পবিত্র জিলহজ মাসের আমল

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২০

পবিত্র জিলহজ মাসের আমল

মো. আবু তালহা তারীফ :;

অল্প কয়েক দিন পর আসবে হিজরি বছরের শেষ মাস পবিত্র জিলহজ। জিলহজ অত্যন্ত তাৎপর্যবহ, পুণ্যময় ও অধিক সম্মানিত মাস। চারটি মাসকে আল্লাহ পবিত্র ও সম্মানিত করেছেন। তার মধ্যে জিলহজ অন্যতম। আল কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ সুরা তওবা, আয়াত ৩৬।

হাদিসে এসেছে, ওই চারটি সম্মানিত মাস হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। জিলহজকে হজের মাস বলা হয়। এ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ ছয় দিনই হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। জিলহজের মধ্যে প্রথম ১০ দিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠতম দিন। প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ এ দিনগুলোর কসম পর্যন্ত করেছেন। দিনগুলোয় ইবাদত ও আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম এ দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ-সংগ্রামও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না।’ বুখারি।
এজন্য জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন, রাতে বেশি বেশি ইবাদতের গুরুত্ব অত্যধিক। নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তসবিহ, দরুদ পাঠ ও তওবা-ইসতিগফার, অতিরিক্ত দোয়া করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখা অন্যতম নেক আমল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই এ দিনগুলোয় নফল রোজা রাখা খুবই সওয়াবের কাজ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজের ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশি প্রিয়, প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো।’ তিরমিজি।

জিলহজের ৯ তারিখকে আরাফার দিন বলা হয়। আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত রয়েছে; যা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত। আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আশা করি যে তা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের পাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।’ মুসলিম।

মুসলিমে জিলহজের প্রথম দশকের অন্য একটি আমলের কথা বলা হয়েছে- এ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে চুল, গোঁফ, নখ, বগল ও অন্যান্য স্থানের লোম বা পশম না কাটা। উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জিলহজের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’

জিলহজের অন্যতম একটি আমল হলো, ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখের আসরের নামাজ পর্যন্ত অর্থাৎ মোট ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ। তাকবিরে তাশরিক হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’। ‘ফরজ নামাজের পর প্রত্যেকের ওপর অন্তত একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা কর্তব্য।’ ফাতাওয়ায়ে শামি, বাহরুর রায়েক।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে জিলহজের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমাদের সব ইবাদত কবুল করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ