সিলেট ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২২
সিলনিউজ ডেস্ক:: সারা বিশ্বেই গেম আসক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মনঃস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
২১ বছর বয়সী সাইফ (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পড়ালেখায় ভালোই ছিল। করোনার এই সময়ে বাসায় থাকতে থাকতে শুরু হলো মোবাইল আর ল্যাপটপে গেমে ব্যস্ত থাকা। বেশির ভাগই অনলাইন গেম। ধীরে ধীরে খেলার পরিসর বাড়তে থাকল। অনলাইনে দেশি-বিদেশি, পরিচিত-অপরিচিত নানা অনলাইন গেম খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচয়—ইয়ারফোনে কথা বলা শুরু হলো। ফলাফল—সেমিস্টার ফাইনালে কয়েকটি বিষয়ে গ্রেড অনেক কমে গেল। সেই সঙ্গে তার আচরণের পরিবর্তন হতে থাকল। বাসায় কয়েক মুহূর্তের জন্য ওয়াই-ফাই বন্ধ থাকলে তার উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। অস্থিরতা শুরু হয়। সারা রাত জেগে থাকা, চিৎকার করে অনলাইন গেম খেলা, দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো, খাবার টেবিলে বসে না খাওয়া, নিজের রুমে প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে গেম খেলতে খেলতে খাওয়া, সারা দিন ঘরের দরজা বন্ধ রাখা আর অল্পতেই রেগে যাওয়া। ইদানীং সে সব কথায়ই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝাঁজিয়ে ওঠে। আগের মতো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়ও যায় না, পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
kalerkantho
সাইফের মতো বয়সী তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে গেমের আসক্তি নিয়ে অনেক মা-বাবাই এখন চিন্তিত থাকেন। গেম খেলা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে এতে আসক্ত হয়ে পড়া। গেম খেলার বিষয়টি যখন চিন্তা আর আচরণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সামাজিক দক্ষতা কমিয়ে দেয় বা দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান খারাপ করে দেয়, তখন তা আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।
সারা বিশ্বেই গেম আসক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মনঃস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অনলাইন গেম, মুঠোফোন, কম্পিউটার বা ভিডিও গেমের ক্ষতিকর ব্যবহারকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত মানসিক রোগ নির্ণয় বিষয়ক গাইডলাইনে (ডিএসএম-৫) অনলাইন আসক্তিকে ‘ইন্টারনেট গেমিং ডিস-অর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করে গবেষণার ভিত্তিতে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছিল।
কিভাবে আসক্তি জন্মায়
গেম আসক্তি অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের (ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা, মদ ইত্যাদি) আসক্তির মতোই। পার্থক্য হচ্ছে এটি আচরণগত আসক্তি, আর অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের আসক্তি হচ্ছে রাসায়নিক আসক্তি। গেম খেলতে খেলতে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের একটি রাসায়নিক বস্তুর নিঃসরণ বাড়ে, যা আমাদের রিওয়ার্ড সেন্টার বা পুরস্কার কেন্দ্রকে উদ্দীপ্ত করে আর বারবার গেম খেলতে বাধ্য করে। মস্তিষ্কের যে অংশে (রিওয়ার্ড সেন্টার) ইয়াবা বা গাঁজার মতো বস্তুর প্রতি আসক্তি জন্ম নেয়, ঠিক সেই অংশেই ইন্টারনেট বা গেমের প্রতি আসক্তি জন্মায়। তাই একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
আসক্তির মূল লক্ষণ হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই গেম খেলা শুরু করে দেয়, গেম খেলতে খেলতে খায়, জীবনে আনন্দের সব উৎস হচ্ছে গেম খেলা। দিন দিন গেম খেলার সময় বাড়তে থাকবে। সামাজিকতা কমে যাবে। কারো সঙ্গে মিশবে না। নিজেকে গুটিয়ে রাখবে।
ক্ষতি কী
সামাজিক জীবন বাধাগ্রস্ত হবে। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে। সামাজিক সম্পর্কগুলোর মূল্য কমতে থাকবে। সামাজিক দক্ষতা কমে যাবে। সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করার কারণে নিজের ভেতর গুটিয়ে থাকবে।
নিজের যত্ন কম হবে। সময়মতো খাবে না, ঘুমাবে না, স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। পড়ালেখা ও কাজের মান কমে যাবে। অতি উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, মুড ডিস-অর্ডার এবং তীব্র মানসিক চাপের মতো মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।
সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া বা সাইবার জগতের অপরাধে জড়িয়ে আইনি ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। ইন্টারনেট বা গেমের বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে আচরণ পরিবর্তিত হয়ে যায়, আচরণে আগ্রাসী ভাব দেখা দেবে। অল্পতেই রেগে যাবে। কখনো নিজের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা অন্যকে আঘাত অথবা হত্যা করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে বা মোবাইলে গেমে বসে থাকতে থাকতে আর ইয়ারফোন বেশি ব্যবহার করতে করতে ঘাড়ের মাংসপেশি আর মাথা ব্যথা, মেরুদণ্ডের সমস্যা, চোখের আর কানের সমস্যা হতে পারে।
করণীয় কী
ইন্টারনেটের নিরাপদ আর যৌক্তিক ব্যবহারে কিশোর-তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গেম খেলার একটি সময়সীমা বেঁধে দিন। বাসার ডেস্কটপ কম্পিউটারটি প্রকাশ্য স্থানে (কমন এরিয়া) রাখতে হবে।
সন্তান প্রযুক্তিতে অতি দক্ষ হবে বা হয়ে গেছে—এই ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন না বা আত্মতৃপ্তিতে ভুগবেন না। তার বয়স প্রযুক্তির উপযোগী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। মা-বাবারা সন্তানের সঙ্গে গেম খেলুন। এতে আপনি তার খেলার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আর কী ধরনের গেম সে খেলে তা নির্ধারণ করতে পারবেন।
শারীরিক খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে। বাসায় ক্যারম, লুডুসহ নানা ইনডোর গেম খেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আসক্তির লক্ষণ দেখা দিলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড এডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
সিলনিউজবিডি ডট কম / এস:এম:শিবা
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি