পাঠা-ছাগীর ভিডিওচিত্র এবং একটি ব্রীজের লাইভ সম্প্রচার

প্রকাশিত: ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

পাঠা-ছাগীর ভিডিওচিত্র এবং একটি ব্রীজের লাইভ সম্প্রচার

কবীর আহমদ সোহেল :; বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি, বিশ্বাসের সপক্ষের লেখক প্রফেসর আফজাল চৌধুরী (মরহুম) আমার শিক্ষক ও অন্যতম অভিভাবক। আমার সাংবাদিকতার শুরুকালে একবার একটি প্রতিবেদন নিয়ে বলেছিলেন, “সোহেল সংবাদপত্রে তোমার লেখা, অনেক বিজ্ঞজন যেমন পড়েন, তেমনি অনেক কমজ্ঞান সম্পন্ন মানুষও পড়েন। জ্ঞানীজন তোমার অজ্ঞতা বুঝে নেন। আর কমজ্ঞানীরা তোমার তথ্য উপাত্ত বক্তব্য কে শুদ্ধ সত্য মেনে নিজেও চর্চা করেন। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোন লেখা প্রকাশ করতে যেয়োনা।”
স্যারের অসাধারণ এ উপদেশ ক’দিন থেকে বারবার মনে পড়ছে। এখন ভার্চুয়াল যুগ। লেখা ঘষামাজা করে হাতের পর হাত সম্পাদনা করে প্রকাশ প্রচারের তেমন চর্চা আর হয়না। ইদানিং ‘ লাইভ’ এক ‘ যন্ত্রণা না আশীর্বাদ ‘ তা রীতিমতো গবেষণার দাবী রাখে। এখন যে কেউ যেকোনো কিছু নিয়ে সম্প্রচারে আসতে পারেন এবং আসছেন।
ইউটিউবে ছাগল পালনের একটি ভিডিওচিত্র আর একটি ব্রীজ নিয়ে ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার দেখে শুনে স্যারের সেই বক্তব্যটি আজ কানে ভাসছে।
ছাগল পালনের জ্ঞান দিতে গিয়ে ভিডিওটিতে বলা হলো, ‘ছাগী কিভাবে গাভীন করাবেন’ এবং দেখানো হলো পাঠা কিভাবে ছাগীর সাথে যৌন কর্ম চালাচ্ছে। ইউটিউবে তা সম্প্রচার করে দেয়া হলো। কতটুকু পাশবিক রুচি হলে মানুষ এগুলো সম্প্রচার করতে পারে বলা বাহুল্য।
এবার আসি একটি ব্রীজের ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার প্রসংগে। ‘অদ্ভুত ব্রীজ’ বলে ফেসবুক পেজ রিপোর্টার নিজেই অদ্ভুত কান্ড করলেন। লাইভ সম্প্রচারে বলছেন, আমার জানা নেই। আারে ভাই, জানা না থাকলে অন্যকে জানানোর দায়িত্ব আপনাকে কে দিল। রাস্তা থেকে সাধারন মানুষকে ধরে এনে, এই নদীর নাম কি, ব্রীজটি কবে হয়েছিল, এখানে হাঁস পালন হয়? ইত্যাদি অদ্ভুত আচার ফেসবুক পেজে করলেন লাইভ সম্প্রচার!

ব্রীজটি সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত নিয়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকার অভিজ্ঞজনের বক্তব্য সমেত সম্প্রচার করলেই যথাযথ হতো। একজন পাঠা আর ছাগীর যৌনাচার করলেন সম্প্রচার। আর উনি বুম ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিকতার রীতি নীতিকে করলেন বলাৎকার।
আত্মপ্রচারে হিতাহিত জ্ঞান হারা এসব ভদ্রজন যে না জেনেই এসব করছেন তাও মেনে নেয়া যায়না। এই করোনাকালে সিলেট থেকে দিরাই গিয়ে কালনী ব্রীজের সম্প্রচার এমনি এমনি কেউ করেছে। তা কি ভাবা যায়?
অনেকের মতে এগুলো রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি কারণে কোন চিন্তা পরিকল্পনায় ব্রীজটি নির্মাণ করেছে তা না জেনে এমন সম্প্রচার রহস্যজনক।

প্রসংগত: যে ব্রীজটির সংযোগ সড়ক নেই বলে ফেসবুক পেজে লাইভ করা হয়েছে। এই ব্রীজের নাম কালনী সেতু । সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু। ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত হয়েছেএই সেতু । রয়েছে সংযোগ সড়কও। প্রভাতবেলা’র দিরাই সংবাদদাতা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর এ তথ্য জানান।

সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রচেষ্টায় ২০১২ সালের ৩০ জুন এ ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দিরাই উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পুর্বাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, পার্শ্ববর্তী উপজেলা দক্ষিন সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনসহ সিলেটের সঙ্গে দিরাইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষেই এ ব্রীজ নির্মিত হয়। এটাকে ‘অদ্ভুত ব্রীজ’ বলার কোন সুযোগ নেই।

স্থানীয় সচেতন মহলের ভাষ্যানুযায়ী, দিরাইবাসীর স্বপ্নের কালনী ব্রিজ নির্মাণের ফলে হাওর জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। উপজেলার পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই লাখ মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধনের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে করিমপুর ইউনিয়ন, জগদল, তাড়ল ও কুলঞ্জ ইউনিয়নে হাওরের ওপর দিয়ে যান চলাচলের সুযোগ হয়েছে।

বিদ্যমান সংযোগ সড়ক ব্রীজের চেয়ে অনেকটা নীচুতে থাকায় বর্ষাকালে সড়কটি অনেক সময় তলিয়ে যায়। সংযোগ সড়ক সংস্কার ও আরো উন্নত করার দাবী স্থানীয়দের।

বর্ষার অথৈ পানিতে হংসরাজির সন্তরণ চিরায়ত বাংলার দৃশ্য । এটাকে হাঁসপালন বলে জ্ঞানের দৈন্যতাকে প্রচার করেন ঐ ফেসবুক পেজ রিপোর্টার।
লেখক : সম্পাদক দৈনিক প্রভাত বেলা

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ