সিলেট ১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২২
মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী : রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আর-রাশি ওয়াল মুরতাশি কিলা হুমা ফিননার। অর্থ : ঘুষ যে দেয় এবং নেয় দুজনই জাহান্নামি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এমন একটা সময় আসবে যখন মানুষ ঘুষ দেওয়া-নেওয়াকে সামাজিক নিয়ম বানিয়ে ফেলবে।’ নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ ঘুষ দেবে-নেবে উপহারের নামে।’ হাদিসগুলো মিশকাত থেকে নেওয়া। ঘুষ হলো কোনো কাজের যোগ্য আপনি নন, কিন্তু সে কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আর্থিক কিংবা যে কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়া। নবী (সা.) ‘ঘুষ দাতা-গ্রহীতা দুজনই জাহান্নামি’ বলেছেন। বাংলাদেশের আইনেও ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোই দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ ঘুষই এ দেশের সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য অপরাধ হয়ে উঠেছে। সব সরকারই কিছু না কিছু দুর্নীতি রোধে সফল হয়েছে। কিন্তু ঘুষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে কোনো সরকারই এ দেশে খুব একটা সফল হয়নি। ঘুষ যারা প্রতিরোধ করবে তারাই ঘুষ দেওয়া-নেওয়ায় অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং আছে। তাই ঘুষ নামক এ কাজটি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে।
একটা সময় নির্দিষ্ট কিছু কাজে ঘুষ লাগত। এখন হেন কাজ ঘুষ ছাড়া হয় না। বিশ্বাস করুন অথবা না-ই করুন ইমাম নিয়োগে পর্যন্ত রমরমা ঘুষ বাণিজ্য হয়। শিক্ষা, সেবার মতো পবিত্র কাজগুলোয় ঘুষের আদান-প্রদানের কথা তো এখন সবার জানা। হে বাংলার মুসলমান! তোমার ধর্ম তোমার নবী এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বরা ঘুষের সন্দেহে উপহারকেও চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর সেই তুমিই আজ ঘুষের টাকার প্রতি চকচকে লোভের চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাক! ছি ছি এত অধঃপতন হয়েছে তোমার! ভাবতেও গা ঘিন ঘিন করে ওঠে।
বিখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেন, ‘পৃথিবীর সব বাবার মতোই আমার বাবাও সন্তানপ্রেমিক ছিলেন। তিনি শাসন করতেন কিন্তু ভয়াবহ রকম রাগ করতে কখনই দেখা যায়নি। একবার বাবা গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান নির্বাচিত হন। পরদিন কেউ একজন এসে বাবাকে একটি উপহার দিয়ে যায়। বাবা বাসায় না থাকায় আমিই উপহারটি গ্রহণ করি। বাবা এলে আমি আনন্দের সঙ্গে উপহারের কথা বলি। বিনা আভাসেই যেন তুফান শুরু হয়ে গেল। এমন ভয়ংকর রাগ করতে বাবাকে আমি আগে-পরে আর কখনো দেখিনি। বাবা বললেন, এত দিন কেন ওরা আমাকে উপহার দেয়নি? আজ দায়িত্ব পেয়েছি আর উপহার নিয়ে এসেছে! এটা ঘুষ ছাড়া অন্য কি? আর তুমিই বা কোন বুদ্ধিতে এ উপহার নিয়ে নিলে? এরপর আর কখনই এমনটি করবে না।’ আবদুল কালাম লিখেন, ‘বাবার এ আচরণ আমার মনে এমনভাবে গেঁথে যায়- ঘুষ তো দূরের কথা অন্যসব অপরাধ আমার সামনে এলেই আমি আঁতকে উঠতাম।’ হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) ওমর (রা.)-এর স্ত্রীকে একটি দামি পোশাক উপহার পাঠান। কারণ ওমর (রা.) রাষ্ট্রপ্রধান তিনি অবশ্যই উপহার নেবেন না। কিন্তু তাঁর পরিবারের জন্য তো উপহার নিতে নিষেধ নেই। কিন্তু ওমর (রা.) এ কাপড়টিও ফেরত পাঠালেন এবং আবু মুসা আশআরিকে কঠোর হুঁশিয়ার করে দিলেন। এ ঘটনা উল্লেখ করে মিসরের গবেষক সাইয়েদ ওমর তেলমেসানি (রহ.) বলেন, ওমর (রা.) খুব ভালো করেই জানতেন শাসককে উপহার দেওয়ার পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য অবশ্যই থাকে। তিনি যদি পরিবারের জন্যও উপহার নেওয়ার অনুমতি দিতেন তবে অন্য প্রশাসকদের জন্য এটা অনুকরণীয় হয়ে যেত। আর অল্প সময়ের মধ্যে ঘুষ পুরো মুসলিম জাহানে ভয়াবহ আকারে মাথা চাড়া দিয়ে উঠত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঘুষ নামক জাহান্নামি কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দিন।
লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সেন্টার জামে মসজিদ, ঢাকা।
সাকিব আহমেদ / ১২ জানুয়ারি
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি