অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল : টসের মুদ্রা নির্ধারণ করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য

প্রকাশিত: ৩:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২১

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল : টসের মুদ্রা নির্ধারণ করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য

অনলাইন ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড, ঠিক ছয় বছর পর আরও একটি আইসিসি বিশ্ব ইভেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি দুই দল। সেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে বেশ ভালো ব্যবধানেই জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ রবিবার দুবাইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে তাসমানিয়ান সাগর পাড়ের দুই দেশের ক্রিকেট দল। যারা একে অপরকে ভালোমতো চেনেন এবং ক্রিকেট সংস্কৃতি ও মনন সম্পর্কে অবগত।
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, রাত আটটায় শুরু হবে এই খেলা, যেখানে নির্ধারিত হবে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী দল।

দুটি সেমিফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ী দল ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছে এক ওভার বাকি রেখে, মাঝপথে টপ অর্ডার খেলেছে ঠান্ডা মাথার ক্রিকেট এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররাই জিতিয়েছেন ম্যাচ- এসব বিষয় ফাইনালেও হতে পারে বড় ফ্যাক্টর।

টসের মুদ্রা নির্ধারণ করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য

চার ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপ জেতানো ক্রিকেটার কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এই ফাইনালের বিশ্লেষণে বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে টস একটা বড় ব্যাপার।

দুবাইয়ে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় খেলা শুরু হবে, ফ্লাডলাইট জ্বলবে তখন এবং শিশির থাকবে, যে দলই শেষে বল করবে তাদের জন্য কাজটা কঠিন হবেই।

এখন পর্যন্ত সুপার টুয়েলভ পর্বের ৩২ টি ম্যাচের ২১টিতেই পরে ব্যাটিং করা দল জিতেছে।

দুবাইয়ে ১২টি ম্যাচের ১১টিতেই রান তাড়া করেই জয় পেয়েছে দল।

শিশিরের কারণে যারা বল গ্রিপ করে উইকেটে টার্ন আদায় করার চেষ্টা করে থাকেন তাদের জন্য কাজটা খুব খুব কঠিন হয়ে যায়, নিউজিল্যান্ডের ইশ সোধি কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা কেউই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে চাইবেন না।

শিশিরের কারণে বল পিচ্ছিল হয়ে যায়, তাই পেস বোলারদের জন্যও কাজটা হয়ে যায় কঠিন, ইয়র্কার বল করতে গিয়ে সেটা ফুলটস বা কখনো কখনো নো বলও হয়ে যেতে পারে।

শিশির পিচেও প্রভাব ফেলে, যদি উইকেটে কোনও অসমান বাউন্স থাকে বা সুইং পায় বোলার সেক্ষেত্রে শিশির বোলারের জন্য সুবিধা অকার্যকর করে দেয়, বল সহজেই ব্যাটে আসে।

অ্যারন ফিঞ্চ ও কেইন উইলিয়ামসন- যে অধিনায়কই টস জিতবেন তিনি বোলিংটাই আগে করার সম্ভাবনা বেশি।

কারণ ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পাঁচটিতেই যারা টসে জিতেছেন তারাই কাপ জিতেছেন।

মানসিক চাপ

দ্বিতীয় সেমিফাইনালের আগে বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল, পাকিস্তান যদি কোনও কারণে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর সেমিফাইনালে হারে সেটার পেছনে একটা কারণই থাকতে পারে, সেটা বড় ম্যাচের মানসিক চাপ।

হাসান আলীর ক্যাচ মিস, বাবর আজমের সংবাদ সম্মেলন- এসবই ইঙ্গিত করে মানসিক চাপের কারণেই পাকিস্তান এই ম্যাচটার একটা বড় সময় ভালো খেলেও শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়া এসব পর্যায়ের ক্রিকেটে ঝানু দল, বিশেষত বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়া এর আগেও দৃষ্টান্ত রেখেছে তারা মানসিক চাপ জয় করে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দলের গঠন একই রকম। শক্তিশালী টপ অর্ডার, বড় শট নিতে পারেন এমন ব্যাটসম্যান দিয়ে গড়া মিডল অর্ডার, বিশ্বমানের লেগস্পিনার এবং অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার আছেন দুই দলেই।

তাই শক্তিমত্তার দিক থেকে খুব বেশি এদিক সেদিক হবে না, কিন্তু যেই দল স্নায়ুচাপ ভাল সামলাতে পারবে, কাপ পাওয়ার সম্ভাবনা তাদেরই বেশি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড- এই দুই দল এখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে পারেনি, অস্ট্রেলিয়া একবার রানারআপ হয়েছিল ২০১০ সালে, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ফাইনাল এটি।

যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল প্রথম কিন্তু গত ৩ বছরে এটি নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় আইসিসি ইভেন্ট ফাইনাল, ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং ২০২১ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড।

আর অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলেও, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এখনো জিততে পারেনি।

স্নায়ুচাপ সামলানোর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একটা বড় নিয়ামক- এখানেও দুই দল কাছাকাছিই ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন দুই দলেই।

তাই ফাইনাল খেলা খুব একটা নতুন বিষয় নয় কারও জন্যই, কিন্তু এটা একটা নতুন ফরম্যাট, নতুন দিন, নতুন ম্যাচ। নতুন টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নও এখান থেকেই নির্ধারিত হবে।

ব্যাটিংয়ের ধরন

যদিও টস নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে কিন্তু এসব আলোচনাই আসলে নির্ভর করবে ম্যাচে কে সুবিধা কতটুকু নিতে পারছে তার ওপর।

দুই দলের টপ অর্ডারে ভালো ব্যাটসম্যান আছেন, যারা সময়মতো রান তুলতে পারেন আবার ইনিংস গড়তেও পারেন।

ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভ স্মিথ- এই তিন জনের মধ্যে কেবল ওয়ার্নার আছেন ফর্মে।

তাই তার উইকেটে টিকে থাকাটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

তবে পাকিস্তান যে ভুলটা করেছে, তারা প্রথম দশ ওভার অতি সাবধানী ক্রিকেট খেলেছে যার ফলে ১০ ওভারে মাত্র ৭১ রান এসেছে এবং দ্বিতীয়ার্ধে ১০০ এর বেশি রান তুললেও সেটা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।

শুরু থেকেই এক প্রান্ত থেকে আগ্রাসী ক্রিকেট না হলে শেষের ব্যাটসম্যানদের ওপর নির্ভর করলে এটা বুমেরাং হতে পারে।

নিউজিল্যান্ডেও মার্টিন গাপটিল, ড্যারেল মিচেল ও কেইন উইলয়ামসন আছেন। যারা ইনিংস গড়ে খেলতে পছন্দ করেন।

কিন্তু ফাইনালের মতো ম্যাচে যেখানে মানসিক চাপ বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়ে এসব ক্ষেত্রে যারা প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে পছন্দ করেন তারা এগিয়ে যান।

এগুলো ছাড়াও আরও ছোট ছোট বিষয় হতে পারে এই ম্যাচের ফলাফলের নিয়ামক।

যেমন ইকোনমি রেট, নিউজিল্যান্ড এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম খরুচে বোলিং করছে, নিউজিল্যান্ডের বোলাররা ওভারপ্রতি ৬.৪ রান করে দিচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া আছে এই তালিকায় ১০ নম্বরে, প্রতি ওভারে সাত করে দিচ্ছেন অজি বোলাররা।

তবে ফিল্ডিং একটা বড় ইস্যু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা ২১ রান বাঁচিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডাররা ১৭ রান।

বড় ম্যাচ, তাই আকর্ষণ ও আগ্রহ অনেক, প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর নায়ক নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম বলেছেন, “আমরা পৃথিবীর অর্ধেকটা ঘুরে দুবাইয়ে সেমিফাইনাল জিততে আসিনি, আমরা ফাইনাল খেলতে এসেছি।”

অ্যারন ফিঞ্চ অবশ্য সেমিফাইনালের আগে থেকেই বলে আসছেন অস্ট্রেলিয়া একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

বিডি প্রতিদিন