জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,শিক্ষার্থী ৩৫০, শিক্ষক একজন

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২১

জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,শিক্ষার্থী ৩৫০, শিক্ষক একজন

রেজুওয়ান কোরেশী, জগন্নাথপুর

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক তিনজন, তবে তাদের মধ্যে একজন প্রেষণে ময়মনসিংহে চলে গেছেন। আরেক শিক্ষক এক মাস আগে উচ্চতর প্রশিক্ষণে রয়েছেন টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে।

তিন শিক্ষকের দুজনই না থাকায় বিদ্যালয়ের ‘সবেধন নীলমনি’ শিক্ষক জয়ন্ত শেখর রায়। তিনিই পাঠদান করছেন বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত।

এ ছাড়া টানা দুই বছর ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদ খালি থাকায় সামলাচ্ছেন সেই দায়িত্ব। মাত্র দুজন কর্মচারী থাকায় দাপ্তরিক কাজও সামলাতে হচ্ছে তাকে। এমনকি বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী না থাকায় নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, শিক্ষক-কর্মকর্তা সংকটের বিষয়টি একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও কোনো সমাধান হয়নি। এক শিক্ষকই পাঠদান করছেন উপজেলার একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের। এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

১৯৭৯ সালে জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৬ সালে জাতীয়করণ করা হয়। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়টিতে ৯ শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও পাঠদান করছেন শুধু জয়ন্ত শেখর।

বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন শর বেশি ছাত্রীকে একাই সামলাচ্ছেন তিনি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুজন কর্মচারী থাকলেও শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতি শ্রেণিতে দিনে দুটি ক্লাসের বিপরীতে নিতে হচ্ছে একটি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সমর সুত্রধর বলেন, ‘উপজেলার মেয়েদের একমাত্র বিদ্যালয় এইটা, কিন্তু একটা শিক্ষকও নাই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়া চলে।
‘আমার মেয়ে পড়ে, কিন্তু সবসময় কয় ইলান পড়া কষ্ট। সবাই ভালা করিয়া পড়ে, আমরা কিতা করছি। আমরা অনেক কিছু বুঝি না। অনেক সময় স্যারেরও কষ্ট হয়।’

স্থানীয় সাংবাদিক আলী আহমদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আসছি, তবে দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত শেখর রায় বলেন, ‘আমি ২০০৯ সাল থেকে শিক্ষকতা পেশায় আছি। এই বিদ্যালয় আমার প্রথম কর্মস্থল। ১৯৮৬ সালে ৯ জন শিক্ষক পদ দিয়ে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলেও পরে আর কোনো পদ বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে পদ বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে, আমি দিয়েছি। কাজটি চলমান রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদটিও দুই বছর ধরে খালি আছে। এ ছাড়া আমার সাথে দুজন ছিলেন। একজন প্রেষণে আছেন, অন্যজন ট্রেনিংয়ে গেছেন। তিনি আগামী জানুয়ারিতে ফিরবেন। গেল দেড় বছর ধরে আমরা দুজনই ছিলাম, কিন্তু এক মাস হলো তিনি ট্রেনিংয়ে গেছেন ছুটি নিয়ে।

‘আমার সাথে একজন অফিস সহকারী আছেন। তিনি আর আমি মিলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ অন্যান্য কাজ করি। আবার উনাকে নিয়ে সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দালিলিক কাজ শেষ করি, যার কারণে অনেক সময় বাসায় যেতে রাত ৯-১০টা বেজে যায়।’

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে আমরা মন্ত্রী মহোদয় ও সচিব স্যারকে বলেছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যদি আমাদের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জানান, তাহলে আমরা এটা লিখিত আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারি।’

সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ সংকটের ব্যাপারে আমরা অনেকবার মন্ত্রণালয়কে বলেছি, কিন্তু বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না। আশা করি এ বছর না হোক আগামী বছরের মধ্যে এ বিদ্যালয়ে কিছুটা হলেও সংকটের সমাধান হবে।’
সুত্র : সিলেট টু-ডে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ