আমলা লীগ জয় বাংলা আমলাতন্ত্র জিন্দাবাদ

প্রকাশিত: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২১

আমলা লীগ জয় বাংলা আমলাতন্ত্র জিন্দাবাদ

নঈম নিজাম

 

এক সচিবের মা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালে ডিউটি করলেন। তাদের কাজ ছিল প্রতিদিন সচিবের মায়ের চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করা এবং কী কাজ করলেন তা সচিবের পিএসকে জানানো। ঘটনা জানাজানির পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেছেন, এমন নির্দেশ জারি হয়নি মন্ত্রণালয় থেকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমনিতে যেতেন দেখতে। সাংবাদিকরা হাসপাতালে সরেজমিন প্রত্যক্ষ করে মন্ত্রণালয়ের লোকজনকে পেয়েছেন ডিউটি করতে। বড় অদ্ভুত একটা সমাজে বাস করছি। চারদিকে শুধু ক্ষমতাবান মানুষ দেখি। সীমাহীন দাপট দেখি। অনেক রাজনীতিবিদের দীর্ঘশ্বাস শুনি। আমলা লীগ স্লোগান শুনি। একদা জিন্দাবাদ শুনতাম তাদের মুখে। মাঠপর্যায় থেকে সচিবালয়ে একটা আমলা যুগ চলছে। ক্ষমতা কাকে বলে, কত প্রকার দেখিয়ে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক সরকারকে মাঝেমধ্যে জিম্মি মনে হয়। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। রাজনৈতিক সরকার চলবে নির্বাচনের সময় দেওয়া অঙ্গীকার অনুযায়ী। সামনে থাকবে ভোটের ইশতেহার। ক্ষমতা পাওয়া রাজনীতিবিদরা নির্দেশ দেবেন, আমলারা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবেন। এটাই নিয়ম। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সবকিছুর গাইডেন্স আছে। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছেটা কী? গত তিন বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। আমলারা সীমাহীন দাপুটে হয়েছেন। নিজেরাই সুযোগ-সন্ধানীর মতো স্লোগান ও মিছিল করছেন। রাজনীতিবিদের তোয়াক্কা করছেন না। ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়ছেন কারণে-অকারণে। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এভাবে সরকারকে সহায়তা করা হয় না। আনুগত্যও সঠিকভাবে প্রকাশিত হয় না। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নই আনুগত্যের সঠিক প্রকাশ।

সব আমলেই আমলারা ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেন। শক্তিশালী, ব্যক্তিত্ববান মন্ত্রী-এমপির সামনে অবশ্য তা পারেন না। রাজনীতিবিদের দুর্বলতা দেখলেই পেয়ে বসেন সবাই। এরশাদের জি সেভেনের কথা শুনতাম। বিএনপির ’৯১ আমলেও ক্ষমতাবান অনেক আমলার নামডাক ছিল। আর এখন তো কথাই নেই। ক্ষমতা দেখানো সচিবালয় থেকে মাঠে চলে গেছে। নিক্সন চৌধুরী লড়াই করতেন কাজী জাফরুল্লাহর মতো দাপুটে নেতার সঙ্গে। একটা ভাব ছিল। কিন্তু একজন ইউএনওর সঙ্গে লড়তে গিয়ে বিপাকে পড়লেন। সেদিন একজন এমপি দুঃখ করে বললেন, ‘আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। গাইবান্ধার এমপি লিটন গুলি খেয়ে মরলেন। কোনো এমপি কিন্তু সরকারি নিরাপত্তারক্ষী পাননি। অথচ একজন ইউএনওর বাসায় ডাকাতির পর সারা দেশের সব কর্মকর্তা নিরাপত্তায় আনসার পেলেন। একবারও তদন্ত হলো না ডাকাতি হওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা কীভাবে এলো ইউএনওর বাসায়। এ টাকার উৎসের সন্ধানে তদন্ত হয়নি।’ এমপি সাহেবদের দুঃখটা বুঝি। বরিশালের ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের বিবৃতি দেখে বিস্মিত, হতাশ হয়েছি। এটা কোন ধরনের ভাষা রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে? এভাবে বিবৃতি দিয়ে ‘দুর্বৃত্ত’ বলার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলাম না! রাজনীতিবিদরা আজকাল অনেক সহনশীল। খুব ভালো!
বরিশালের ঘটনা মোটেও ভালো বার্তা দিল না। ব্যক্তিগতভাবে বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে জানি না। একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠলেও ’৯৬ সালের সরকারের মেয়াদে তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনেক কথা শুনতাম। সরকারের এই মেয়াদে তাকে দেখলাম মেয়র হিসেবে। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কতটা ভালো-মন্দ তার মূল্যায়ন বরিশালবাসী করবেন। রাজনীতিবিদদের একটা জবাবদিহি থাকে জনগণের কাছে। আমলাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা যা খুশি বলতে পারেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ অধিকার নিজেরাই বেশি প্রকাশ করছেন। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী না হলে এমনই হয়। বরিশালের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখেছিলাম। মেয়রের দোষটা কোথায় বুঝলাম না। একটি শহরে রাজনৈতিক পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন খোলা ও লাগানোর দায়িত্ব রাজনৈতিক কর্মীদের। আর এর মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কার্যক্রম থাকলে দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। বরিশালের মেয়র শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যানার, ফেস্টুন খোলার অধিকার রাখেন। এ নিয়ে লঙ্কাকান্ড বাধানো, গুলি, হামলা অবশ্যই প্রশ্ন তৈরি করে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হলেন, তারপর কিছু ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ইউএনওর পক্ষ নিলেন সামাজিক মাধ্যমে। একজনের কাছে জানতে চাইলাম, কী ব্যাপার? জবাবে বললেন, ইউএনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বুঝলাম সমস্যা এখানেই। পেশাদারি থাকলে সে রাতে এত সমস্যা তৈরি হতো না।

রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে একদল অতি উৎসাহী কর্মকর্তা বেড়ে ওঠেন। তারা স্লোগান দেন, মিছিল করেন। আওয়ামী লীগ আমলে স্লোগান আসে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে আমলাকুল তাদের হয়ে যান। আবার ক্ষমতাচ্যুতির পর সেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা নিখুঁতভাবে সাজিয়ে দেন। কারাগার নিশ্চিত করেন। রাজনীতিবিদরা জেলে যান। আমলারা অবসরের পর বিদেশে গিয়ে বিলাসী জীবন কাটান। দেশে থাকলেও আরাম-আয়েশের শেষ নেই। অনেকে আবার রাজনীতিতে জড়িয়ে মন্ত্রী-এমপি হন। কেউ নেন রাজনৈতিক নিয়োগ দেশে-বিদেশে। তিল তিল শ্রম, মেধা, ঘাম ঝরিয়ে, হামলা-মামলা, জেল-জুলুমের বিনিময়ে রাজনৈতিক কর্মীরা দলকে ক্ষমতায় আনেন। আর ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক কর্মীদের দোষের শেষ থাকে না। বিরোধী দলে থাকতে তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকে। পুলিশের খাতায় এ কারণে তারা আসামি। আর আমলারা থাকেন ধোয়া তুলসীপাতা। তারা রাজনীতিবিদদের ভুলটাই ধরেন। আচ্ছা, একটি সরকারি অফিসের কথা বলুন যেখানে ঘুষ ছাড়া কাজ হয়? একজন এমপি বা জনপ্রতিনিধির বাড়িতে কাকভোর থেকেই মানুষের ঢল দেখা যায়। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কাজ নিয়ে ছুটে যান। জনপ্রতিনিধিকে মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনতে হয়। ব্যবস্থা নিতে হয়। তার পরও তাদের নানামুখী দোষারোপে পড়তে হয়। আর ব্রিটিশরা নিজেদের শাসনের সুবিধার্থে আমলাতন্ত্র তৈরি করেছিল। খোদ ব্রিটেনে এ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর নেই। সবকিছু ভর করেছে আমাদের ওপর।

সাবেক সচিব ইব্রাহিম হোসেন খানের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি অফিসার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস ছিলেন। তাকে বললাম বরিশালের ঘটনা ঘিরে আপনার সার্ভিসের বিবৃতিটি কীভাবে দেখেন? জবাবে বললেন, বিস্মিত হয়েছি। এভাবে রাজনীতিবিদদের খাটো করার অধিকার কোনো সার্ভিসের নেই। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশন কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নয়। যখন যা খুশি বিবৃতি প্রদান এ সার্ভিসের কাজ নয়। তিনি দুঃখ করে বলেন, অতি উৎসাহীরা সর্বনাশ বেশি করে। সরকারের আপন সেজে অনেক সময় কেউ কেউ সরকারের বারোটা বাজায়। প্রশাসন সার্ভিসেও এখন তা-ই চলছে। একই ধরনের অভিমত প্রশাসন ক্যাডারের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের। তিনি বললেন, রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে বিবৃতি প্রদান ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও দুঃখজনক।

প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে এ সরকারের ভুল বোঝাবুঝি বরিশালেরটাই প্রথম নয়। এর আগে এমপি নিক্সন চৌধুরীর ঘটনাসহ আরও বেশ কিছু কাহিনি বিভিন্ন সময় প্রত্যক্ষ করেছি। এভাবে অতীতে এত অ্যাকশন, রি-অ্যাকশন দেখিনি। আজকাল প্রশাসন থেকে সহনশীলতা শব্দ উঠে যাচ্ছে। ক্ষমতার ইগোতে ভুগছেন সবাই। জনপ্রতিনিধিরা এখন মাঠপর্যায়ে কথা বলতে ভয় পান। কোনটির কী অ্যাকশন কর্মকর্তারা কীভাবে নেন এ নিয়ে তাদের মধ্যে দোটানা কাজ করছে। এ দোটানা মনোভাবই আগামীতে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ক্ষমতাসীন দলকে। ভোট নিয়ে প্রশাসন মনে করে, জনগণ নয়, তারাই জয়ের নায়ক। জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব না দিলেও চলে। একবারও তারা বুঝতে চাইছেন না, ২০১৪ আর ২০১৮ এক ছিল না। ২০১৮ সাল সবকিছু আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাঠ ছিল আওয়ামী লীগ কর্মীদের দখলে। আর আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল। এ দলের সঙ্গে কিছু পরিবার, ব্যক্তি অঞ্চলভিত্তিক স্বকীয় অবস্থান নিয়ে কাজ করেন। এ দলের জন্ম ক্ষমতার চেয়ারে হয়নি। জনগণের দল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ শব্দটি অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। সে ইতিহাস ভুলে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দূরত্ব ও বিবাদ বাড়ানো আগামী দিনে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

এবার ভিন্ন একটা গল্প শোনাই। ইউটিউবে সৌরভ গাঙ্গুলীর একটি বক্তব্য শুনছিলাম। আইপিএলের তখন প্রথম মৌসুম। রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরুর সঙ্গে খেলা কলকাতা নাইট রাইডার্সের। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ। নাইট রাইডার্স ড্রেসিং রুম জমজমাট বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানকে ঘিরে। ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী ও পাকিস্তানের বিখ্যাত ক্রিকেটার শোয়েব আখতারসহ অন্য খেলোয়াড়রাও। কলকাতার হয়ে খেলছেন শোয়েব। সৌরভ খেয়াল করলেন শাহরুখকে দেখলেই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন শোয়েব। মনে হয় দেবদূতকে দেখছেন। সৌরভ প্রশ্ন করলেন কেন এভাবে এত বিস্ময় নিয়ে শাহরুখকে দেখেন শোয়েব। আরও বললেন, ‘ভগবানের মতো শাহরুখের দিকে তাকিয়ে থাক। আমার দিকে তো তাকাও না।’ শোয়েব হাসলেন। তারপর বললেন, ‘পাকিস্তানে শাহরুখের জনপ্রিয়তা বিশাল। পাকিস্তানের মানুষ তাকে কী পরিমাণ ভালোবাসে চিন্তাও করতে পারবে না তুমি। চিন্তা করি এই মানুষটি কী করে এ বিশালত্ব তৈরি করেছেন।’ সৌরভ বললেন, ‘শাহরুখ পাকিস্তান কেন ভারতেও বিশাল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সবাই এখানে তাকে আরও বেশি ভালোবাসে।’ দুজনের কথা শুনছিলেন শাহরুখ খান। তিনি তাদের কথা শুনে হাসলেন। সৌরভ এবার শাহরুখকে বললেন, ‘আমরা ১১ জনের টিম নিয়ে খেলে নিজেদের প্রকাশ ঘটাই। টিম পারফরম্যান্স ১১ জনের। তার পরও নির্বাচকদের ওপর পরের খেলার ভাগ্য নির্ভরশীল। নির্বাচকের পছন্দ না হলেই ক্যারিয়ার শেষ। কেউ বুঝতে চান না ১১ জনের টিমে একার করার কিছু নেই। শাহরুখের কোনো টিমের ব্যাপার নেই। একাই এক শ। দর্শক মুগ্ধ হয় একজনের ওপরই। ছবি হিট হয়ে যায় একজনের অভিনয়ে। ১১ জনের টিমওয়ার্কের প্রয়োজন নেই। একজন শাহরুখ খানের নামই যথেষ্ট।’

সৌরভের কথা শুনে হাসলেন শাহরুখ। বললেন, ‘ভাইরে! একদিনে হুট করে আমার জীবনে কোনো কিছু আসেনি। যখন মুম্বাই আসি অনেক কষ্ট করেছি। হৃত্বিক রোশানের মতো সেরা ড্যান্সার, সালমানের মতো হ্যান্ডসাম, বলিষ্ঠ ট্যালেন্টেড ছিলাম না। দেখতেও তেমন কিছু না। আবার চলচ্চিত্রে কাপুর পরিবার থেকে আসিনি। থাকার জায়গা ছিল না মুম্বাই শহরে। এক রুমের একটি বাসায় বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করে থাকতাম। মাঝেমধ্যে বান্দ্রার সৈকতের পাশে লোহার বেঞ্চিতে শুয়ে-বসে সময় কাটাতাম। ভাবতাম সমুদ্রের তীরের এ বাড়িটি যদি আমার হতো! এখন সেই বাড়িটির মালিক আমি। সেই বাড়ির মালিক হতে হয়েছে কঠিন শ্রম-মেধা-ঘামের বিনিময়ে।’ বিভিন্ন খেলোয়াড় এবার প্রশ্ন করেন, তুমি কী করে সফল হলে আরও বিস্তারিত বল। জবাবে শাহরুখ বললেন, ‘প্রতি সকালে ঘুম ভাঙলে আয়নার সামনে দাঁড়াতাম। বুঝতাম অনেক বড় নায়কের মতো চেহারা আমার নেই। নিজের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করতাম, আমার যা আছে তা নিয়েই সফল হতে চাই। আমার যতটুকু আছে ততটুকু নিয়েই নিরলসভাবে কাজ করে যেতে চাই। সারা দিন কাজ করতাম। একাগ্রতা, হতাশাকে ঠাঁই না দিয়ে লেগে থাকা, কঠিন শ্রম, কষ্ট আর চেষ্টাই আমাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। ডেডিকেশন ছাড়া কিছু জয় সম্ভব নয়।’

সৌরভ গাঙ্গুলীকে একবার একজন প্রশ্ন করেছিলেন- শচীনের মতো বিশ্বখ্যাত তারকার সঙ্গে খেলতে অসুবিধা হতো কি তোমার? জবাবে বললেন, ‘আড়াই শ-তিন শ ম্যাচে একসঙ্গে খেলেছি। আমি ব্যাট করার সময় বিপরীত দিকে থাকা তারকার দিকে তাকাতাম না। আমি খেলতাম আমার মতো। বিপরীতে কে আছেন ভাবতাম না। চিন্তা করতাম আমার সেরাটা দিতে হবে। ক্রিকেট ১১ জনের খেলা। এখানে ১১ জনকে পারফরম্যান্স করতে হয়। শচীন সাত শ ম্যাচ খেলেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন শত ম্যাচে মাত্র। সেঞ্চুরি সব ম্যাচে করা যায় না।’ সৌরভ ঠিকই বলেছেন। জীবনের উত্থান-পতন আছে। আজকের সাফল্য কাল না-ও থাকতে পারে। কবি নজরুলও বলেছেন, চিরদিন সমান যায় না। আজকের এই দিন কাল হারিয়ে যেতে পারে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অবস্থান ২০২৩ সালের পরিবেশ-পরিস্থিতি হিসাব-নিকাশ এক করে মেলানো যায় না। আর যে কোনো কাজে টিমওয়ার্কে ভাঙন ধরলে সর্বনাশ হয়ে যায়; যা ঠেকানো যায় না। বাস্তবতা সব সময় কঠিন।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ