কমলগঞ্জে মুফতি মাওলানা আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ ॥ তদন্তের দাবী

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২০

কমলগঞ্জে মুফতি মাওলানা আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ ॥ তদন্তের দাবী

স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের লতিফিয়া সিতারা বিবি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার মুফতি মাওলনা আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এই মাওলানা আব্দুল জলিল অস্তিত্ববিহিন “সিতারা বিবি জামে মসজিদ” িেখয়ে সে মসজিদের ইমাম সেজে প্রতারণার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে বরাদ্ধকৃত চেক ফেরত আনেন উপজেলা প্রশাসন। প্রতারণার ঘটনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে এবার তার বিরুদ্ধে লতিফিয়া সিতারা বিবি হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্রীর ৮ম শ্রেণির ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
অভিযোগ করে আদমপুর ইউনিয়নের পূর্ব জালালপুর গ্রামের “বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ” পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, মুফতি নামধারী আব্দুল জলিল কমলগঞ্জ উপজেলার কোন মসজিদের ইমাম নন। তিনি সম্প্রতি প্রতারনা করে “বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ”-এর নাম কেটে সুকৌশলে সিতারা বিবি জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। তিনি সে মসজিদের ইমাম সেজে প্রধানমন্ত্রী অনুদানের ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহন করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সম্মতিক্রমে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গত ৮ জুন একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ফলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিতারা বিবি জামে মসজিদের নামে আসা চেকটি ফেরত আনেন। আব্দুল আজিজ আরো বলেন, পূর্ব জালালপুর গ্রামের “বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ” তালিকাভূক্ত করে আদমপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: হেলাল উদ্দিন ঐ মসজিদের ইমাম মাওলানা ইমাম উদ্দিনকে ৬ জুন উপজেলা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ৫ হাজার টাকা অনুদানের চেক গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান। যথারীতি ইমাম উদ্দিন উপজেলায় অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখেন ইউনিয়ন থেকে প্রেরিত তালিকায় “বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ” এর নাম নেই। অথচ লতিফিয়া সিতারা বিবি মসজিদ নামে অস্তিত্ববিহীন মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। ইমাম এ ঘটনা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে জানালে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হেলাল উদ্দিনের কাছে কৈফিয়ত চান। চেয়ারম্যান কোন সদুত্তর দিতে না পেরে বলেন ২য় ধাপে নাম দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদমপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রিন্টিং ভূলের কারণে “বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ” এর স্থলে সিতারা বিবি জামে মসজিদ লেখা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আমরা চেকটি ফেরত দিয়েছি। বারবার কিভাবে এতবড় ভূল হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন কথা বলতে পারেননি। তিনি বলেন ভূল হয়েছে, আর চেকটিতো মসজিদে দেইনি। ফেরত দিয়েছি। ২য় ধাপে বাদপড়া মসজিদগুলোর নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ুপুরে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিতারা বিবি জামে মসজি নামে কোন মসজিদের অস্তিত্বই নেই। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, লতিফিয়া সিতারা বিবি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার মুফতি মাওলানা আব্দুল জলিল ঐ মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণির ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আফিয়া বেগম (পিতা-আতা মিয়া, মাতা-ছাফারুন বেগম) এর বৃত্তির টাকা আত্মসাত করেন। আফিয়া বেগমের পিতা আতা মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ের ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির টাকা বাবদ ুই বছরে মাত্র ৩ হাজার টাকা মাদ্রাসার সুপার তারেকে প্রদান করেছেন। অথচ তার মেয়েটি ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ঐ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। এলাকাবাসী জানান, মাওলানা আব্দুল জলিল নিজেকে একজন মুফতি াবী করলেও তিনি একজন প্রতারক। তাই এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিরে মাধ্যেমে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লতিফিয়া সিতারা বিবি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার মুফতি মাওলানা আব্দুল জলিল বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহন করিনি। আমি কোনো মসজিদের নাম কাটার ক্ষমতাও আমি রাখিনা, এটা প্রিন্টিং মিসটেক হয়েছে। নিজের মাদ্রাসার ট্যালেন্টপুলে ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আফিয়া বেগমের বৃত্তির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা আব্দুল জলিল বলেন, ঐ শিক্ষার্থীর ৫ সহস্রাধিক বৃত্তির টাকা মাদ্রাসা সভাপতির কাছে জমা রয়েছে। শিক্ষার্থীর অভিভাবককে জানালে তারা মাদ্রাসায় এসে টাকা গ্রহণ করেনি। বাকী টাকাগুলোর বিল করা হয়নি। মেয়েটি আহমদনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। ১০ম শ্রেণিতে উঠার পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আর টাকা উত্তোলন করা হয়নি। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, অভিযোগ পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে চেকগুলো উদ্ধার করেছেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ