পাওয়ার! পাওয়ার! ‘তারেক মিশন’ বাস্তবায়নে ব্যারিস্টার সালাম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অতপর… (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

পাওয়ার! পাওয়ার! ‘তারেক মিশন’ বাস্তবায়নে ব্যারিস্টার সালাম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অতপর… (ভিডিও)

অতিথি প্রতিবেদক :

লন্ডনে থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সনের ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ! দেশে তাঁর মিশন বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময় যুক্তরাজ্য থেকে আসেন বিএনপির নেতারা। তারই অংশ হিসেবে তারেক রহমানের ‘মিশন’ বাস্তবায়নে এবার দেশে অবস্থান করছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেই রাজনীতির ময়দানে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মীদের জড়ো করে মিছিল-সভা সমাবেশের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে পুলিশী বাধার মুখে সেসব কর্মসূচি সফল করতে ব্যর্থ হন তিনি।

দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের মামলায় আসামি থাকা এই নেতা দিব্যি পুলিশের সামনে মিছিল-সমাবেশে উপস্থিত হলেও রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেফতার করছেন না পুলিশ। অবশ্য পুলিশ বলছে, মামলার বিষয়টি অজানা থাকায় বিএনপি নেতা সালাম নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে আসতে পেরেছেন! সম্প্রতি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে তাকে পুলিশের সঙ্গে বানানুবাদে জড়াতে দেখা গেছে।

এ বছরের ২২ মার্চ বিএনপির চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ২৫ নেতার নামে সুনামগঞ্জের আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮ ২১, ২৫, ২৯ ও ৩৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন জালালপুরের রায়খাইন গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে মইনুল ইসলাম (৪৭)। মামলা নং-জিআর-৮৭/২১ এবং থানার মামলা নং ২৬, তারিখ-২২/৩/২০২১। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। পরে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে এ বছরের ১৪ জুন মামলাটি সিআইসিতে স্থানান্তর হয়। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে। ওই মামলার এজাহারে ১১ নং আসামি আব্দুস সালাম।

 

 

তিনি ছাড়াও মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (৫৫), যুক্তরাজ্য প্রবাসী দক্ষিণ সুরমার আব্দুল মালিক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মো. কয়সর আহমেদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজারের শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মিসবাহুজ্জামান সুহেল, যুক্তরাজ্য প্রবাসী দক্ষিণ সুরমার কামাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী হবিগঞ্জের রহিম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মৌলভীবাজারের মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনোয়ার হোসেন খোকন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিশ্বনাথের আফজল হোসেন খোকন, লন্ডন প্রবাসী বিশ্বনাথের হাবিবুর রহমান, লন্ডন প্রবাসী মৌলভীবাজারের নাসির আহমেদ শাহিন, কোলচেষ্টার ইউকে’র বাসিন্দা দক্ষিণ সুরমা শাহ আকতার হোসাইন টুটুল, সিলেট বাড়ি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আবুল কালাম আজাদ, লন্ডন প্রবাসী গোলাপগঞ্জের ইকবাল হোসেন, লন্ডন প্রবাসী জগন্নাথপুরের মো. আবুল হোসেন, লন্ডন প্রবাসী একই উপজেলার হেলাল নাসিমুজ্জামান, লন্ডন প্রবাসী সিলেটের তাজবির চৌধুরী শিমুল, লন্ডন প্রবাসী গোলাপগঞ্জের নাসিম আহমদ চৌধুরী, লন্ডন প্রবাসী গোলাপগঞ্জের এমদাদ টিপু, লন্ডন প্রবাসী ডা. মুজিবুর রহমান মুজিব, লন্ডন প্রবাসী ঢাকা রিজেন্সী হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা রিজেন্সী হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির রেজা।

কিন্তু ওই মামলায় অভিযুক্ত থাকার পরও দেশে এসে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সফল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ভয়ে যেখানে মাঠে নামতে পারেন না। সেখানে ব্যারিস্টার এম এ সালাম কিভাবে মামলায় অভিযুক্ত হয়েও রাজপথে নামেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ব্যারিস্টার সালামের মামলার বিষয়টি হয়তো সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা অবহিত নয়। যে কারণে তিনি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাকে কর্মসূচির কোনো অনুমতিও দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই মামলায় ঘটনার স্থান সুনামগঞ্জ সদরের হাসনরাজা জাদুঘরের সম্মুখে দেখানো হয়। ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৯ ও ৩৫ ধারা। মামলার বাদি সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন জালালপুরের রায়খাইন গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে মইনুল ইসলাম (৪৭)।

অভিযোগকারী উল্লেখ করেন তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে দ্বৈত নাগরিক। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে তার ব্যবসা বিদ্যমান। ফলে সুবিধানুযায়ী দুই দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অভিযুক্তরা আইন অমান্যকারী, দেশের সুনাম ক্ষুন্নকারী দেশবিরোধী অপশক্তি।

অভিযোগকারী বিগত ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাংলাদেশে আসেন। ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়াস্থ হাসনরাজা জাদুঘর প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জাদুঘরের সামনে এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে মোবাইল ফোন হতে ইউটিউবের ‘তারেক রহমান’ নামক চ্যানেলে লিঙ্কে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আপলোপকৃত ভিডিওতে দেখতে পান তারেক রহমান তার বাবা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে বক্তব্য প্রদান করেন।

অভিযোগকারী কৌতুহলবশত; অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখতে পান-বিগত ২০১৪ সালে ৩ সেপ্টেম্বর একই চ্যানেল হতে ইউটিউবে আপলোডকৃত ভিডিওতে বেশ কয়েকটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অপমানসূচক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভিডিও বিদ্যমান এবং উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজক ও দর্শক ¯্রােতা হিসেবে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সকলেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিচিত মুখ।

পরবর্তীতে অভিযোগকারী যুক্তরাজ্যে ফিরে গিয়ে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও অনুসন্ধানে দেখতে পারেন- অভিযোগে উল্লেখিত ২৫ আসামিসহ আরো অজ্ঞাতরা পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে একই অভিপ্রায়ে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ রয়্যাল রিজেন্সি ওডিটরিয়াম, ম্যানর পার্ক, লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভার নামে একটি প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা সভার আয়োজন করে। উক্ত সভার নিউজ সংক্রান্ত ভিডিও দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তথা ইউটিউবসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল প্রচার ও প্রকাশিত হয়। যা ইউটিউব, ডেইলিমোশনসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ডিজিটাল মাধ্যমে এখনো বিদ্যমান আছে। প্রধান আসামি তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করে বলেন, তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা-প্রচারণার সামিল। উল্লেখিত পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আসামিগণ সকলেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার পদবীধারী ব্যক্তি।

এছাড়া ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে বিএনপির ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মঞ্চায়িত ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর আরেক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে খুনী, ৫ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বাস ঘাতক ও পাকবন্ধু, ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা প্রচার করেন এবং সম্পর্কে আক্রমনাত্বক, মিথ্যা তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করেন। এরপর ২০২০ সালে ২২ মে ও ১৯ আগস্ট, ১ ও ৯ সেপ্টেম্বর, ৭ ও ১৮ ডিসেম্বর জুমের মাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার ও প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ইউটিউবে তারেক রহমান নামক চ্যানেল থেকে আপলোড করে প্রচার করা জুম মিটিংয়ে তারেক রহমান আবারো তার বাবা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে বক্তব্য প্রদান করে।

অতপর অভিযোগকারী যুক্তরাজ্যে বাঙ্গালী কমিউনিটিতে অধিকত অনুসন্ধানক্রমে জানতে পারেন, আসামিদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ আসামি তাদের নিজ নামে ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মেনর পার্ক, লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি অডিটরিয়াম হল ভাড়া করে ১নং আসামির উল্লেখিত প্রোপাগান্ডা সভা ফলপ্রসু করতে সরাসরি সহযোগীতা করেন। ২৪ ও ২৫ নং আসামি উক্ত সভা আয়োজন করতে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগীতা করে। ২-২২ নং আসামিগণসহ অজ্ঞাতরা সভার আয়োজন করার পাশাপাশি উক্ত সভায় উপস্থিত থেকে ১নং ও অন্য আসামিদেরকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক মিথ্যা বক্তব্য প্রদানে সহয্গোীতার পাশাপাশি উৎসাহ দেন।

মামলাও এও উল্লেখ করা হয়, সংবিধানের সপ্তম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ দলিলের মাধ্যমে স্বীকৃতিক্রম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। সেহেতু আসামির উপরোল্লেখিত বক্তব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার সামিল। আর ১নং আসামি ডিজিটাল মাধ্যমে উক্ত আক্রমনাত্বক মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ-প্রকাশ, প্রচার করে ২-২৫ নং আসামি ১নং আসামির কাজে সরাসরি সহযোগীতা ও মদদ দিয়ে দেশের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার অবমাননা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।তারা বাঙ্গালী জাতি স্বত্বার প্রতীক, জাতির পিতাকে হেয় করেছেন। বহির্বিশ্বে সমগ্র দেশবাসীকে খাটো করেছেন। যেহেতু অভিযোগকারী বাংলাদেশী বাঙ্লাী, তাই আসামিদের যোগসাজসী অপকর্ম ও অপরাধ চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিকার চেয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খায়রুল কবীর রুমেন, বাদির আইনজীবী আখতারুজ্জামান সেলিম বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটিতে তারেক রহমানসহ ২৫ জন আসামি রয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইপি তদন্ত করছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ