মিজান ভাইয়ের জন্য দুই হাত তুলি

প্রকাশিত: ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২২

মিজান ভাইয়ের জন্য দুই হাত তুলি

সাজেদুল হক

সুপ্রিম কোর্ট। কাওরান বাজার। মানবজমিন অফিসে মতি ভাইয়ের রুম। আপনাকে কতোবার দেখেছি। কিছুটা বেখেয়ালি। প্রাণখোলা হাসি। উচ্চকণ্ঠ। আজও কানে বাজে।
তারচেয়ে বেশি আপনাকে দেখেছি পত্রিকার পাতায়। একটা সময় ছিল। রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করতাম। মিজানুর রহমান খান কী লিখেন! আর অফিসে গিয়ে বসের ঝাড়ি খাই। পরে অবশ্য সবাই বুঝতে পেরেছেন। চাইলেই মিজানুর রহমান খান হওয়া যায় না!

দেখতে দেখতে আপনার চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। কী অবলিলায় বলে দেওয়া। জীবন এতো ছোট কেন? যতোই আফসোস করি না কেন? মেনে না নিলেও মেনে নিতে হয়। আপনার মৃত্যুর পর লিখেছিলাম, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আপনাকে মিস করবে। মিজান ভাই, সত্যি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আপনাকে বড্ড মিস করছে। বিশেষ করে আইন সাংবাদিকতা। আমরা শ্রেণিকক্ষে সাংবাদিকতা পড়েছি। যদিও জানতাম, কাজ এবং পড়ার মধ্যে প্রায়ই তফাৎ থাকে। কিন্তু এটা আজও বিশ্বাস করি, টুকটাক সাংবাদিকতা পড়া পেশায় কাজেই লাগে। দুনিয়ার বিভিন্ন বাহিনীতে আইকন তৈরি হয়। ট্রেনিংয়ের সময় বলা হয়, তোমরা ওমুকের মতো হও। বাংলাদেশের আইন সাংবাদিকতায় আপনি এমনি একজন আইকন ছিলেন। শুধু আইন সাংবাদিকতার কথাই বা বলছি কেন? ৫০ বছর বয়সে এসে যেকোনো নতুন প্রযুক্তি আপনি দু’হাতে জড়িয়ে ধরতেন। মোবাইল জার্নালিজমে আপনার পারদর্শিতা ছিল বিস্ময়কর। যারা নিজেদের তরুণ দাবি করে এক্ষেত্রে তাদের চেয়ে আপনি ছিলেন অনেক এগিয়ে। দুই বাসের মাঝে রাজীবের আটকে পড়া হাতের ছবি তুলে রীতিমতো সাড়া জাগিয়েছেন। হিসাব বিজ্ঞানের ছাত্র জীবনভর সাধনা করেছেন খবর নিয়ে। আইন থেকে মার্কিন নথি। কি নিয়ে লিখেননি আপনি!

এটা তো সত্যি যতো সহজ করে বলছি, জীবনটা আপনার ওতো সহজ ছিল না। বিশেষ করে সাংবাদিকতার জীবন। এমন একটি দেশে। যেখানে লোকে সবকিছুই পছন্দ করে। শুধু নিজের সমালোচনাটুকু ছাড়া। রেহমান সোবহানের মতো খ্যাতিমান মানুষও গত কয়েক বছরে বারকয়েক বলেছেন, কীভাবে লেখালেখির ক্ষেত্রে তাকে সতর্ক থাকতে হয়। সাবধান থাকতে হয় কী লিখে না বিপদে পড়েন। আপনাকেও লিখতে গিয়ে বারবার ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পড়তে হয়েছে বিপদে। আদালতের ভেতরে-বারান্দায় দৌঁড়াতে হয়েছে। শেষদিকে বিশেষত আদালতপাড়া নিয়ে লেখালেখি বেশ কমিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু বিচিত্র বিষয়ে পারদর্শিতার কারণে লেখা আপনার থামেনি। কলম চলেছে একটানা।
সম্ভবত, আপনিই প্রথম সাংবাদিক। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে যার জানাজা হয়েছে। এই প্রাঙ্গণে আপনি কত ছুটে চলেছেন। এর প্রতিটি ইটই আপনার চেনা ছিল। অন্য কোনো কিছুর জন্য আপনার সাধনা ছিল না। তথ্য ছিল আপনার কাছে পবিত্র। দিনের পর দিন। মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। এই তথ্যের পেছনে আপনি ছুটেছেন। প্রথম আলোতে আপনার কক্ষে দেখেছিলাম পুরনো দিনের নথি, কিংবা সামান্য একটি লিফলেটও কীভাবে আপনি সংরক্ষণ করে রাখতেন।

এই ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগেও নিজেকে কীভাবে অপরিহার্য করে তুলেছিলেন আপনি সেটাতো আগেই বলেছি। কিন্তু আসল কথাটি সম্ভবত বলা হয়নি। এই যুগে, এই সময়ে খবরের পত্রে শুধু খবর দিলেই যে চলবে না তাও আপনার লেখালেখিতে ছিল স্পষ্ট। খবরের ভেতরের খবর এবং তরতাজা বিশ্লেষণ হাজির করেছেন আপনি। বিশেষ করে রায় বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ধারাই তৈরি করেছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। ভবিষ্যতে সে ধারার পুনর্জন্ম নিশ্চয় একদিন হবে।

করোনা মহামরি লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। প্রিয়জন হারিয়েছেন বহু মানুষ। কিছু কিছু মৃত্যু শুধু ব্যক্তি, পরিবারের জন্য নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যেও তৈরি করেছে বিশাল শূন্যতার। পাহাড়ের মতো ভারী শোক বুকে নিয়ে চলছি আমরা। আপনার মৃত্যুও আমাদের জন্য তেমনি। তৈরি করেছে শূন্যতা। এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু আপনি আছেন আমাদের প্রার্থনায়। বিশেষ করে আমরা যারা বিশ্বাসী। তারা দুই হাত তুলে প্রার্থনা করি আপনার জন্য। পরম করুণাময়ের করুণা যেন বর্ষিত হয় আপনার প্রতি।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ