এই প্রিয় সংগঠনটি।

আলতাফ হোসেন আরও বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের ন্যায় ইনসাফ থেকে বঞ্চিত ও অপমান অপদস্থ করার কারনে আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক ও শিক্ষাগুরু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ১৮ আগষ্ট পদত্যাগসহ ৩৬ বছরের দীর্ঘ রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। সিলেট বিএনপি প্রতিষ্ঠায় এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান পারিবারিক অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, সীমাহীন প্রতিকুলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সোনালী সময় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলে ব্যয় করেছি। আমরা যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন বাজী রেখেছি, রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছি, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছি আজ আমাদের প্রিয় সংগঠন আমাদের তামাশায় রুপান্তরিত করেছে। আমাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়া আলোচিত সংগঠন সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দল। আজ সংগঠনটি নিস্ক্রিয় ও অযোগ্যদের হাতে নিমজ্জিত। আমরা যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি নিস্ক্রিয় ও অযোগ্যদের নেতৃত্বে কাজ আমাদের করা অপমান ও লজ্জাজনক। তাই আমরা স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।

প্রেস ব্রিফিং-এ সিলেট জেলার ১৪টি উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২০ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট জেলা নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান পদত্যাগ করেন। সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাদের মূল্যায়ন না করা, ত্যাগী নেতাদের অপমান ও অপদস্থ করার অভিযোগ তুলে ওই দিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় দলের হাইকমান্ডকে তুলাধোনা করেন শামসুজ্জামান। পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন জামান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ