সিলেট ১৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২০
মনজুরুল আহসান বুলবুল :;
ব্যবসা, মুনাফা বা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা আমার বিষয় নয়। তবে পেশার কারণেই চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। এসব নিয়ে চর্চা করেন এমন এক বিশেষজ্ঞ সুহৃদ, জ্ঞান দিয়ে বলেছিলেন : ভালো মালিক, ভালো দলনেতা আর ভালো শ্রমিক-কর্মচারী এক হলে কোম্পানি ভালো চলে, ভালো মুনাফাও হয়। আমাদের নেই নেই করেও হাতে গোনা হলেও এমন কিছু ভালো নজির আছে।
আবার মালিক ভালো, দলনেতাও ভালো কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারী তেমন ভালো নয়, তা হলেও কোম্পানি চলে কিন্তু তেমন মুনাফা হয় না। আবার দলনেতা যদি মূর্খ বা গবেট কিসিমের হয় তাহলে চতুর শ্রমিক-কর্মচারীরা তাঁর মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়, মালিক দূরে থেকে কিছুই বুঝতে পারেন না, কোম্পানির বারোটা বাজতে শুরু করে। আবার দলনেতার যদি লক্ষ্য হয় শুধু সময় কাটানো, মাসে মাসে বেতন গোনা আর তাঁর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় শ্রমিক-কর্মচারীদের চতুর নেতারা, তাহলে এঁরা নিজেরা হৃষ্টপুষ্ট হয়। আখেরে কোম্পানি লাটে ওঠে। মালিক কোম্পানি হারায়, সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা চাকরি হারিয়ে পথে বসে।
সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়া পাটকলগুলোর ক্ষেত্রে এর মধ্যে আসলে কোনটা ঘটেছিল, পরিণতি কেন এমন হলো নিশ্চয়ই গবেষকরা তা নিয়ে গবেষণা করবেন। তখন হয়তো এও জানা যাবে এর জন্য কতটা মালিক [এখানে সরকার], কতটা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ [এখানে বিজেএমসি] আর কতটা শ্রমিকরা দায়ী।
তবে সবশেষ খবর : ধারাবাহিক লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চাকরি হারিয়েছে ২৫ হাজার শ্রমিক। একটাই সান্ত¡না, তারা একসঙ্গে সমুদয় পাওনা পাচ্ছেন।
শ্রমিকনেতারা মনে করেন, এর দায় শ্রমিকদের নয়। ভ্রান্ত ব্যবস্থাপনার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আলিম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন : পাটকলগুলোকে বাঁচানো সম্ভব ছিল, বেসরকারি পাটকল ব্যবসা করতে পারলে আমরা কেন পারব না!
সরকারের দাবি : বন্ধের কারণ লাগাতার লোকসান। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই সরকারি পাটকলগুলো লোকসান দিয়েছে প্রায় ৫৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু শ্রমিক আন্দোলন থামাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়-ব্যয় ও লোকসানের পরিসংখ্যান ও লোকসানের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজেএমসি দেখিয়েছে, এ সময় বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন থামানো ও গেট মিটিং পরিচালনায় সংস্থাটির ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট লোকসানের প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। এ ছাড়া সিবিএ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামাজিক দায়বদ্ধতা বাবদ ২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা জানানো হয়েছে বিশ্লেষণে।
এ হিসাবে আপত্তি তুলছেন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার বেশ কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। তারা বলছেন : মিলগুলো থেকে শ্রমিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ বা সহযোগিতার কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি। আন্দোলন থামাতে শ্রমিকদের কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্পপ্রধান কামরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আন্দোলন থামাতে শ্রমিকদের অর্থ প্রদানের প্রশ্নই ওঠে না। যশোরের কার্পেটিং জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া এবং খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান জানান, সিবিএ অফিস চালানোর জন্য কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বরাদ্দ তারা পাননি। কোনো ধরনের আন্দোলন হলে মিল বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা থেকে তারা নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের বুঝিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে কোনো কাজ করেননি। ফলে এখানে অর্থ আসার কোনো প্রয়োজনও নেই।
সংবাদমাধ্যম বলছে : বিষয়টি নিয়ে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
পাটকলে পুরো লোকসান চিত্র নিয়ে আলোচনা করতে যোগ্যজন রয়েছেন। আমার কৌতূহল এ হিসাবের তিনটি খাত ঘিরে। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছি লোকসানের এ তিন খাতের প্রতি।
এ লোকসানের অভিনব একটি খাত দেখছি, যেখানে বলা হচ্ছে : শ্রমিক আন্দোলন থামাতে ও গেট মিটিং পরিচালনায় এক বছরে ব্যয় ৬৬ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় খাত : সিবিএর জন্য বরাদ্দ এক বছরে ৩ কোটি টাকা।
তৃতীয় খাত : সামাজিক দায়বদ্ধতা বাবদ ২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় এক বছরে।
এ তিন খাতে মাত্র এক বছরে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯০ কোটি টাকার বেশি। ১১ বছরের হিসাব যোগ করলে শুধু এ তিন খাতে ব্যয় কত দাঁড়াবে সে অঙ্কটি সামনে নেই কিন্তু ধারণা করতে পারি এটিও বিশালই হবে।
প্রথমেই দেখা যাক ‘শ্রমিক আন্দোলন থামানোর’ জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ! এর ব্যাখ্যা কী। যে কোনো শিল্পের শ্রমিকরা যখন কোনো আন্দোলনে নামেন, তখন তাদের একটা দাবিনামা থাকে। সেখানে আর্থিক চাহিদার দাবিও থাকে। এ দাবি আদায়ের জন্য গেট মিটিং খুবই পরিচিত কর্মসূচি। কখনো দাবি আদায় হয়, কখনো আংশিক হয়, কখনো হয় না। যদি শ্রমিকরা দাবি আদায় করতে পারেন তাহলে তা কোম্পানির নিয়মিত ব্যয় বা খরচের অংশ হয়ে যায়। কিন্তু আন্দোলন ‘থামানোর’ জন্য, ‘গেট মিটিং পরিচালনার’ জন্য কোম্পানির ব্যয়টা কী। সে তো ইউনিয়নের খরচ। আন্দোলন ‘থামাতে’ এ টাকা কাদের দেওয়া হয়েছে? এ টাকা কে বা কারা নিয়েছে? কোন আন্দোলন, কারা কীভাবে থামিয়ে দিয়েছে? সাধারণ ধারণা থেকে বলি : সাধারণ শ্রমিকরা এ বাঁটোয়ারার মধ্যে থাকেন না। সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্তরিকভাবেই আন্দোলনে নামেন। চাকরি হারান, কখনো কখনো জীবনও হারান। কখনো জেতেন, কখনো পিছু হটেন। কিন্তু টাকা নিয়ে আন্দোলন করেন না, থামানও না। যতটুকু করেন নিজেদের বাঁচার দায় থেকেই করেন। আদমজীতে শ্রমিক আন্দোলনের অকুতোভয় শহীদ তাজুলের কথা আমরা সবাই জানি।
পাটকলে শ্রমিক আন্দোলন থামানোর ঠিকাদার কারা? এ বাঁটোয়ারার মধ্যে কারা আছেন বা ছিলেন তাদের নাম-পরিচয় জানা জরুরি। এতে লোকসানের অনেক নায়ক-খলনায়কের পরিচয় জানা যাবে।
দ্বিতীয় খাতে দেখি মাত্র এক বছরে পাটকলগুলোর সিবিএ নিয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি! এ হিসাবও বুঝি না। সিবিএ কীভাবে গঠিত হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে তা শ্রম আইনে স্পষ্টই বলা আছে। সিবিএ কোম্পানি বা মালিকের অর্থসহায়তায় চলবে এমন বিধান নেই। পাটকলের সিবিএ নেতারাও বলছেন তারা এ ধরনের কোনো অর্থসহায়তা নেননি। প্রকল্প পরিচালকও বলছেন এ খাতে কোনো খরচ হয়নি। তাহলে এক বছরে এ ৩ কোটি টাকা গেল কোথায়?
সিনেমায় প্রায়ই দেখা যায় মিল মালিক টাকা দিয়ে ইউনিয়ন নেতাদের বা সিবিএ কিনে নিচ্ছেন। টাকা ছড়িয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশেও দেখেছি ইউনিয়ন দখলে রাখতে লাখ লাখ টাকা ছড়িয়ে এমন নেতা নির্বাচনের চেষ্টা হয়েছে, যে নেতা নির্বাচিত হবেন শ্রমিক-কর্মচারীদের ভোটে কিন্তু পাহারা দেবেন মালিকের স্বার্থ। যারা কোনো দিন শ্রমিকস্বার্থের চৌহদ্দিতে পা রাখেননি তারা যখন টাকা ছড়িয়ে ইউনিয়নের নেতা হতে মাঠে নামেন তখন তার বা তাকে যারা মাঠে নামান তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে এটি যে শ্রমিককল্যাণের মহৎ উদ্দেশ্যে নয়, তা সহজেই বোঝা যায়।
পাটকলেও কি বিজেএমসি এ খেলায় টাকা ঢেলেছে? এ ফাঁদে কি শ্রমিকনেতাদের কেউ কেউ পা দিয়েছেন? এ সবই ধারণাগত প্রশ্ন। কিন্তু জবাব মেলে না।
আর সামাজিক দায়বদ্ধতা? যে কোম্পানি নিজেই বাঁচতে পারে না তার প্রথম দায় তো শ্রমিক-কর্মচারীদের বাঁচানো, কোম্পানি বাঁচানো। এটাই তো তাদের প্রথম সামাজিক দায়িত্ব। তা না করে এক বছরে ২২ কোটি টাকা কোন সামাজিক দায়িত্ব পালনে, কোথায় খরচ হলো তা জানার আগ্রহ অনেকের মতো আমারও।
শুরুতে কোম্পানির ভালো-মন্দের যে সমীকরণ দেওয়া হয়েছিল সেখানেই ফিরি আবার। সমীকরণের শেষ চিত্র অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এখানে বিজেএমসি) কেউ কেউ, সিবিএ নেতাদের কেউ কেউ, আর মালিকপক্ষের (এখানে সরকারের) কেউ কেউ মিলে এ তিন খাতের টাকায় নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন কিনা সে প্রশ্নটি জোরেশোরেই সামনে এসেছে। তারা নিজেরা হৃষ্টপুষ্ট হয়ে, রাষ্ট্রের কাঁধে লোকসানের বোঝা চাপিয়ে, মিলগুলোয় তালা লাগিয়ে ২৫ হাজার পরিবারকে পথে বসালেন কিনা তা বের করা জরুরি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ ধরনের ব্যয় করার আইনি বৈধতা আছে কিনা বা থাকলেও কী ধরনের ব্যয়ের স্বাধীনতা আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারে না, অথচ কিছু শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ ধরনের নামে কিংবা সুবিধাজনক খাত দেখিয়ে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে শ্রমিকদের উন্নয়নে যে অর্থ সরকার দিচ্ছে, তা আসলে তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তাই বিজেএমসি থেকে কারা কতটুকু কীভাবে সুবিধা নিয়েছেন, তা অডিটের মাধ্যমে বের করা দরকার। তা কারখানা পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হতে হবে। যদি কোনো দিন এ অডিট হয় সে আশায় থাকা ছাড়া কীইবা করার আছে।
মালিক, ব্যবস্থাপক আর দুর্নীতিবাজ ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের চক্র একসঙ্গে হলে দুর্নীতি কেমন সরল গতিতে চলে তা নিয়ে চমৎকার গল্প বলতেন কিংবদন্তি শ্রমিকনেতা জসিম উদ্দিন ম-ল। তাঁর এ গল্পটি আরও ব্যবহার করেছি। প্রাসঙ্গিক বলে আবারও বলি। গল্পটির সবকিছুই প্রতীকী।
এক রেল জংশনে স্টেশন মাস্টার খুব মন খারাপ করে বসে আছেন। দেখে রেলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এগিয়ে গেলেন। জানতে চাইলেন স্যারের মন খারাপের হেতু কী। বিমর্ষ স্যারের জবাব, মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, বরপক্ষ আসবে কিন্তু পকেটে টাকা নেই। চতুর ট্রেড ইউনিয়ন নেতার তড়িঘড়ি পরামর্শ : স্যার! অফিসের সামনে রেলের যে ইট পড়ে আছে ওগুলো বিক্রি করে দিন। নগদ কিছু আমাকেও দিয়েন, বাকি টাকায় মেয়ের বিয়ে সারেন। বিস্মিত স্টেশন মাস্টার নেতার দিকে তাকান। ভয়মিশ্রিত কণ্ঠে জানতে চান : সরকারি সম্পত্তি ইট বিক্রি করব কী করে। নেতা সাহস দিয়ে বলেন : আপনি আগে কাজ সারেন, পরে আমি দেখব। ভরসা পেয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা তাই করেন। মেয়ের বিয়ে হয়। নেতাও কিছু নগদ পান। সবাই খুশি।
নেতা পরামর্শ দেন : স্যার! হেড অফিসে একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিন যে, দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকা ইটগুলো ‘গরুতে খাইয়া ফেলিয়াছে’। স্টেশন মাস্টারের মন সায় দেয় না, কিন্তু উপায় তো নেই। শেষে তাই করেন। রেলের ইট ‘গরুতে খাইয়া ফেলিয়াছে’ এই খবরে তো হেড অফিস তোলপাড়! কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রথম পদক্ষেপ শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন, পরবর্তী পদক্ষেপ ‘সরেজমিন পরিদর্শন’। রেলের সদর থেকে স্টেশন মাস্টারের কাছে চিঠি গেল। জানানো হলো পরিদর্শক দল যাচ্ছে, সরকারি ইটগুলোর কী অবস্থা সরেজমিনে দেখতে। স্টেশন মাস্টারের মাথায় বাজ। আবার সেই ট্রেড ইউনিয়ন নেতাই ভরসা। নিরুদ্বিগ্ন নেতার পরামর্শ : ‘কোনো চিন্তা নেই। আর যে কয়েকটা ইট আছে সেগুলোও বিক্রি করে, সদর থেকে যারা আসবেন তাদের জন্য ভালো আপ্যায়ন আর কিছু উপহারের ব্যবস্থা করেন। আর আমাকে কিছু খরচাপাতি দিয়েন।’
হলোও তাই। নির্ধারিত দিনে পরিদর্শক দল হাজির। তারা অকুস্থলে গেলেন। দেখেন : ‘ইট তো নেই-ই, ভাঙাচোরা যা আছে তা চেটে খাচ্ছে গরুর পাল। সন্তুষ্ট পরিদর্শক দল চমৎকার আপ্যায়নে ঢেঁকুড় তুলে দ্রুত রিপোর্ট লিখেন : ‘সরেজমিন দেখিলাম। গরু তো আগের ইট খাইয়াছেই, বাকিগুলো দ্রুত না সরাইলে সেগুলোও সাবাড় করিবে।’ ব্যস, সব ফাইনাল। তদন্ত শেষ।
নিশ্চিত স্বস্তিতে স্টেশন মাস্টার জানতে চাইলেন নেতার কাছে, শেষ দানটি কীভাবে মারলেন? নেতার জবাব : বিক্রি করা ইটের ভগ্নাংশে চিটাগুড় ছিটিয়ে আশপাশের সব গরু ঠেলে দিই সেখানে। গরুগুলো চাটছিল চিটাগুড়, আর সদর থেকে আসা বড় কর্তারা বুঝে নিলেন ওরা খাচ্ছে ইট। দুজনের উচ্চ হাসিতে মিলিয়ে যায় বাকি সব।
জসিম উদ্দিন ম-লের বক্তব্যের পুরো রস লিখে প্রকাশ করা মুশকিল। তবে গল্পটা এ রকমই। রেলের কথা বলা হলেও সব সেক্টরেই লুটপাটের চক্র ও চিত্রটি একই রকম।
বলছি না বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর আন্দোলন থামানোর নামে কোনো চক্র এমনটিই করেছে। তবে একটা চক্র ছাড়া যে এ রকম দুর্নীতি করা যায় না, তা সবাই বুঝতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে বিজেএমসি এতগুলো পাটকল চালাতে পারে না তারই বা থাকার যুক্তি কী। আর পাটকলই যদি না থাকে এখন এত বড় বিজেএমসির কাজ কী। ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো আবার চালানোর উদ্যোগ দেওয়া হবে। সেজন্যই এত কথা।
ধান খেতে ইঁদুর ঢোকার ছিদ্রটা বন্ধ না করে দেয়াল যত উঁচু আর পোক্ত করা হোক না কেন ইঁদুরের ধান খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
পাটকলগুলো লোকসানের যত খাত দেখছি এর মধ্যে অভিনব এসব খাতের সঙ্গে জড়িত কারা, আন্দোলন দমনের নামে টাকা কার পকেটে গেল তা চিহ্নিত করে দুর্বৃত্ত চক্রের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে, ভবিষ্যতে যে পদ্ধতিতেই মিলগুলো চালু করা হোক না কেন তা কোনো দিনই লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না। এ চক্রকে চিহ্নিত করতে আন্দোলন থামানো, সিবিএ খরচ আর সামাজিক দায়বদ্ধতার খাতে এক বছরের খরচের হিসাবটির অনুসন্ধান দিয়েই কাজ শুরু হোক না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি