বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে কান্ট্রি অ্যান্ড প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিং

প্রকাশিত: ১১:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২২

বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে কান্ট্রি অ্যান্ড প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডিং

সিলনিউজ ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের রপ্তানি ও বাণিজ্যের প্রসারে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেন আপনাদের বাজার ঠিক রাখতে পারেন, আরো উন্নত করতে পারেন- সেদিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দিবেন অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সহজ ও সরল ভাষায় নিজস্ব ব্র্যান্ড সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে এ ব্যাপারে তার দুরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন যা অত্যন্ত সময়োপযুগী। গত প্রায় দুই দশক ধরে শহর, দ্বীপ এমনকি দেশের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যেও একটি অনুরণিত পরিচয় তৈরি করার আকাংখা দেখা যায়। যারা খুব আক্রমণাত্মকভাবে নিজেদের ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে এবং আজীবন স্থায়ী গ্রাহক সম্পর্ক তৈরি করতে কর্মকৌশল তৈরি করছেন।

“বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” (www.bangabandhusbangladesh.ca ) বাঙালি জাতির জন্য একটি ব্র্যান্ডিং প্রস্তাব গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ কানাডা থেকে চালু করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মত্যাগের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য হলো- দর্শকদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাঙালির রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি তাদের আগ্রহ, বোঝাপড়া এবং উপলব্ধিকে অনুপ্রাণিত করা এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সংলাপে জড়িত করা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে বাঙালি জাতির ব্র্যান্ডিং হিসেবে প্রস্তাবের যথার্থতা ইতোমধ্যে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি দেশ তার নাগরিক, আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার এবং বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের মনে একটি স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড নিয়ে তাদের অবস্থানের দাবি রাখে । এ ধরনের একটি অবস্থানের দাবি করার জন্য, সংশ্লিষ্ট দেশকে অনেকগুলো ক্রিয়াকলাপের্ সমন্বয় এবং একীভূত করার জন্য সম্পদ বিনিয়োগ করতে হয় । কেন দেশ ব্র্যান্ডিং একটি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন একটি জাতি যা শক্তিশালী এবং ইতিবাচক তাকে ব্র্যান্ড করা যায় , তখন পর্যটক, দক্ষ শ্রমিক এবং বিনিয়োগের জন্য দেশটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। তখন একটি স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি তৈরি হবে এবং উচ্চ মূল্য বজায় রাখতে ও সক্ষম হবে। কান্ট্রি -অফ-অরিজিন হওয়ায় ব্যবসাগুলিতে ইতিবাচক প্রভাব পরবে ও দেশ উপকৃত হবে।

সম্প্রতি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর পূর্বাচলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত ২৬তম ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গবেষণাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেই। আমার মনে হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরো গবেষণা দরকার। আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং মান সেগুলো বিশেষভাবে নিরূপণ করা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান ধরে রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প মালিক এবং উদ্যোক্তদের আমি অনুরোধ করব আপনারা নিজের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদেরই উদ্যেগ নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে প্রযুক্তির যুগে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আমরা কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

করোনার মাঝেও অর্থনীতিকে সীমিত আকারে হলেও এগিয়ে নেওয়ায় তিনি শিল্প উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মালিক-শ্রমিক সবাইকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে কখনো স্থবির হয়নি। স্বল্পমাত্রায় হলেও আমরা সব চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে পৃথিবীর বহু দেশ কিন্তু এই সমস্যায় পড়েছে। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে তাঁর সরকার প্রবৃদ্ধিকে ৮ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিল উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এটি অতিক্রমেরও আশবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতোমধ্যে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রত্যেকটি দূতাবাসকে সেভাবেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরো সহজভাবে করতে পারি সেজন্য দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩ দেশের বিষয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের অর্জনকে ধরে রেখে যদি সামনে কোন চ্যালেজ্ঞ আসে সেটাও যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এএইচএম আহসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

একটি দেশের ব্র্যান্ডিং কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এর ফলাফল হলো একটি নির্দিষ্ট অনুশীলন, পরিচয় বা গুণমানের সঙ্গে দেশেটির অটুট সংযোগ। যেমন- জার্মানি এর প্রকৌশল আন্তর্জাতিক মানের এবং সরকার জার্মানির জন্য নিয়ন্ত্রক সহায়তার সব সুবিধা দেয়; যাতে তারা নির্ভুল প্রকৌশলে নেতৃত্ব দিতে পারে। বিএমডাব্লিউর মতো জার্মান গাড়িগুলো জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিংকে এর অনন্য বিক্রয় পয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি বলে দাবি করা হয়। এ গ্লোবাল ব্র্যান্ড পজিশনিং অর্জনের জন্য জার্মানিকে তা নিশ্চিত করতে হয়েছে। একটি দেশের ব্র্যান্ডিং করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা আত্মপ্রত্যয়ী এবং কতটাই বা প্রস্তুত!

সিলনিউজবিডি ডট কম / এস:এম:শিবা
যুগান্তর

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ