জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে

প্রকাশিত: ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২২

জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে

অনলাইন ডেস্ক

প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেছেন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদ। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দলমতনির্বিশেষে সবাইকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে দলমত, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে আপামর জনগণকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। আসুন লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল মহান স্বাধীনতা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। একইসঙ্গে ধর্মের নামে কোনো গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নীতির কারণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে- যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। দেশের সকল সমপ্রদায়ের মানুষ যাতে সমপ্রীতি সহকারে স্ব-স্ব ধর্ম চর্চা করতে পারে সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল সমপ্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবসমূহ নির্বিঘ্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্‌?যাপন করা হচ্ছে। তথাপি ধর্মের নামে কোনো ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী যাতে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’ প্রতিবারের মতো এবারো মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেয়া ১৬৯ পৃষ্ঠা ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়েন প্রেসিডেন্ট। বিকাল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবার বছরের শুরু অধিবেশনের প্রথমদিন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা করা হচ্ছে না। অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন হয়। কোনো সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণ দেয়ার বিধান রয়েছে। পরে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর একটি ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। পুরো অধিবেশনজুড়ে ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। রোববার স্পিকার প্রেসিডেন্টের আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে প্রেসিডেন্টকে সম্ভাষণ জানান। সংসদ কক্ষে প্রেসিডেন্ট ঢোকার পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে প্রেসিডেন্টের জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সংবলিত চেয়ার রাখা হয়। এর আগে বিকাল ৪টার আগে সংসদের ‘উত্তর প্লাজা’ দিয়ে সংসদ ভবনে ঢোকেন প্রেসিডেন্ট। স্পিকারের অনুরোধের পর প্রেসিডেন্ট তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিনকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ। স্পিকারের আসনের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তিনি। সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে আবদুল হামিদ বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালি অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তার অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে তারই যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে।” জনপ্রতিনিধিদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে জনস্বার্থকে স্থান দেয়ার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট। মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসারে প্রেসিডেন্ট অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এ ছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট বলেন, “করোনা সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ ও প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ১৫৬টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য ১৫১টি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৩ শতাংশ। দেশের সাত কোটি মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট আশা করেন, দেশের অধিকাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনা হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, “সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পৃথিবীর অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় আমরা এখন পর্যন্ত করোনা এবং এর অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছি।” করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, “করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন যাতে ?আমাদের দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকারকে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।” মহামারি মোকাবিলায় এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ