সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২১
অনলাইন ডেস্ক :: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাওয়াইর সড়কে জমে আছে স্যুয়ারেজের পানি। ফলে ওই পথে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ছবি: যুগান্তর
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯নং ওয়ার্ডবাসীর (কাওলা, আশকোনা ও গাওয়াইর) স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। দু-একটি রাস্তা ছাড়া অধিকাংশই ভাঙাচোরা। বিভিন্ন রাস্তায় দীর্ঘদিন ধরে স্যুয়ারেজের পানি জমে থাকছে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। বাসা থেকে বের হওয়াই কষ্টকর হয়ে যায়। এ সময় খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে চান না।
জলাবদ্ধতা, সরু রাস্তা, মশা আর যানজটে এলাকার নাগরিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখানকার জনদুর্ভোগ যেন প্রতিদিনের নিয়তি। এলাকাবাসীরা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থাকতেই তারা ভালো ছিলেন। এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে চেপেছে বাড়তি করের বোঝা। কিন্তু কমেছে নাগরিক সুবিধা। এ এলাকায় ভাড়াটিয়ারা থাকতে চান না।
এদিকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। তারা জানান, বাজেট নেই। অথচ জনগণ আমাদের শুধু গালাগাল করে। সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আশপাশের আটটি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যোগ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় কাওলা, আশকোনা ও গাওয়াইর এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে যুক্ত হয়। এলাকাগুলো নিয়ে ৪৯নং ওয়ার্ড গঠন করা হয়। এলাকাবাসী স্বপ্ন দেখেছিলেন-সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ায় নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বাড়বে জীবনযাত্রার মানও। কিন্তু ঘটেছে উলটা।
সরেজমিন ৪৯নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনদুর্ভোগের করুণ চিত্র দেখা গেছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কাওলার মোড়ে যানজট লাগে। এ জট দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। রাস্তাটি তুলনামূলক কিছুটা ভালো হলেও সমস্যা-এটি বেশ সুরু। এ কারণে এখানে দুর্ভোগ যেন প্রতিদিনের নিয়তি। বৃষ্টি না হলেও এখানকার রাস্তা পানিতে ডুবে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ রাস্তা সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে। সেখানে জমে থাকা পানি দেখিয়ে তিনি বলেন, এগুলো বৃষ্টির পানি নয়, স্যুয়ারেজের পানি। এর ময়লা ও দুর্গন্ধ এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। চলাচল করতে গিয়ে মানুষের নানারকম চর্মরোগ হচ্ছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, এতকিছুর পরও তো এলাকা ছেড়ে যেতে পারি না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে মাঝেমধ্যে দেখে যান। ওই শেষ। এরপর আর কোনো পরিবর্তন হয় না।
একই মন্তব্য করেন মুদি দোকানি করিম মিয়াও। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল বলেন, শুধু এ রাস্তাটিই নয়, অধিকাংশ রাস্তারই একই হাল। দক্ষিণ গাওয়াইর রোড এবং আশকোনা বাজারের সামনে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। হাজিক্যাম্প থেকে গাওয়াইর যেতে মানুষজনকে বটতলার পানি মাড়িয়ে যেতে হয়। দক্ষিণখান চেয়ারম্যানবাড়ী রোডে জলাবদ্ধতা আরও প্রকট। হাজিক্যাম্প থেকে হলান পর্যন্ত রাস্তাটি প্রায় ভাঙাচোরা। এছাড়া প্রেমবাগান থেকে কাঁচাবাজার রোড, হাজিক্যাম্প থেকে বিমান কোয়ার্টার পর্যন্ত রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। এখানে এক সপ্তাহ ধরে পানি জমে রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
আশকোনা পশ্চিমপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা হাজি আবদুর গফুর বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে থাকতেই আমরা অনেক ভালো ছিলাম। আগে রাস্তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। তখন ঝাড়ুদাররা নিয়মিত দুই বেলা রাস্তা ঝাড়ু দিত। এখন কিছুই হয় না।
এক চায়ের দোকানে বসে বয়োজ্যেষ্ঠ আবদুর গফুর আরও বলেন, আগে বাড়ির কর ও ব্যবসার লাইসেন্সসহ অন্যসব ক্ষেত্রে কর কম ছিল। কিন্তু এখন সব ক্ষেত্রে কর বেড়েছে। কিন্তু নাগরিক সেবা নেই বললেই চলে। এ এলাকায় ভাড়াটিয়ারাও থাকতে চায় না। আমরা বড় বিপদে আছি। জানি না কী হবে। কাউন্সিলরকে অনেকবার বলেছি। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বলেন, কোনো বাজেট নেই। আমরা এলাকাবাসী অসহায় হয়ে পড়েছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, মশার উৎপাতে এলাকায় টেকা যায় না। এখানে বাধ্য হয়ে আমরা বসবাস করছি। এ ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। কালীবাড়ী রোড ও পেয়ারাবাগান এলাকার জলাবদ্ধতাও কাটছে না।
৪৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম যুগান্তরকে বলেন, আমরা যেন শুধু নাগরিক সনদ দেওয়ার জন্যই আছি! কোনো কিছুর সঙ্গেই আমাদের সম্পৃক্ত করা হয় না। শুনেছি নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়নে ৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। কিন্তু সেখান থেকে চলতি অর্থবছর ছাড় হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। সেই টাকাও কী হয়েছে, আমরা জানি না। গত অর্থবছর আমার ওয়ার্ডের বাজেট ছিল ২ কোটি টাকা। কিন্তু কারা টেন্ডার করেছে, কী কাজ করেছে, কিছুই জানি না। টাকাও পুরোপুরি খরচ করা সম্ভব হয়নি। এ অর্থবছর কোনো বাজেটই আসেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব আমলাদের দখলে চলে গেছে। আমরা শুধু মানুষের গালাগাল খাওয়ার জন্য আছি। গালমন্দ করার জন্য একটা মানুষ তো দরকার, কাউন্সিলর হিসাবে আমি হচ্ছি সেই মানুষ।
১৭নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, আমার বাড়ির চারপাশের রাস্তাগুলোয় স্যুয়ারেজের পানি জমে আছে। এ এলাকায় স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় বাধ্য হয়ে নিজের টাকা খরচ করে কোনো কোনো এলাকার পানি বের করার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু সেসব টেকসই হয়নি। সিটি করপোরেশন থেকে অনেকবার লোক চেয়েছি। কাউকে পাইনি।
তিনি বলেন, মানুষ আমার কাছে আসেন। কিন্তু আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। আমার কিছুই করার নেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে। তারা বাড়ি নির্মাণসামগ্রী বিশেষ করে বালু রাস্তায় ফেলে রাখেন। কিন্তু তারা সেগুলোর কোনো যত্ন নেন না। বালু গিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এলাকার অটোচালক সাইফুল জানান, এলাকায় অটো চালাতে গিয়ে তিনি নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। খানাখন্দে পড়ে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। একই সঙ্গে অটো ঘন ঘন নষ্ট হয়ে যায়। অনেক টাকা গচ্চা দিতে হয়। রাস্তা ভালো থাকলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।
সিলনিউজবিডি ডট কম / এস:এম:শিবা
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি