করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট, ভয়াবহ প্রতারণা করোনা আক্রান্ত ডাক্তারের

প্রকাশিত: ৫:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০

করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট, ভয়াবহ প্রতারণা করোনা আক্রান্ত ডাক্তারের

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল আর জেকেজি হেলথকেয়ারের পর সিলেটে এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের টেস্টের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

নিজেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডাক্তারের পরিচয় দিয়ে বিদেশগামীদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা আদায় করে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছেন এই ব্যক্তি। আদতে ওসমানী মেডিকেলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তিনি বসেন স্থানীয় মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসে।

তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর থেকে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসক।

অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের নাম ডা. এ এইচ এম শাহ আলম। তিনি নিজেও একজন করোনা আক্রান্ত রোগী। গত ১৪ জুলাই তার করোনা পরীক্ষার ফলাফলে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপরও তিনি চেম্বারে রোগী দেখেছেন। দিয়েছেন নন কোভিড প্রত্যয়নপত্র।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রত্যয়নপত্রে নিজেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার বলে উল্লেখ করেছেন শাহ আলম। প্রতিটি প্রত্যায়নপত্র দিয়ে শাহ আলম হাতিয়ে নিচ্ছেন ৪ হাজার টাকা। বাংলাদেশে উপসর্গহীন রোগীদের করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করছেন প্রত্যায়নপত্রে।

এ বিষয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ফোন করলে কর্তৃপক্ষ বলছেন ডা. এ এইচ এম শাহ আলম নামের কোনো মেডিকেল অফিসার তাদের এখানে নেই।

রোবাবার দৈনিক যুগান্তরের হাতে নন কোভিড প্রত্যয়নপত্রটি আসার পর অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলী নগর গ্রামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কামাল আহমেদ এবং তার স্ত্রী আফিয়া খাতুন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার জন্য নন কোভিড সনদের প্রয়োজন হয়। তাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন কোনো পরীক্ষা ছাড়াই মাত্র ৪ হাজার টাকা দিলে এই সনদ দেন ডা. এ এইচ এম শাহ আলম।

পরে তারা সিলেট নগরীর মধুশহীদ এলাকায় মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসে ডা. শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৮ হাজার টাকার মাধ্যমে ওই দম্পতিকে গত ১০ জুলাই দুটি প্রত্যয়নপত্র দেন শাহ আলম।

যেখানে লেখা আছে কামাল আহমেদ ও আফিয়া খাতুনকে তিনি তার চেম্বারে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তাদের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ নেই।

প্রত্যয়নপত্রে ডা. শাহ আলম আরও লেখেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে উপসর্গহীন কারো করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই।

ভুক্তোভোগী প্রবাসী দম্পতির ভাতিজা আনোয়ার হোসেন জানান, ১০ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেসে গেলে দুজনের কাউকেই পর্যবেক্ষণ না করেই নন কভিড প্রত্যয়নপত্র দেন ডা. শাহ আলম।

তিনি জানান, এই প্রত্যয়নপত্রে কাজ না হওয়ায় ঢাকার একটি বেসরকারী পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা শেষে সনদ নিয়ে ১২ জুলাই এমিরেটস এয়ারলাইন্সে করে যুক্তরাষ্ট্রে যান এই দম্পতি।

সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, প্যাডে নিজেকে ওসমানী মেডিকেলের চিকিৎসক লিখে থাকলে তিনি রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

প্রতারণাসহ করোনা আক্রান্তের বিষয়ে ডা. এ এইচ এম শাহ আলম বলেন, আমি ভুল করেছি। এমন ভুল আর হবে না। এমন প্রত্যায়নপত্র দেয়া ঠিক হয়নি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

প্যাডে ওসমানীর মেডিকেল অফিসার কেন লিখলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক সময় অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসাবে কাজ করেছি।

করোনা সংক্রমিত হয়েও কীভাবে চেম্বারে রোগী দেখলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ১৬ জুলাইয়ের পর আর চেম্বারে বসিনি। এর আগে জানতাম না যে আমি করোনা আক্রান্ত।

এ বিষয়ে মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের সিলেটের মহাব্যবস্থাপক এম এ মতিন মাসুক বলেন, আমাদের বিপনন কর্মকর্তারা ডা. এ এইচ এম শাহ আলমকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে কাজ করতে দেখেছেন। তাই তার কাগজপত্র আর যাচাই করা হয়নি। আর ১৬ জুলাই করোনা সংক্রমনের কথা অবগত হলেই এই চিকিৎসককে চেম্বারে আসতে নিষেধ করে দিই আমরা।