নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস গড়লো টাইগাররা

প্রকাশিত: ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২২

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস গড়লো টাইগাররা

স্পোর্টস ডেস্ক  :: নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উপমহাদেশের দেশগুলো খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ ২০১৭ সালে একবার কাঁপিয়ে দিয়েছিল কিউইদের। সেবার ওয়েলিংটনে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি এবং মুশফিকুর রহিমের ক্যারিশম্যাটিক সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণার পরও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রানে গুটিয়ে যায়। তারপর আশায় গুঁড়েবালি। হারতে হয় বড় ব্যবধানে।

তবে এবার আর আশাহত হতে হলো না বাংলাদেশকে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে ইতিহাস গড়লেন টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানের লিড আর নিউজিল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান। সেই লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় মুমিনুল-মুশফিকরা। এর ফলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিরুদ্ধে টেস্টে প্রথম জয়তো বটেই, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশ পেল প্রথম জয় আর মাউন্ট মঙ্গানুয়ে স্বগর্বে উড়লো লাল-সবুজের পতাকা।
দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের করা লিড ৩৯ রানের জবাবে ব্যাট হাতে নেমে শুরুটা ভালো করেনি বাংলাদেশ। শুরুতেই ৩ রান করে সাউদির বলে কিপার ব্লান্টেনের গ্লাভসবন্দি হন ওপেনার সাদমান। এরপর ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গ দিতে নামেন অধিনায়ক মুমিনুল। আহত হওয়ার কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাট করা মাহমুদুল হাসান জয়।

১৪.২ ওভারে আউট হয়ে যান শান্ত। কাইল জেমিসনের ডেলিভারিতে প্রথম স্লিপে ক্যাচ লুফে নেন রস টেলর। ৪১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৭ রানে সমাপ্তি ঘটে তার ইনিংসের। শান্তর আউটের পর মুশফিককে সাথে নিয়ে বাকি কাজটা সারেন অধিনায়ক মুমিনুল। ৪৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৩ রান করেন অধিনায়ক।

৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে আজ ম্যাচের পঞ্চমদিনে ব্যাট হাতে নামে নিউজিল্যান্ড। অপরাজিত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভ রস টেলর। ৩৭ রানে দিন শুরু করা ব্যাটসম্যান বিদায় নেন আর মাত্র ৩ রান যোগ করেই। এরপর এবাদতের শিকার জেমিসন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি এ টেলএন্ডার। তার আগেই শরিফুলের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তিনি। আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫ উইকেট, বোলাররা সময় নিলো মাত্র ১০ ওভারের একটু বেশি। এবাদত ও তাসকিন দুর্দান্ত বোলিংয়ে বেশি দূর এগোতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ১৬৯ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। এদিন মাত্র ২২ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৫৮ রান করে ১৩০ রানের লিড পায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১৬৯ রান। অর্থাৎ ২ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান পূরণ করে কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এই জয় মূউলত অধরা স্বপ্নের জয়। নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারালো বাংলাদেশ, প্রথমবারের মতো টেস্ট জয় এলো এশিয়ার বাইরে।

নতুন বছরের শুরুটা এরচেয়ে আর ভালো হতে পারতো না বাংলাদেশের জন্য। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের সময় কাটে তাদের। চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর বৃষ্টি হারার মিরপুর টেস্টে মাত্র আড়াই দিনে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এমন একটি সিরিজ শেষে ভঙ্গুর অবস্থায় নিউজিল্যান্ডে যান মুমিনুল। সেখানে গিয়ে করোনা, কোয়ারেন্টিনে কঠিন সময় যায় বাংলাদেশের। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে মুমিনুলবাহিনী রচনা করলো নতুন এক অধ্যায়।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে টেস্টের মুকুট জিততে হয় তাদের। ঘরের মাঠে খেলা হলে সব দলকেই ক্রিকেট দীক্ষা দেয় তারা। ঘরের মাঠে যেন তারা হারতেই জানে না, সর্বশেষ ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারে তারা। এশিয়ার কোনো দলের জয়ের হিসাব কষলে ফিরতে হবে সেই ২০১১ সালে, সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল কিউরা। ১১ বছর পর এশিয়ার কোনো দল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়লো বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৫৮

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯ (টেইলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়্যাগনার ০*, বোল্ট ৯*: তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, শরিফুল ১২-২-৩০-০, মিরাজ ২২-৫-৪৩-০, ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মুমিনুল ৪-০-৭-০)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০) ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; বোল্ট ৫-৩-৪-০, সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১২-১, ওয়্যাগনার ৩-১-৪-০)।

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইবাদত হোসেন চৌধুরি।

সূত্র : বিডি-প্রতিদিন

সাকিব আহমেদ / ০৫ জানুয়ারি

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ