সেই বিএনপি এখন…

প্রকাশিত: ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১

সেই বিএনপি এখন…

মেজর (অব.) আখতার

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। ভোর না হতেই বাংলাদেশের জনগণের মাথায় প্রচন্ডতম একটি বজ্রপাত হবে তা এ দেশের মানুষ ভুলেও কল্পনা করেনি। মানুষের মনে দুঃখ ছিল, বেদনা ছিল, হয়তো না পাওয়ার অনেক অভিমানও ছিল। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার আগেই আচমকা অপ্রত্যাশিত খবর শুনে মানুষ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। এগুলো শুনেছি আমার মায়ের কাছ থেকে। তিনি তখন গুলশানে আমার ছোট ভাইয়ের বাসায় থাকতেন। আমার স্ত্রী বড় ছেলে নিয়ে রায়েরবাজারে থাকতেন। আমি তখন ভারতের সেনাবাহিনীর স্কুল অব সিগন্যালসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। পরে ঢাকায় এসে সবকিছু জানতে পারলাম। প্রশিক্ষণ শেষে অক্টোবরে আমার পোস্টিং হয় মিরপুর সেনানিবাসে। সেখানে রক্ষীবাহিনীর জন্য বিশাল এলাকা নিয়ে একটি ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল যা বর্তমানে মিরপুর সেনানিবাস হিসেবে পরিচিত। মিরপুর রক্ষীবাহিনীর ঘাঁটিতে চারটি ব্যাটালিয়ন ছিল যার একটিতে আমাকে বদলি করা হয়। সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে প্রথমে আমার পোস্টিং হয়। পরে আরও কয়েকজন আমার সিনিয়র অফিসারকেও বদলি করা হয়। রক্ষীবাহিনীর চারটি ব্যাটালিয়নের মোট জনশক্তি ছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ ব্রিগেডের প্রায় দ্বিগুণ। চারটি ব্যাটালিয়নে গোলাবারুদ, অস্ত্র, যানবাহনও কম ছিল না। এ ব্যাটালিয়নগুলোকে পরে একটি পদাতিক, একটি ইঞ্জিনিয়ার, একটি আর্টিলারি ও একটি সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে রূপান্তরিত করে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংগতভাবেই সিগন্যাল ব্যাটালিয়নে আমার পোস্টিং হয়েছিল। আমার চাকরির বয়স তখন পাঁচ বছর এবং সেনাবাহিনীর তিনটি ব্যাটালিয়নসহ সেনা সদরে সামরিক শাখায় চাকরি করেছি। রক্ষীবাহিনীতে যাওয়ার পরে আমার যে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা হলো, রক্ষীবাহিনী তৎকালীন সেনাবাহিনীর মতোই চৌকশ, সুশৃঙ্খল, অনুগত ও দেশপ্রেমিক। তাই এখনো মাঝে মধ্যে ভাবী এত শক্তিশালী রক্ষীবাহিনী থাকার পরও কেন ১৫ আগস্ট সবাই নীরব ছিল!! আমার আম্মা এ প্রশ্নের জবাবে সব সময় বলতেন, তখন নেতার সঙ্গে দেশবাসীর একাংশের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। আম্মা রাজনীতি করেন না কিন্তু তাঁর দুই ছেলে নির্বাচন করে জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য কাজেই রাজনীতি তাঁর মজ্জাগত। তা ছাড়া তিনি কলকাতায় লেখাপড়া করেছিলেন। তাই জনগণের হৃদয় স্পন্দন যে বোঝেন তাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা আমার নেই। আমি সংসদে একবার তৎকালীন স্পিকার শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী সাহেবকে গালমন্দ করেছিলাম। কিন্তু ঘরে ফেরার পর আম্মা ধমক দিয়ে বললেন, কাজটি আমি ঠিক করিনি, তাই স্পিকার সাহেবের কাছে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতে বললেন। আমি তা-ই করেছিলাম, হুমায়ূন রশীদ সাহেব আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন যার সাক্ষী শ্রদ্ধেয় ডা. বি. চৌধুরী এখনো বেঁচে আছেন। এত কথা বলার পেছনে কারণ সত্যিই সেদিন জনগণ তথা আপামর জনসাধারণ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতার প্রতি অভিমান করেছিল। আজকে জনগণের ওপরে তথা আমাদের সবার ওপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের সবার দুঃখ, ক্ষোভ, অভিযোগ থাকতেই পারে। আমরা কেউ-ই সেদিন নেতাকে বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে ৩২ নম্বরে ছুটে যাইনি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সবাই হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সময় তো থেমে থাকেনি। জাতিকে সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। সবাইকে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সামনে এগিয়ে আসতে হয়েছে। সেদিন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল জিয়াও এগিয়ে এসেছিলেন। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ-পড়ুয়া কিশোর শেখ হেলালকে বাঁচানোর জন্য কলেজের প্রিন্সিপালকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জিয়া সেদিন শেখ পরিবারের দুই কন্যাকে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জার্মানিতে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ সাহেবকে অনুরোধ করেছিলেন যা হুমায়ূন রশীদের মুখ থেকে আমার শোনা কথা। তাই জিয়া বসে থাকেননি। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তিনি সংবিধান মোতাবেক উপরাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন এবং অনুগত থাকবেন বলে আনুগত্য জানিয়েছিলেন। যা প্রমাণ করে জিয়া কখনই মোশতাকের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু মোশতাকের বিপক্ষে যেখানে কোনো রাজনৈতিক শক্তি দাঁড়ায়নি সেখানে সেনা উপপ্রধানের কী করার থাকতে পারে? তাই আর সবার মতো তিনিও দেশ শাসনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে মোশতাক সরকারের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেদিন জেনারেল জিয়া নতুন সেনাপ্রধান হলেও কোনো একজন অফিসারকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরাননি। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর সিজিএসের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি ক্যু হলে জেনারেল জিয়া স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীর পদ ছেড়ে গৃহবন্দিত্ব মেনে নেন। কিন্তু সিজিএস সাহেব ক্যু করে সফল হতে না পারায় সেদিন সিপাহি-জনতা জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে মুক্ত করে পুনরায় সেনাপ্রধান বানায়। সেখানে জিয়ার তো কোনো অবদান ছিল না। ৭ নভেম্বরের প্রচন্ডতম অরাজকতা ও গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য জিয়াকে জীবন বাজি রেখে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে দেশের হাল ধরতে হয়েছিল। জিয়ার উত্থানের সঙ্গে ১৫ আগস্টের পতন বা হত্যার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। ৩ নভেম্বর যে সিজিএস ও ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার জিয়াকে গৃহবন্দী করেছিলেন সেই সিজিএস ও ব্রিগেড কমান্ডার ১৫ আগস্টও সিজিএস এবং ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে যদি জিয়া দায়ী হবেন তাহলে উনারা ১৫ আগস্ট কেন জিয়াকে গ্রেফতার করলেন না? সিজিএস মানে চিফ অব দি জেনারেল স্টাফ যার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে সেনা পরিচালনা বা অপারেশন, সেনা গোয়েন্দা, সমরাস্ত্র, গোলাবারুদ যা একমাত্র সিজিএসের হুকুমেই পরিচালিত ও ব্যবহৃত হয়। সেনা উপপ্রধান তো দূরের কথা খোদ সেনাপ্রধানও সিজিএসকে ডিঙিয়ে একজন সৈনিককেও অস্ত্রহাতে ব্যারাক থেকে বের করার ক্ষমতা রাখেন না। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান একটি ক্যু করেছিলেন কিন্তু সিজিএস ও নবম ডিভিশন কমান্ডার সেই ক্যু বানচাল করে সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন জেনারেলকেও গ্রেফতার করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে নবম ডিভিশনের যে দায়িত্ব এবং এলাকার ক্ষমতা ছিল ১৯৭৫ সালে ৪৬ ব্রিগেডের সেই দায়িত্ব ও ক্ষমতা ছিল। ১৫ আগস্ট যদি সিজিএস ও ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার চাইতেন তাহলে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অস্ত্র বা ট্যাংক নিয়ে কেউ বের হতে পারত না; ৩২ নম্বরে গিয়ে হত্যা করা তো অসম্ভব ছিল! কাজে যারাই ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক ও কলঙ্কজনক ঘটনার সঙ্গে জেনারেল জিয়াকে জড়িত করার চেষ্টা করেন তাদের অনুমানে রয়েছে ভ্রান্তি।

জেনারেল জিয়ার উত্থান ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-এর ভোর হওয়ার পর। দেশ, জাতি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌম রক্ষার মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জিয়াকে সেদিন ঘর থেকে বের হতে হয়েছিল। সেই জিয়া আর ঘরে ফিরে যেতে পারেননি। ’৭৫-এর ৭ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩০ মে ১৯৮১ সালের কালরাতে চট্টগ্রাম শহরের সার্কিট হাউসে নিহত হওয়া পর্যন্ত ১ মিনিট সময়ও জিয়া তাঁর পরিবার ও সন্তানদের দিতে পারেননি। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সারা দেশে ছুটে বেড়িয়েছেন। একদিকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করেছেন, সেই সঙ্গে মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। একজন উর্দি পরা সৈনিক প্রতিষ্ঠিত করেছেন জনগণের ভোটাধিকার, হেঁটেছেন গণতন্ত্রের পথে, উন্নয়নের হাইওয়ে তৈরি করে দিয়ে গেছেন, যে হাইওয়েতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে বাংলাদেশ। আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম যা বাংলাদেশের সংবিধানে একটি অনন্য সংযোজন। এখান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ আর আমাদের নেই।
গতকাল ছিল ১ সেপ্টেম্বর। এই দিনে একজন সৈনিক জন্ম দিয়ে গেছেন একটি রাজনৈতিক দল যা আজকে কোটি কোটি মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়া তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফার একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেন। জেনারেল জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তাঁর নেতৃত্বে প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত করা হয়। তখন এ দলের সমন্বয়ক ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে জেনারেল জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। জাগদলকে বিএনপির সঙ্গে একীভূত করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়া এ দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এ দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থি সব ধরনের লোক ছিল। বিএনপির সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধু রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা করান। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সেদিন তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং পরে ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রতি। বিএনপি গঠনের শুরুতে তখন দেশের জনগণ বিভিন্নভাবে বিভক্ত ছিল। এ বিভক্তির ভিত্তি ছিল রাজনৈতিক বিশ্বাস (বাম, ডান, মধ্যপন্থি), মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি ইত্যাদি। এর ফলে ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধজীবী, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সামরিক বাহিনী এমনকি প্রশাসনও বিভক্ত ছিল। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি ছিল এসব বিভেদ ভুলে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জিয়ার সময়ই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর প্রথম দেশে আসেন এবং সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে অখন্ড পাকিস্তানের সমর্থক জামায়াতে ইসলামীও এ সময় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের বহু নেতা যারা মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের বাইরে ছিলেন তারা দেশে আসার অনুমতি লাভ করেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সব দল ও ব্যক্তির জন্য ক্ষমা ঘোষণা করে। তবে যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এ চারটি অভিযোগ থাকবে তারা এ ক্ষমার আওতায় পড়েনি। যদিও এদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬-এর আগে কোনো ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে জেনারেল জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলেন তার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ণ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এগুলোর ভিত্তিতে জিয়া তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তাই বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো-

১। সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা। ২। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। ৩। গণতন্ত্র। ৪। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র।

পররাষ্ট্রনীতিতে জেনারেল জিয়া আমূল পরিবর্তন আনেন যা বিএনপির পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই বিএনপির লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের ভারত-ঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত-সোভিয়েত অক্ষের দিকে চলে যায়, ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্বশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। বিএনপি তার পররাষ্ট্রনীতিতে নিরপেক্ষতা ধারণ করে। বিএনপি মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

আজকে বিএনপি শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়া যে দল রক্ত ও জীবন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই দল দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে গত ৪০ বছর ধরে দেশমাতা খালেদা জিয়া মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন এবং তিনবার সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জয়লাভ করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জনগণের আস্থা, ভালোবাসা নিয়ে দেশ শাসন করেছেন। দেশান্তরিত হয়েও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির যুগান্তকারী চেয়ারপারসন দেশমাতা খালেদা জিয়ার সুযোগ্য সন্তান বিএনপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান বর্তমান সরকারের প্রচন্ড চাপ, বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ, সরকারের জেল-জুলুম, নির্যাতন, গুম-খুনের ভয়াবহ আতঙ্ক নিয়েও বিএনপিকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ও জনগণের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার এক দুর্জয় আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জনগণের বিজয় হবেই হবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ