ইউপি নির্বাচন সিলেটে বহিষ্কারও দমাতে পারছে না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহ

প্রকাশিত: ৯:১১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২১

ইউপি নির্বাচন সিলেটে বহিষ্কারও দমাতে পারছে না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোনোভাবেই দমাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি ও জেলা থেকে বহিষ্কারের পরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না বিদ্রোহীরা। দলীয় প্রার্থী আর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তারা নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের ফলাফল যা-ই হোক ভবিষ্যতে তাদের আর দলের কোনো পদে ফেরার সম্ভাবনা নেই। আর বিদ্রোহীরা বলছেন, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল আর দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপেই তারা প্রার্থী হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপে সিলেট জেলার তিনটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও তৃতীয় ধাপে তিনটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৩ জন ও তৃতীয় ধাপে ১৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকজনের ওপর সাংগঠনিক শাস্তির খড়গ নেমে আসছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে দলীয় পদবি না থাকায় বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী শাস্তি থেকে বেঁচে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই মানতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকেও তাদের ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে সিলেট সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে জালালাবাদ ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুবলীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ ইসহাক। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশ্রব আলী ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ সিদ্দিকী ও ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সদস্য জয়নাল আবেদীন। মোগলগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান হিরণ মিয়া নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আছন মিয়া। এই চার ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের মধ্যে জালালাবাদের মানিক মিয়া, আশ্রব আলী, আশরাফ সিদ্দিকী, জয়নাল আবেদীন ও মোগলগাঁওয়ের মো. আছন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুল্লুক হোসেন। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. ইলিয়াছুর রহমান। তেলিখাল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর মিয়া। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আরেক সহ-সভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু। ইছাকলস ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছুর রহমান নির্বাচন করছেন নৌকা প্রতীকে। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কুটি মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জসিম উদ্দিন। উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুর রহমান মাস্টার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন। দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ইকবাল হোসেন এমাদ। তার সঙ্গে নির্বাচনে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুল হক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মন্তাজ আলী।

বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগ পূর্ব ইসলামপুরের মো. ইলিয়াছুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, তেলিখালের কাজী আবদুল ওয়াদুদ আলফু মিয়া এবং উত্তর রনিখাইয়ের ফরিদ মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

দ্বিতীয় ধাপে বালাগঞ্জ উপজেলায় যে ছয় ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে কেবলমাত্র পূর্ব পৈলনপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মতিন। দল থেকে তাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গোয়াইনঘাট উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে নন্দিরগাঁও ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী এম কামরুল হাসান আমিরুলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও আওয়ামী লীগকর্মী হীরক দে। রুস্তমপুরে দলীয় প্রার্থী হেলাল উদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এম এ মতিন। লেঙ্গুড়ায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মুজিবুর রহমান মুজিব। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া রাসেল। তোয়াকুলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সামছুদ্দিন। ফতেহপুরে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন নাজিম উদ্দিন। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান চৌধুরী। ডৌবাড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুবাস দাসের সঙ্গে বিদ্রোহী হয়েছেন উপজেলা শাখার কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এম নিজাম উদ্দিন।

দক্ষিণ সুরমায় উপজেলার সিলাম ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহ অলিদুর রহমান। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে আছেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান মুজিব। জালালপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়েস আহমদের সঙ্গে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নেছারুল হক বুস্তান ও জেলা যুবলীগ নেতা ফারুক আহমদ। মোগলাবাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছদরুল ইসলাম। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সায়েস্তা। দাউদপুরে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুল হক। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম আলম। এ ছাড়া জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আবদুর রাজ্জাক রাজা। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাইয়ূম ও হোসেন আহমদ। চিকনাগুল ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রশিদ ও সরওয়ার রহিম চৌধুরী। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন কামরুজ্জামান চৌধুরী। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুর রশিদ ও সরওয়ার রহিম চৌধুরী।

বিডি প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ