হবিগঞ্জে ১০ বছরে চাষাবাদ বেড়েছে ৩১.৬১ শতাংশ জমিতে

প্রকাশিত: ৩:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২১

হবিগঞ্জে ১০ বছরে চাষাবাদ বেড়েছে ৩১.৬১ শতাংশ জমিতে

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ::   হবিগঞ্জে বিভিন্ন কারণে গত ১০ বছরে আশংকাজনক হারে কমেছে কৃষি জমির পরিমাণ। তবে পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আসায় বেড়েছে কৃষির আবাদ। সেই সাথে নতুন নতুন ফসলের চাষাবাদ বেড়েছে জেলায়। শুধু দেশী ফসল নয়, বিভিন্ন ধরণের বিদেশী ফসল চাষেও এগিয়ে যাচ্ছে জেলাটি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গেল ১০ বছরে হবিগঞ্জে ৩১.৬১ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫০.৩৮ শতাংশ অনাবাদি জমি এসছে আবাদের আওতায়। এছাড়া আলো ছড়িয়েছে তেল ফসল উৎপাদন।

২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় ধানের আবাদ হয় ২ লাখ ৭ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গেল ১০ বছরে ধানের আবাদ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। এই ১০ বছরে ২২.১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ধানের আবাদ।
হবিগঞ্জে বোরো, আউশ এবং আমনের চাষাবাদ হয়। সেই হিসেবে ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি আবাদ বেড়েছে আউশের। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় আউশের মোট আবাদ হয় ৩১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৫২ হাজার ৫০০ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে আউশের আবাদ বেড়েছে ২১ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ৬৭.৫১ শতাংশ।

অন্যদিকে বোরোর আবাদ বেড়েছে ১২.৪৪ শতাংশ। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বোরোর মোট আবাদ হয় ১ লাখ ৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার ১৩০ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে রোবোর আবাদ বেড়েছে ১৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে।

হবিগঞ্জে দ্বিতীয় ধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় আমনের। ১০ বছরে জেলায় আমনের আবাদ বেড়েছে ১৬.৬৩ শতাংশ জমিতে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় আমনের মোট আবাদ হয় ৬৭ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৭৯ হাজার ১৫০ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে আমনের আবাদ বেড়েছে ১১ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে।

রবি মৌসুমে বিভিন্ন দেশী-বিদেশী শাক সবজির আবাদও বেড়েছে জেলায়। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় শাক সবজি চাষ হয় মোট ৭ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ২৪ হাজার ৩শ’ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে জেলায় বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির আবাদ বেড়েছে ১৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২১১.৫৩ শতাংশ।
তেল ফসল হিসেবে এক সময় হবিগঞ্জে শুধুমাত্র সরিষা চাষ হতো। কিন্তু গেল দুই বছর ধরে সরিষার পাশাপাশি বেড়েছে সূর্যমুখি চাষও। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় তেল ফসলের আবাদ হয় ১ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৪ হাজার ২শ’ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে তেল ফসল আবাদ বেড়েছে ৩ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২৮৯.১০ শতাংশ।

এর মধ্যে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে সরিষার চাষ হয় ১ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাড়ায় ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টরে। অর্থাৎ ১০ বছরে তেল ফসল আবাদ বেড়েছে ২ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২১.৭৫ শতাংশ।

২০২০ সালের আগে জেলায় সূর্যমুখি ও ভুট্টার চাষ হয়নি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ দুটি ফসলের চাষ শুরু হয়। এর মধ্যে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে ৭শ’ হেক্টর জমিতে এবং ভুট্টার চাষ হয়েছে ৫শ’ হেক্টর জমিতে। আগামীতে এ দুটি ফসলের চাষ আরও কয়েকগুণ বাড়ানোর আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলায় ১০ বছরে অনাবাদি জমির সংখ্যা কমেছে ২৪ হাজার ১৫ হেক্টর। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জেলায় অনাবাদি জমি ছিল ৪৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা কমে এসেছে ২৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে অনাবাদি জমি কমেছে ৫০.৩৮ শতাংশ।

বেড়েছে ফসলের উৎপাদন
গেল ১০ বছরে জেলায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৫২ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ধানের উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৪৯ মেট্রকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাড়ায় ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৪০১ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ৩২.৩৭ শতাংশ।

এর মধ্যে বোরোর উৎপাদন বেড়েছে ৯৭ হাজার ৪০৮ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বোরো ধানের উৎপাদন হয় ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪০৭ মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাড়ায় ৫ লাখ ১৪ হাজার ৮১৫ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২৩.৩৪ শতাংশ।

আউশের উৎপাদন বেড়েছে ৬৮ হাজার ২৯ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৭৭ হাজার ১২২ মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাড়ায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৬ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ৮৮.৫৩ শতাংশ।

আমনের উৎপাদন বেড়েছে ৪৮ হাজার ১৭০ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ২০ মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২৯.০১ শতাংশ।

রবি মৌসুমে বিভিন্ন শাক-সবজির উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ১শ’ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭শ’ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ২৩৩.৫৯ শতাংশ।

তেল ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ৪ হাজার ৫৪৫ মেট্রিকটন। ২০০৯-২০১০ সালে উৎপাদন হয় ১ হাজার ৫৫ মেট্রিকটন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাড়ায় ৫ হাজার ৬শ’ মেট্রিকটন। বৃদ্ধির পরিসংখ্যান ৪৩০.৮১ শতাংশ।

ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৪ হাজার ৪শ’ মেট্রিকটন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যা ছিল শুন্যের কোটায়।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘জেলায় এখনও অনেক জমি পতিত রয়েছে। তাছাড়া অনেক টিলাতেও বিভিন্ন ধরণের দেশী-বিদেশী ফলের চাষ করা সম্ভব। এসব জমি আবাদের আওতায় আনতে পারলে জেলায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বেকার যুবকদের অনুরোধ করব, শুধু চাকরির আশায় না ঘুরে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। তাহলে নিজের, পরিবারের ও দেশের জন্য সফলতা আনতে পারবেন।’