সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২২
সেলিম জাহিদ:: ১৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং ৩৭ জনের বাসায় পুলিশের অভিযান চালানোর অভিযোগ। গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ না হলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের ঘোষণা।
বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেই। দলীয় প্রতীক ও প্রার্থী না থাকলেও এ নির্বাচনে দলটির স্পষ্ট ছায়া আছে। এ ছায়া নিয়ে ‘হাতি’ প্রতীকে লড়ছেন দলের সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। এই ছায়া সমর্থন নিয়ে ভোটযুদ্ধে কত দূর যেতে সক্ষম হবেন তৈমুর, সেই আলোচনা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে করে নৌকার প্রার্থীর জন্য মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়ার পর এই আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে। কারণ, এত দিন আলোচনা ছিল, স্বদলীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আইভীকে হারাতে তৈমুরকে নেপথ্যে সহযোগিতা করছেন নারায়ণগঞ্জের দুই সাংসদ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান। অর্থাৎ ওসমান পরিবারের একটা ছায়া তৈমুরের ওপর রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের চাপে বা পরিস্থিতিগত কারণে শামীম ওসমানের ওই ঘোষণার পর তৈমুরের ওপর থেকে ওসমান পরিবারের ছায়া সরে যেতে বাধ্য হবে বলে অনেকে মনে করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টিও (জাপা) নারায়ণগঞ্জ সদর আসনে দলের সাংসদ সেলিম ওসমানকেও সতর্ক করেছে। গত রোববার জাপার শীর্ষ পর্যায় থেকে চিঠি দিয়ে সেলিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয় নির্বাচনে কারও পক্ষ না নেওয়ার। এ ছাড়া তৈমুরের ওপর স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোরও ছায়া সমর্থন রয়েছে বলে আলোচনা আছে।
তৈমুর আলম খন্দকার নিজেকে ‘কম্বিনেশন অব অল’ (সব দল-মতের সমন্বিত প্রার্থী) বলে দাবি করেন। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমি বুঝেশুনে দাঁড়িয়েছি। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী হয়েছি।’
তবে সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতে, ‘কারও ওপর যত ছায়াই থাকুক, কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। কারণ, ভোটাররা অলরেডি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন, ভোট তাঁরা কাকে দেবেন।’
তৈমুর আলম খন্দকার নিজেকে ‘কম্বিনেশন অব অল’ বলে দাবি করেন। তাঁর বিষয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্পষ্টতা।
তৈমুর আলমের ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় অবস্থান নিয়েও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্পষ্টতা আছে। কারণ, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তৈমুরকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে ‘প্রত্যাহার’ করা হয়। কিন্তু তাঁরই নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে অংশ নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এ টি এম কামালসহ অনেক নেতা। এঁদের মধ্যে তৈমুরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছেন এ টি এম কামাল। তাঁদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বিএনপির এই অবস্থান কতটা নীতিগত আর কতটা কৌশলগত, তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। এই অস্পষ্টতা নিয়েই নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তৈমুরের জন্য কাজ করছে, আরেকটা অংশ চুপচাপ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ‘আবেগ’ বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব এ টি এম কামাল। তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে বিএনপির না যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই বড় কিছু আছে। আমরা স্থানীয় নেতা, এত কিছু বুঝি না। আমরা বুঝি নৌকার বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ আছে, মানুষ সেটা ভোটের মাধ্যমে দেখাতে চায়।’ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তৈমুরের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে এ টি এম কামাল বলেন, ‘তিনি (তৈমুর) ২০১১ সালে মেয়র নির্বাচনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন, কিন্তু নির্বাচন করতে পারেননি। এটি হয়তো তাঁর শেষ নির্বাচন।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তাঁরা আগে যা-ই করেন না কেন, এই মুহূর্তে বর্তমান সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, দলটি সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই প্রার্থী হওয়ার পর তৈমুরকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘মানুষ বলে এটা একটা কৌশল। আমি বোকা মানুষ, এত কিছু বুঝি না। আমি মনে করি বিএনপি একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে আমাকে মুক্ত করে দিয়ে। এখন আমি জনতার প্রার্থী। এখন আর ভোটের পাঁচ ঘণ্টা আগে কেউ বলার নেই যে বলবে, বসে পড়েন।’
তৈমুরের ভোটের জন্য মাঠে সক্রিয় এমন বিএনপির নেতাদের হিসাব হচ্ছে, পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নানা কারণে মানুষ সরকারের ওপর বিরক্ত। অন্যদিকে ‘সন্ত্রাসের গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমানের বিরোধিতা করে আইভীর যে উত্থান, সেটার ধার এখন কমে গেছে। শামীম ওসমান ধারে বা ভারে কোনোটাতেই আগের অবস্থানে নেই। এ ছাড়া আইভী ১৮ বছর ধরে মেয়র আছেন। গৃহকর ও পানির বিল বৃদ্ধিসহ কিছু বিষয়ে মানুষের অসন্তোষ আছে।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর দাবি, গৃহকর ও পানির বিল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ট্যাক্স বাড়াইনি। হ্যাঁ, পানির বিল কিছু যুক্ত হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু পানির বিলও আমরা সেভাবে করিনি। যে জায়গাগুলোর মধ্যে আমরা এখনো পানির লাইন দিতে পারিনি, সেখানে বিল মওকুফ হবে।’
ঘুঘুর ফাঁদ দেখতে শুরু করেছি: তৈমুর
গতকাল সকালে শহরের মিশন পাড়ায় নিজের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ টি এম কামালের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তৈমুর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, গত তিন-চার দিনে তাঁর ১৭ জন নেতা-কর্মীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। ৩৭ জনের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের তাঁর নির্বাচন সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার দিবাগত রাতে বাবুপাড়ার আশরাফ খান, মোশাররফ হোসেন, জোসেফসহ ৩০ থেকে ৪০ জন নেতার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আশরাফ খানের স্ত্রী সামিয়া ইসলাম বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ তাঁর স্বামীকে খালি গায়ে ধরে নিয়ে যায়। এই শীতের মধ্যে তাঁকে একটা সোয়েটার পরতেও দেয়নি পুলিশ।
তৈমুর আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক গত রোববার সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় আমাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘ঘুঘু দেখেছেন, ঘুঘুর ফাঁদ দেখেননি। টের পাবেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।’ ’ নানকের ওই বক্তব্যের পর আমি ঘুঘুর ফাঁদ দেখতে শুরু করেছি। আমার নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি শুরু হয়েছে।’
তৈমুর বলেন, গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ না হলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সুপারে কার্যালয়ের সামনে বসে পড়া ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় থাকবে না।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, কেবল তাঁদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালানো হয়। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুত্র : প্রথম আলো
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি