ডা. সাবরিনা ও আরিফকে মুখোমুখি করা হবে

প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২০

ডা. সাবরিনা ও আরিফকে মুখোমুখি করা হবে

অনলাইন ডেস্ক :

জেকেজি করোনার নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের নামে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী।

তবে এর দায় নিজের নয়, স্বামী আরিফ চৌধুরীর বলে দাবি করেন। স্বামীর এমন অনৈতিক কাজ দেখে তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরে এসেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এখন এই তথ্য যাচাই করতে সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফকে মুখোমুখি করতে চায় ডিবি।

এজন্য মঙ্গলবার আরিফ চৌধুরীকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে ডিবি। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম মঙ্গলবার যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, ডা. সাবরিনা অনেক তথ্যই দিচ্ছেন এসব যাচাই-বাছাই করতে আরিফ চৌধুরীকেও প্রয়োজন। এজন্য তারও রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছে, আজ বুধবার ভার্চুয়াল আদালতে রিমান্ডের শুনানি হবে। আরিফুল কেরানীগঞ্জস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

এর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডা. সাবরিনাকে। জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা নিজে দায় এড়াতে পুলিশকে বলেছেন, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে, আবার বলছেন, ডিভোর্স কার্যকর প্রক্রিয়াধীন। দাবি করছেন তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। আর পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবরিনা জেকেজির চেয়ারম্যান এমন তথ্য পেয়েই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতেন। করোনা পরীক্ষার বিষয়ে জেকেজির সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চুক্তি তিনিই করিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সব অপকর্মের দায় দিচ্ছেন তার কারাবন্দি স্বামী আরিফের ওপর। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার কেঁদে কেঁদে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এমনকি রিমান্ডের জন্য আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের সামনেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেন। সোমাবার চারদিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হওয়ায় মঙ্গলবার ডা. সাবরিনাকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা অনেক তথ্য দিচ্ছেন। তবে নিজে দায় নিচ্ছেন না। সোমবার দিবাগত রাতে ডা. সাবরিনাকে তেজগাঁও থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে আমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হব কীভাবে? আমি জেকেজিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতাম। পুলিশ বলছে এসব হচ্ছে ডা. সাবরিনার দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা।

মঙ্গলবার বিকালে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ যুগান্তরকে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে আমাদের কাছে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে ডা. সাবরিনা কোনোভাবেই তার দায় এড়াতে পারেন না। তিনি ফোন এসএমএসে, ফেসবুকে, ভাইবারে, বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া গুলশান থানার একটি জিডি, তিতুমীর কলেজের ঘটনায়, এমনকি আরও বিভিন্ন জায়গায় ডা. সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো লাইসেন্স ছিল না। এ বিষয়ে আমরা যখন তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে লবিং করে সব কাজের ব্যবস্থা ডা. সাবরিনাই করতেন। আরিফ চৌধুরী গ্রেফতারের কয়েকদিন আগে গত ১৬ জুন ডা. সাবরিনাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কার করেন।

ডিসি হারুন বলেন, ডা. সাবরিনা দাবি করছেন কাগজে-কলমে তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন, তাহলে যেসব জায়গায় তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে অবৈধ স্বার্থ হাসিল করেছেন, সেটিও ছিল তার প্রতারণা। এর দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুন সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ৬ জনকে গ্রেফতারের পর ৪টি মামলা রুজু হয় তেজগাঁও থানায়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে জেকেজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করত। বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও প্রতিটি পরীক্ষার জন্য নেয়া হতো সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে ১০০ ডলার। এসব নমুনার পরীক্ষা না করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে দিত জেকেজি। এভাবে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে জেকেজি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।

গত রোববার সাবরিনাকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তেজগাঁও ডিসি অফিসে আনা হয়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টার প্রশ্নবানে নানা অসংলগ্নতা উঠে এলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এছাড়া ডা. সাবরিনা ও আরিফুল তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য জব্দ করেছে দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এছাড়া জেকেজির প্রতারণার বিষয় অনুসন্ধান করবে দুদক।