ওসমানীনগরে ভোট কেন্দ্র নিয়ে জটিলতা, বাড়ছে কলহ!

প্রকাশিত: ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২২

ওসমানীনগরে ভোট কেন্দ্র নিয়ে জটিলতা, বাড়ছে কলহ!

ওসমানীনগর প্রতিনিধি:: সিলেটের ওসমানীনগরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। মাত্র ১৮শ ৭৯ জন ভোটারের জন্য দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে নারী পুরুষদের পৃথক স্থানে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করায় দ্বন্ন্দ্ব ও জটিলতা সৃষ্টির হয়েছে। এতো কম সংখ্যক ভোটারের জন্য সরকারের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করে দুই ভোট কেন্দ্র স্থাপনের ফলে স্থানীয়ভাবে জটিলতা বৃদ্দির পাশাপাশি নারী ভোটারদের বিরম্ভনা বাড়ার পাশাপশি নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রভাব বিস্তার বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা।

জানা গেছে, উপজেলার আলমপুর, খাতুপুর ও বড় ধিরারই গ্রাম নিয়ে ঘঠিত দয়ামীর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড। যার ভোটার সংখ্যা মোট ১৮শ ৭৯জন। এখানে সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত কেন্দ্র হিসাবে উত্তর বড় ধীরারাই গ্রামের মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলোতে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মনে সংকুচ দেখা দিলে স্থানীয় ওয়ার্ডবাসীর আবেদনের প্রক্ষিতে নির্বাচন কমিশন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দক্ষিণ বড় ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের তালিকা প্রকাশ করেন।

সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ২১ ডিসেম্বর স্থানীয় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র এটি স্থান পায়। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর আরেকটি ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সেখানে দক্ষিণ বড় ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ ভোটার ও উত্তর বড় ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা ভোটার ভোট দিবেন বলে প্রকাশিত তালিকায় উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর স্থানীয়রাসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহনকারী প্রার্থীদের মনে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এনিয়ে ইউনিয়ন বা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারীরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কায় তাদের মনেও ক্ষোভের দানা বেঁধেছে।

একই ওয়ার্ডে মাত্র ১৮শ ৭৯ জন ভোটারের জন্য দুই ভোট কেন্দ্র এবং পুরুষ মহিলা আলাদা ভোট কেন্দ্রে স্থাপনের ফলে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে নানা আলোচনা সমালোচনার দেখা দিয়েছে। একই পরিবারের মহিলা এক কেন্দ্রে আর পুরুষ ভোটাররা যাবেন আরেক কেন্দ্রে যা এর আগে শুনেননি বলে অনেক প্রবীন ভোটাররা মন্তব্য করেছেন। এতে মহিলা ভোটারের কম উপস্থিতিসহ ভোটকেন্দ্র না যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির ডাক বাংলো থেকে ভোট কেন্দ্র সরিয়ে দক্ষিণ ধিরারাই বেসরকাার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মজম্মিল আলীসহ স্থানীয়রা তৎকালিন সিলেট জেলা প্রশাসকের স্বরণাপূর্ন হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে আবারও দক্ষিন বড়ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবর্তন করে ভোটা কেন্দ্র হিসাবে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলোয় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তফশিল ঘোষনার পূর্বে মজম্মিল আলীর বসত বাড়ির বাংলো থেকে ভোট কেন্দ্র সড়িয়ে দক্ষিণ বড় ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র ঘোষণার সাত দিনের মধ্যেই একই ওয়ার্ডে নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসার।

অপর সূত্র জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এর মধ্যে দুই জন সদস্য প্রার্থীর এলাকায় পড়েছে মহিলা ভোট কেন্দ্র অপর এক প্রার্থীর এলাকায় পড়েছে পুরুষ ভোট কেন্দ্র। এতে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের কর্তৃক কেন্দ্রগুলোতে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কাসহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে।

ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিতা রানী নাথ, রাজনা বেগমসহ একাধিক সাধারণ মহিলা ভোটাররা জানান, আমাদের ওয়ার্ডের অন্যান্য এলাকা থেকে ভোটার সংখ্যা কম থাকা সত্বেও কার স্বার্থে দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করেছেন নির্বাচন অফিসার তা আমরা জানি না। দক্ষিণ ধিরারাই বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র থাকার পরও এখানে নারীরা ভোট দিতে পারবেন না। নারী ভোটারদের জন্য ওয়ার্ডের উত্তর পাশে আলাদা ভোট কেন্দ্র রাখা হয়েছে। সাধারণত নারীরা পরিবারের পুরুষদের সাথেই ভোট দিতে যান। এবার আলাদা হওয়ায় অনেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আশংঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মুমিন ও গোলাম হোসনের বলেন, দক্ষিণ বড় ধিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র ঘোষণার পর ওয়ার্ডবাসীর দীর্ঘ দিনের কাঙ্খিত আশা পূর্ন হলেও একটি প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় তালিকা প্রকাশের ৭ দিনের মাধ্যে জেলা নির্বাচন অফিসার কর্তৃক দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহিলা ভোটাররা বিরম্বনায় পরবেন।

ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি শানুর মিয়া বলেন, দক্ষিণ বড় ধিরারাইয়ের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন অফিস বার বার দক্ষিণ বড় ধিরারাই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে এই কেন্দ্রে ভোট হয়নি।

গত ২১ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্র হিসাবে এই বিদ্যালয়ে নামসহ তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন অফিস। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নারী পুরুষদের আলাদা কেন্দ্র নির্ধারন করা হয়। এতো কম সংখ্যক ভোটারের জন্য দুটি কেন্দ্র স্থাপন হলে সরকারের দ্বিগুন অর্থ ব্যয় হবে।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, একই ওয়ার্ডে দুটি ভোট কেন্দ্র স্থাপনকে ঘিরে জটিলতার খবর পেয় সরজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে সবাইকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বলেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে থানাপুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোড়দারসহ সব রখমের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু লায়েশ দুলাল বলেন, মজম্মিল আলী সাহেব উনার বাড়িতে ভোট গ্রহণের কেন্দ্র হিসাবে অনিহা প্রকাশ করায় প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে দক্ষিণ বড় ধিরারাই প্রাথমিক বিদ্যালকে ভোট কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় জটিলতা দেখা দিলে, তা নিরসনে জেলা নির্বাচন অফিসার সড়জমিন পরিদর্শন করেছেন। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ে ওই ওয়ার্ডে দুটি কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মহিলা পুরুষের পৃথক ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ভোট কেন্দ্রের বসত বাড়ির মালিক মজম্মিল আলী বলেন, এই ওয়ার্ডে কোন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিগত ২৫ বছর ধরে আমার বাড়ির বাংলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে সমাজ সেবার অংশ হিসাবে ভোট কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগীতা করে আসছি। কিন্তু এবার নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আমার সাথে কোনো আলেচনার প্রয়োজন মনে না করেই অল্প সংখ্যক ভোট গ্রহণে দুটি ভোট কেন্দ্র ঘোষণা করেন।

সিলেটের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শুকুর আহমদ মিয়া বলেন,দয়ামীর ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী একটি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহন হলে ভালো হতো। স্থানীয়দের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়ায় সড়েজমিনে গিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহনসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর শুনানি গ্রহনের পর শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠান সম্পন্নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষদের পৃথক ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা করে দুটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সুষ্ট ভাবে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে সবাইকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতার আহব্বান জানান।

এবিএ/০৬ জানুয়ারি