প্রতারণার জগতে সাহেদ একজন আইডল: র‌্যাব

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২০

প্রতারণার জগতে সাহেদ একজন আইডল: র‌্যাব

অনলাইন ডেস্ক :;

প্রতারণার জগতে সাহেদকে একজন আইডল হিসেবে উল্লেখ করেছে র‌্যাব। সাহেদ প্রতারণাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের ভাবনার অতীত। প্রতারণাকে ব্যবহার করে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠগবাজি করে কীভাবে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যা একটি অনন্য খারাপ দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের কাছে আরও অভিযোগ এসেছে রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেওয়া হতো। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

সাংবাদিক, রাজনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাহেদের ছবি থাকার বিষয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাহেদের ছবির বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তিনি তার পৃষ্ঠপোষক। যে কারও সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার মানে এই নয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাহেদকে একজন প্রতারক জেনেও তার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন কারও সঙ্গে ছবি তোলেন সেটি নেহাত সৌজন্যবশত। এর পেছনে যদি কারও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, সেটি নিশ্চয়ই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন,‘আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত ছিল, যাতে সে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারে, তাই সে দেশ থকে পালিয়ে যেতে পারেনি। তাকে যেকোনও সময়, যেকোনও মুহূর্তে সাহেদকে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সারা দেশের পাশাপাশি সীমান্তেও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বলেও জানায় র‌্যাব, যাতে কোনোভাবেই সাহেদ দেশ ত্যাগ না করতে পারে।

আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করে সবাইকে জানাতে চাই, সাহেদের পাসপোর্ট আমাদের কাছে। আমরা জব্দ করেছি। সে যদি দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাহলে সেটা তার জন্য অবৈধ পন্থা হবে। সে যাতে কোনোভাবেই দেশত্যাগ না করতে পারে, সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্কলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।’ গ্রেফতার না করতে পারার কারণ সে প্রতারক। এর চেয়ে বড় অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।’ সাহেদকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই ঘটনায় সাহেদ ছাড়াও অন্যান্য আসামি গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মূল তদন্তকারী কর্মকর্তা সব অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূল আসামি সাহেদকে গ্রেফতারে র‌্যাবের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। এ মামলার অন্যান্য আসামিও এই মুহূর্তে পলাতক রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সাহেদ পাওনাদারদের যে চেক দিতো, তাতে একেক চেকে একেক স্বাক্ষর করতো। সত্যিকারের স্বাক্ষর সে দিতো না— যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। এসব চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হয়েছে। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকাররাও অবাক হয়েছেন। সাহেদ তার বৈধ চেকে অবৈধ স্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ ব্যাংকে তার যে স্বাক্ষর রক্ষিত আছে, সেই স্বাক্ষর না দিয়ে ভিন্ন স্বাক্ষর দিতো। তাই পাওনাদাররা ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেনি। সব চেক ব্যাংকে ডিজঅর্নার হয়েছে।’

র‌্যাব জানায়, সারা দেশে সাহেদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত র‌্যাব অর্ধশতেরও বেশি মামলার খবর পেয়েছে, যার বেশিরভাগই প্রতারণার মামলা। তার বিষয়ে র‌্যাব আরও খোঁজ খবর নিচ্ছে। যদি কারও অভিযোগ থাকে তাহলে র‌্যাবকে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এতে তদন্তে র‌্যাবের সুবিধা হবে।’

র‌্যাব কর্মকর্তা কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতো। আমরা তার গানম্যান ও তাদের অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। তার পাঁচ থেকে সাত জনের গানম্যানের দল ছিল। তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্রের বৈধতা খতিয়ে দেখছি।’