দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ দারিদ্র্য জয়ী দোয়ারাবাজারের অদম্য মেধাবী সেবুল আহমেদ সোহাগ। সে এবার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর মুহিবুর রহমান মানিক সোনালী নূর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মানবিক শাখায় গোল্ডেন এপ্লাস পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে। সংসারের চরম আর্থিক টানাপোড়নে বেড়ে ওঠা সেবুল দিনে জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতো এবং পড়াশোনা করতো রাতে। এভাবে সে নিজেই তার পড়াশোনা ও তার পরিবারের খরচ চালিয়েছে, পাশাপাশি তার পড়াশোনাও অব্যাহত রেখেছে।
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তাকে নিয়ে গত ০৫ জুন “দারিদ্র্যকে জয় করেছে দোয়ারাবাজারের অদম্য মেধাবী সেবুল : ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা” শিরোনামে সুনামগঞ্জ ২৪ ডটকমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ওই সংবাদটি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপর তাৎক্ষণিক ভাবে দোয়াারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা প্রতিবেদকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। পরে খবর দিয়ে সেবুল ও তার বাবাকে অফিসে ডেকে এনে তাদের খোঁজখবর নেন। সেবুুুুলের মুখে শোনেন তার জীবন সংগ্রামের কথা।
ইউএনও সোনিয়া সুলতানা মেধাবী সেবুলের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে তার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন। সেবুল ও তার বাবাকে একটি নতুন ভ্যান গাড়ি ও নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নিজের দেওয়া কথাও রেখেছেন তিনি।
আজ ১৮ জুলাই, শনিবার দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলা অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে সেবুল ও তার বাবা সিরাজ মিয়াকে একটি নতুন ভ্যান গাড়ি ও নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ। জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থী সেবুলের খোঁজখবরও নেন এবং তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন। এসময় দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোঃ আব্দুর রহিম এমবিবিএস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা প্রমুখসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মেহের উল্লাহ প্রতিবেদককে জানান, সেবুলের পরিবারের কর্মসংস্থানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা তার নিজের বেতনের টাকার একটা অংশ দিয়ে একটি ফান্ড গঠন করে সেখানে আমাদেরকেও যুক্ত করেছেন। সবার ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় গঠিত এই ফান্ড থেকেই সেবুলের বাবার জন্য একটি নতুন ভ্যান গাড়ি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
নতুন ভ্যান গাড়ি, নগদ আর্থিক অনুদান ও ছেলের পড়াশোনার জন্য সবার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সেবুলের বাবা সিরাজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানাসহ অন্যান্য সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ ও ঋণী। আমার মতো একটা অসহায় পরিবারের পাশে তারা যেভাবে সেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন, যেভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজখবর রাখছেন তা আমি চিরজীবন মনে রাখবো। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার শরীরের রক্ত বিক্রি করে হলেও নিজের সন্তানের পড়াশোনা অব্যাহত রাখবো।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, দারিদ্র্যতা মেধাকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। সেবুল তার পড়াশোনা অব্যাহত রেখে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করবে আমরা এই প্রত্যাশা করি।