সিলেটে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানে রোগি নেই হাসপাতালে

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০

সিলেটে করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যানে রোগি নেই হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: মোট করোনা আক্রান্ত ৫ হাজার ৮৭৪ জন। হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪ জন। এই চিত্র সিলেট বিভাগের। রোববার (১২ জুলাই) রাত সর্বশেষ রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানাগেলো। আক্রান্তের পরিসংখ্যানে ভর্তির তথ্য নি:সন্দেহে বেমানান। সেই সাথে আতঙ্কেরও।

মোট করোনা আক্রান্ত থেকে সুস্থ্য হয়েছেন ১ হাজার ২ শ’ ৩৬ জন। মৃতের সংখ্যা ১০১ জন। বাকী ৩ হাজার ৫ শ’ ৩৭ জন রয়েছেন এখন করোনা মুক্তির অপেক্ষায়। তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তির প্রতি অনাগ্রহ অধিকাংশের।

সিলেটে করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকেই শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালকে বেছে নেওয়া হয়। সরকারি ভাবে করোনা চিকিৎসায় এই হাসপাতাল সেবাদান করে আসলেও দাবি উঠে আরো আইসোলেশন সেন্টার চালুর। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দাবি একসময় আরো জোড়ালো হয়ে উঠে। পরবর্তীতে করোনা রোগীদের জন্য বেসরকারি দুটি হাসপাতাল উদ্যোগ গ্রহণ করে। হাসপাতাল দুটি হচ্ছে দক্ষিণ সুরমার নর্থ-ইস্ট হাসপাতাল ও অখালিয়াস্থ মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল। এই দুটি হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রমও নানা সমালোচনার মুখে পড়ে। আবারো দাবি উঠে সেবাদান কেন্দ্র প্রস্তুতের। কিডনী ফাউ-েশনের সহযোগীতায় অবশেষে প্রস্তুত হয় আরো দুটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার। এর একটি হচ্ছে সদর উপজেলার খাদিম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অপরটি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর মধ্যে খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবাদান শুরু হলেও দক্ষিণসুরমায় শুরু হবে আগামী ২৫ জুলাই। সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে এখন করোনা রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য মোট রয়েছে মোট ৫ টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪ টি হাসপাতাল মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা ১ শ’ ২০ ও অতিক্রম করেনি। এর মধ্যে কোভিড ছাড়া নন কোভিড রোগীও রয়েছেন ৪০ জনের উপরে।

সচেতন মহলের ধারনা, পরীক্ষার সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছেনা। আর তাই, হাসপাতালের চেয়ে পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব বাড়ানোই জরুরী বলে অভিমত তাদের।

এদিকে, নমুনা সংগ্রহের জন্য শামসুদ্দিন হাসপাতালে আরো দুটি বুথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সিসিক। একই সাথে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থ্যা সীমান্তিকের পক্ষ থেকেও নমুনা গ্রহণ ও পরীক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে সাড়া না পাওয়ায় ভেস্তে গেছে এই দুটি উদ্যোগ।

শহীদ সামসুদ্দীন হাসপাতালের ১০০টি বেডের মধ্যে রোববার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ৯৮ জন। সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ২৭টি বেডই খালি। সেখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি মাত্র ৪ জন। দক্ষিন সুরমার নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার জন্য ২০০টি বেড থাকলেও হাসপাতালের উপ পরিচালক ডাক্তার সৈজ্জাদুর রহমান জানান, রোববার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ৬৪ জন। মানে ১৬৪ বেডই খালি। তিনি জানিয়েছেন, আরো ৪৭৪ জন তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতলে কোভিড রোগীদের জন্য ৭০টি বেড থাকলেও এর অর্ধেকই খালি। আইসোলেশন বিভাগের রিসিপশন থেকে জামাল আহমদ জানিয়েছেন, রোববার পর্যন্ত এখানে চিকিৎসাধীন মাত্র ৩৫ জন।

এদিকে সিলেটে করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব মাত্র দুটি। ল্যাব বাড়ানোর জোরালো দাবি উঠলেও বিষয়টিকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টি করে নমুনা পরীক্ষা হলেও বিভিন্ন উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ হয় গড়ে প্রায় ৬শটি। ল্যাব দুটিতে নমুনার জট লেগেই থাকে বলেও জানা গেছে।

এ অবস্থায়ও গণমাধ্যমসহ সিলেটের সচেতন মানুষের দাবি উপেক্ষিত। এখনো পিসিআর ল্যাব বাড়ানোর কোন উদ্যোগই নেই সংশ্লিষ্টদের। এতে দিন দিন সিলেট বিভাগজুড়ে করোবার ঝুঁকি বাড়ছেই।

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে জানানো হবে। উল্লেখ্য, রোববার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০১ জন। এরমধ্যে, কেবল সিলেট জেলার ৭৮ জন।